সিলেট: জেলার সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে পাথর লুটের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) এই পাঁচজনকে খনিজ সম্পদ অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান।
তিনি জানান, শুক্রবার দিনগত রাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন-মোহাম্মদ কামাল মিয়া (পিচ্চি কামাল, ৪৫), মো. আবু সাঈদ (২১) ও মো. আবুল কালাম (৩২)। তাদের সবাইকে কোম্পানীগঞ্জ এলাকার নিজ নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়।
এছাড়া, ডাম্প ট্রাকে করে ক্রাশ করা সাদা পাথর পরিবহনের সময় চেকপোস্ট বসিয়ে ইমান আলী (২৮) ও জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) নামের আরও দুজনকে পাথরসহ আটক করা হয়।
এর আগে, শুক্রবার রাতে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর লুটের ঘটনায় ২ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী হিসেবে রয়েছেন খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ারুল হাবীব।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে গেজেটভুক্ত ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি এলাকা থেকে অবৈধভাবে ও অননুমোদিতভাবে কোটি টাকার পাথর লুটপাট করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের সুনির্দিষ্ট পরিচয় এখনও নিশ্চিত নয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, সরকারি গেজেটভুক্ত কোয়ারি থেকে এ ধরনের লুটপাট খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২-এর ধারা ৪(২)(ঞ) এবং খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা, ২০১২-এর বিধি ৯৩(১)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একইসঙ্গে, দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩৭৯ ও ৪৩১ ধারায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
পাথর লুটে জড়িতদের শনাক্ত করে তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে এজাহারে।
এদিকে, গত তিনদিন ধরে প্রশাসনের অভিযানে প্রায় এক লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আসলে কত পরিমাণ পাথর লুট হয়েছে-সে বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই ভোলাগঞ্জ এলাকায় ব্যাপক পাথর লুট শুরু হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এই লুটপাটে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। দিনের আলোতেই ধলাই নদীর উৎসমুখ থেকে নৌকায় করে প্রকাশ্যে পাথর লুট হয়েছে। হাজার হাজার নৌকা ব্যবহার করে প্রতিদিনই পাথর তোলা হয়েছে-এমনকি নদীতীরের বালিও উত্তোলন করা হয়েছে।
স্থানীয় অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সাদা পাথর লুটে জড়িতদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অন্তত পঞ্চাশজন নেতা সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন-কেউ আড়ালে, কেউ প্রকাশ্যে।
এনইউ/এসআইএস