ঐক্যবদ্ধ মুসলিম উম্মাহ গঠনে ইসলামের বিশ্বায়নের পথে ইতিহাসভিত্তিক গবেষণা এবং একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রয়োজন। মুসলিম উম্মাহর ভেতরে বিদ্যমান বিভাজন দূর করতে পারলেই বিশ্বে মুসলমানদের প্রকৃত শক্তি ও প্রভাব প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বসুন্ধরার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে (আইসিসিবি) গার্ডিয়ান রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক ইসলামিক কনফারেন্সে এই মত প্রকাশ করেছেন আলোচকরা।
‘গ্লোবালাইজেশন অব ইসলাম উইথ দ্য ভিশন অব এ ইউনাইটেড উম্মাহ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, এতে প্রধান বক্তা ছিলেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী।
ইসলামিক কনফারেন্সে ইতিহাস পুনর্লিখনের আহ্বান জানিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, ইসলামের সঠিক ইতিহাস জানতে হলে আমাদের ব্রিটিশ বা হিন্দু লেখকদের দ্বারা লিখিত ইতিহাসের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। বিশেষ করে আরসি মজুমদারের মতো লেখকদের ইতিহাস মুসলিম বিরোধী। এই ইতিহাসগুলো পুনর্লিখন করা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইসলামের গৌরবময় অতীত সম্পর্কে জানতে পারবে না। তিনি কোরআন ও হাদিসের পাশাপাশি ইসলামের ইতিহাস অধ্যয়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা ছাড়া ভূ-রাজনীতি বোঝা সম্ভব নয়।
মাহমুদুর রহমান মুসলিম উম্মাহর অনৈক্যকে তাদের বর্তমান দুর্দশার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তারা নির্যাতিত ও শাসিত হচ্ছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চললেও মুসলিম বিশ্ব কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না, কারণ তাদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। এই বিভক্তি দীর্ঘদিনের পুরনো সমস্যা। যার কারণে মুসলমানরা একসময় পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি শাসন করলেও আজ সেই ক্ষমতা তাদের হাতছাড়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইসলামকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হলে ‘ইসলামোফোবিয়া’ বা ইসলাম-ভীতিকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে হবে।
ইসলামিক কনফারেন্সে প্রধান বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী মহানবী (সা.)-এর ১২টি গুরুত্বপূর্ণ মানসিকতার ওপর আলোচনা করেন, যার মধ্যে একটি ছিল সংস্কার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সংস্কার কার্যক্রমে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি।
তিনি মদিনা সনদের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এটি ছিল একটি ইনক্লুসিভ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক সনদ, যা বর্তমান সংস্কার কমিটি কাজে লাগাতে পারে। নতুন বাংলাদেশ গঠনে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ইসলামোফোবিয়াকে একটি সুপরিকল্পিত ভীতিরূপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি দূর করতে রাষ্ট্র ও সমাজের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের কোনো স্থান হবে না এবং সংখ্যালঘুরাও এখানে নিরাপদ থাকবে।
কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ড. খলিলুর রহমান মাদানী, একুশে টিভির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, ইসলামিক টিভির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্নেল (অব.) ফরিদুল আকবর, মুফাসসির শায়খ জামালুদ্দীন, এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার। কনফারেন্সটির সভাপতিত্ব করেন গার্ডিয়ান রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খালিদ সাইফুল্লাহ বকসী।
ইএসএস/এমজে