ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

খুলনার পাটকল শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৪৯, মে ১৪, ২০১৯
খুলনার পাটকল শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবন সড়কে আগুন জ্বালিয়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

খুলনা: মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে খুলনার খালিশপুর শিল্প এলাকার শ্রমিক কলোনিতে। কোনোভাবেই পরিবারের ভরণপোষণ মেটাতে পারছেন না সরকারি পাটকলের শ্রমিকরা। ঠিকমতো সন্তানদের মুখে আহার তুলে দিতে না পারার কষ্ট ছাপিয়ে তাদের পড়ালেখা নিয়ে চিন্তিত শ্রমিক পরিবারগুলো।

শ্রমিকরা বলছেন, ১৩ সপ্তাহের মজুরি না পাওয়ায় শ্রমিক পরিবারগুলো দুর্বিষহ জীবন পার করছে। স্থানীয় মুদি দোকানিরা বাকি দিয়ে শ্রমিকদের কাছে টাকা চাইতে পারছে না।

পাটকল শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘট চললেও সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যা উত্তরণে কোনো ঘোষণা নেই। বকেয়া মজুরিসহ ৯ দফা দাবি না মানলে শ্রমিকরা রাজপথে আত্মাহুতির হুমকি দিয়েছেন। রমজানে টানা আন্দোলন চালিয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়লেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

মঙ্গলবার (১৪ মে) টানা ৯ম দিনের শ্রমিক আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে খুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চল। লাগাতার ধর্মঘটে শ্রমিকরা মিলগেটে বিক্ষোভ করার পাশাপাশি ৩ ঘণ্টা রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, আলীম, ইস্টার্ন, যশোরের কার্পেটিং ও জেজেধাই জুট মিলের অর্ধলাখ শ্রমিক-কর্মচারী।

প্রতিদিন বিকেলে কর্মসূচি চলাকালে শ্রমিকেরা নতুন রাস্তা মোড়ে টায়ারে ও কাঠের গুড়িতে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সেখানেই নামাজ আদায় এবং ইফতার করেন তারা। একই কর্মসূচি পালন করেন আটরা-গিলাতলা ও রাজঘাট শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকেরা। এর আগে গত ৫ মে হঠাৎ করে শ্রমিকেরা খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোর উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন।  

ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন হারুন বলেন, সপ্তাহ শেষে মজুরি দিয়ে সংসার পরিচালনা করি। অথচ গত ১৩ সপ্তাহ শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। এখন আর ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের বাকিতে সদাইও দিতে চায় না। এভাবে চললে না খেয়ে মরতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বকেয়া মজুরি পরিশোধের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবায়নের বিষয়ে কোনো স্বদিচ্ছা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

সম্ভাবনাময় পাট শিল্পকে বাঁচাতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এদিকে শ্রমিকদের কর্মবিরতির পর খুলনা রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে গোটা শিল্পাঞ্চলে। বকেয়া মজুরি, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে ধর্মঘট চলছে।

বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেন জানান, আমাদের এখনও পর্যন্ত কোনো মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এসব নিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছি। বিজেএমসি, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বরাবর চিঠিও পাঠিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

৯ দফা দাবি যতোদিন আদায় না হচ্ছে ততোদিন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশসময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৯
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।