শুক্রবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ে মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও অলিয়ঁস ফ্রসেজ বাংলাদেশের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা জানান।
বার্নাড হেনরি লেভি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সুবাদে যুদ্ধকালীন পাকিস্তান সরকারের নৃশংসতার জীবন্ত সাক্ষী ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে বার্নাড হেনরি লেভি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অনেকে সিভিল ওয়ার (গৃহযুদ্ধ) বলেছিল। কিন্তু এটা কোনো সিভিল ওয়ার ছিল না। এটা ছিল সিভিলিয়ানদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সেনবাহিনীর বর্বর যুদ্ধ।
‘আমি যখন ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ঢাকায় প্রবেশ করি, তখন আমি দেখেছি পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর নৃশংসতা। যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরায় আমি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ দেখেছি। ভারতের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে এটা সত্য। তবে আট মাস পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড, নারী নির্যাতন ও নৃশংসতা চালিয়েছে। এই যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশের মানুষের জয় হয়, একটি সুসজ্জিত শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। ’
বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিয়ানমারের অং সান সু চি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। তারপরেও রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচারের সময় বাংলাদেশ তাদের দিকে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয় দিয়েছেন, যদিও তার কাছে শান্তির জন্য নোবেলের মতো কোনো পুরস্কার নেই। মানবতার জন্য তিনি এটা করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি আমার জীবনে অনেক বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, লেখকসহ অনেক নামকরা লোকের সাক্ষাৎ পেয়েছি। নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে বিখ্যাত একজন শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ শিল্প সংস্কৃতির দেশ, কবি, সাহিত্যিক, লেখকের দেশ, বাংলাদেশ গানের দেশ, বাংলাদেশের মানুষ কখনও যোদ্ধা ছিল না। প্রয়োজনে তারাই আবার দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে বলে উল্লেখ করে ফরাসি এই লেখক।
বার্নাড হেনরি লেভি বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর রয়েছে। যেগুলো চিহ্নিত করা হয়নি। অনেক মুক্তিযোদ্ধাদেরও চিহ্নিত করা হয়নি। যারা মুক্তিযুদ্ধে করেছে তাদের পরিবারের কাছ থেকে তাদের তথ্য নিয়ে লিপিবদ্ধ করা উচিত। মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি কমপক্ষে সিম্বোলিকভাবে হলেও সংরক্ষণ করা উচিত।
আলোচনা পর প্রশ্নত্তোর পর্বে একজন মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নের উত্তরে বার্নাড হেনরি লেভি বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যদি কোনোদিন গণহত্যার মামলা করে আমি সেই মামলায় একজন আন্তর্জাতিক সাক্ষী হিসেবে বাংলাদেশের জন্য সাক্ষ্য দেবো।
আলোচনা সভা পরিচালনা করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সদস্য সচিব ও ট্রাস্টি সারা যাকের। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত এইচ ই জিন-মার্টিন স্যু। আলোচনা অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। আলোচনা শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অলিয়ঁস ফ্রসেজ, ঢাকার সভাপতি আব্দুল মজিদ চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২০
আরকেআর/ইএস/এএ