অভিযুক্তরা হলেন, পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের নাককাটিপাড়া এলাকার ফরিদ হোসেন ও তার ছেলে সোহাগ হোসেন।
তবে, মাস পেরিয়ে গেলেও মামলা হিসেবে এখনও নথিভুক্ত হয়নি অভিযোগটি।
ভুক্তভোগীরা জানান, সোহাগ নিজেকে সেনাবাহিনীর বেসামরিক পদে চাকুরিজীবী পরিচয় দিতেন। বিষয়টি প্রমাণে একটি নিয়োগপত্রও দেখান তিনি। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে বলে প্রচার চালান এলাকায়। মাস ছয়েক আগে (গত ডিসেম্বর) ফরিদ হোসেন ও তার ছেলে সোহাগ সেনাবাহিনীতে বেসামরিক পদে কয়েকজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে স্থানীয়দের জানান। এসময় তারা নিয়োগপত্র দেওয়ার শর্তে টাকার কথা বলেন।
একপর্যায়ে তারা সেনাবাহিনীর লোগো সম্বলিত ভুয়া নিয়োগপত্র দেখিয়ে চাকরীপ্রত্যাশী সাত যুবকের কাছে ৩৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এরা হলেন ওই ইউনিয়নের দালালপাড়া এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান, শাল্টিয়াপাড়া এলাকার নুর আলমের ছেলে সুজন ইসলাম, একই এলাকার আব্দুল গফ্ফারের ছেলে শাহারিয়ার সৌরভ, টুনিরহাট এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে মামুন ইসলাম, কামাতকাজলদিঘি ইউনিয়নের কুচিয়ারমোড় এলাকার নজির উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম, একই এলাকার তমিজ উদ্দিনের ছেলে রবিউল ইসলাম রুবেল ও তরিকুল ইসলামের ছেলে মাসুদ রানা।
এদের কাছে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। এর বিপরীতে কোন পরীক্ষা ছাড়াই তাদের হাতে ভুয়া নিয়োগপত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগপত্র অনুযায়ী চাকরিতে যোগ দিতে গিয়ে তারা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। অফিস সহকারীর ভুয়া নিয়োগপত্র হাতে দিয়ে সিদ্দিকুর রহমান নামে এক যুবককে ঢাকার কচুক্ষেত সেনানিবাসের একটি ক্যান্টিনে ওয়েটারের কাজ দেয় দালালচক্রটি। পরে তিনিও এলাকায় ফিরে বাবা-ছেলের অপকর্ম ফাঁস করে দেন।
নিয়োগের নামে প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হলে ফরিদ ও তার ছেলে সোহাগকে আটক করে স্থানীয়রা। তাদের পুলিশে দিতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম থানা পুলিশ না করে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমঝোতার আশ্বাস দেন। অবশেষে ২৩ মার্চ প্রতারণার শিকার সিদ্দিকুরের বড় ভাই খাদিমুল ইসলাম ফরিদ হোসেন ও সোহাগের বিরুদ্ধে পঞ্চগড় থানায় একটি প্রতারণার অভিযোগ দাখিল করেন। বর্তমানে সোহাগ ও তার বাবা পলাতক রয়েছেন।
প্রতারণার শিকার সুজন আলী বলেন, সোহাগ এলাকায় সেনাবাহিনীর টি-শার্ট পড়ে ঘুরতেন। তিনি নিজেকে সেনাবাহিনীর অফিস সহকারী পদে চাকরিজীবী পরিচয় দিতেন। একটি নিয়োগপত্রও দেখিয়েছেন তিনি। প্রতিবেশি হওয়ায় আমরা তাদের সরল মনে বিশ্বাস করেছি।
ভুয়া নিয়োগপত্র পাওয়া সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমি চাকরি খুঁজছিলাম। সোহাগ আমাকে বেসামরিক পদে নিয়োগের কথা বলেছিল। এজন্য কষ্ট করে তাকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেই। তারা আমাকে সেনাবাহিনীর লোগোসহ একটি নিয়োগপত্র দেয়। কিন্তু পরে আমাকে কচুক্ষেত সেনানিবাসের একটি ক্যান্টিনে ওয়েটারের কাজ দেওয়া হয়।
সিদ্দিকুরের বড় ভাই খাদিমুল ইসলাম বলেন, ঘটনা বুঝতে পেরে আমরা সোহাগ ও তার বাবাকে আটক করে পুলিশের কাছে দিতে চেয়েছিলাম। তখন ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম সমঝোতা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি এখন নানা কথা বলে দিন পার করছেন। থানায় এসআই জব্বারের কাছে অভিযোগটি দেওয়া হয়েছে। কোনও কাজ হয়নি। এ চক্রের সঙ্গে ইউপি সদস্য আজিজুল জড়িত থাকতে পারেন।
হাড়িভাসা ইউনিয়নের ৭নং ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ফরিদ ও সোহাগ সেনাবাহিনীর বেসামরিক পদে নিয়োগের জন্য বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, এটা জানি। এর বাইরে আর কিছু জানি না। কেউ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে থাকলে তা সত্য নয়।
পঞ্চগড় সদর থানার এসআই আব্দুল জোব্বার বাংলানিউজকে বলেন, আমার কাছে তাদের অভিযোগটি আছে। এটি এজাহার হয়নি, অভিযোগ হয়েছে। অভিযোগটি তাদের সংশোধন করে আনতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরে তারা আর আসেননি।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আক্কাস আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে যা ভালো হয়, তা করার চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৯
একে