ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে কিশোরের চোখ তুলে নিলো চাচাতো ভাই

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:০১, মে ১৪, ২০১৯
স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে কিশোরের চোখ তুলে নিলো চাচাতো ভাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দৃষ্টি হারা মিলন, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: কিছু টাকা পাওয়ার আশায় চাচাতো ভাই মামুনের সঙ্গে ডিস লাইনের কাজ করতো মিলন হোসেন (১৪) নামে এক কিশোর।

মিলনকে দিয়ে কাজ করা তো ঠিকই, কিন্তু তার চাচাতো ভাই মামুন কোনো টাকা দিতেন না। কিশোর মিলন পাওনা টাকা দাবি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে যান মামুন।

একপর্যায়ে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে মিলনের দু’চোখ উপড়ে ফেলে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে। চিরতরের দৃষ্টি হারা মিলন। নিজেই এ অভিযোগ করে।

মঙ্গলবার (১৪ মে) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে থাকা মিলনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারাও একই অভিযোগ করেন।

ঢামেক হাসপাতাল তৃতীয় তলায় চক্ষুবিভাগের ৩০২ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছে মিলন।

চিরতরে দৃষ্টি হারা মিলনরা দু’বোন এক ভাই সে সবার ছোট। টাঙ্গাইল মির্জাপুর গড়াই রাজাবাড়ী বানিয়ারচালা গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। মিলন পরিবারের সঙ্গেই থাকে। মিলনের বাবা একটি কারখানায় কাজ করেন।

গিয়াস উদ্দিন ও তার বড় মেয়ে নাসরিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছরের ১২ এপ্রিল (শুক্রবার) বিকেল পাঁচটার দিকে তার চাচাতো ভাই মামুন ও তাদের এক প্রতিবেশী আল আমিন মিলনকে ডেকে নিয়ে যায় ওই গ্রামেরই পাশে বানিজ মার্কেট ও ক্যাডেট কলেজ এলাকার নিউটেক্স কারখানার পাশে একটি ছাদে। সেখানে মামুন, আল আমিন দু’জন মিলে তার ভাইয়ের (মিলন) স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে প্রথম ডান চোখ তুলে ফেলে। এ সময় মিলন জ্ঞান হারিয়ে ফেললে পরে তার বাম চোখ তুলে ফেলে।

গিয়াস উদ্দিন বলেন, তার ভাই ও ভাইপোদের সঙ্গে তাদের তেমন কোনো বিরোধ নেই। পৈত্রিক সম্পত্তি তার আগেই ভাগ করে নিয়েছে। যার যার মতো সম্পত্তিতে তারা ঘর উঠিয়ে থাকেন। তবুও মাঝে মধ্যে টুকটাক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে ঝগড়া হতো। ঝগড়ার একপর্যায়ে ভাইয়েরা বলেছিলো যে তোর একদিন চোখ তুলে ফেলবো। সেই চোখ তুললো তবে আমার না আমার সন্তানের।

মিলন নিজেই বলে, মামুনের সঙ্গে ডিসের সংযোগ দেওয়ার কাজ করতাম। কাজ করার টাকা চাইতাম কিন্তু তিনি দিতেন না। এই টাকার কথা আমি একজনকে বললে সেই লোক মামুনকে বলে দেন। এতেই মামুন ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ডান চোখটা স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে উঠিয়ে ফেলে। এরপরে কি হয়েছে আমি আর কিছুই বলতে পারি না, আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে হাসপাতালের বিছানায় আমার জ্ঞান ফিরলে দু’চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পারি না। তখন আমার বোন ও বাবা জানায় তুমি হাসপাতালে এসেছো তোমার চোখের চিকিৎসা চলছে।

সে আরও বলে, কি কারণে এতো ক্ষিপ্ত হয়ে মামুন ভাই আমার চোখ উঠিয়ে ফেললেন তা এখনও বুঝতে পারছি না। শুধু টাকার জন্য মামুন ভাই এ কাজ করেছেন তাও বুঝতে পারছি না।

মিমিলনের বড় বোন নাসরিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, তার ভাই ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। আমাদের সংসার খুব টানাটানির সংসার। তাই ভাই কাজে লেগে যায় মামুনের সঙ্গে। চাচাদের সঙ্গে সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকতো। কারণ আমরা সবাই পাশাপাশি থাকি। জায়গা ভাগ হলো সবার জায়গা পাশাপাশি। কয়েক বছর আগে আমার ছোট বোনের বিয়ে হয়। সেই বিয়েতেও আমার চাচা ও চাচাতো ভাইয়েরা কেউ আসেনি। বিভিন্ন কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে হয়তোবা তারা আমার ভাইয়ের উপর প্রতিশোধ নিয়েছে। তার চোখ চিরতরে কেড়ে নিয়েছে। সে কোনোদিন আর দেখতে পারবে না বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ঘটনার দিনই চাচাতো ভাই মামুন নিজেই মিলনকে নিয়ে যায় স্থানীয় হাসপাতালে। পরে আমরা সংবাদ পেয়ে সবাই মিলে তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করি।

ঢামেকের চক্ষুবিভাগের অধ্যাপক ডা. ফরিদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে মিলনের পরিবার জানিয়েছিলো পড়ে গিয়ে মিলন আঘাত পেয়েছে। কিন্তু পরে তারা বলে তাদের শত্রুপক্ষ তার চোখ উঠিয়ে দিয়েছে। তবে আঘাতের কারণেই মিলনের একটি চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আরেকটি চোখ ভালো থাকলেও সেই চোখ দিয়ে সে দেখতে পারবে কিনা সেটাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি কোনো কিছু দিয়ে মিলনের চোখে আঘাত করে থাকে তাহলে চোখের পাপড়িতে জখমের চিহ্ন থাকবে। তার চোখের পাপড়িতে কোনো জখম নেই। সরাসরি চোখের ভেতরে জখম আছে।

টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে এম মিজানুল হক বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমরা পায়নি। পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৯
এজেডএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।