ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

শিকলবন্দি বৃদ্ধাকে মুক্ত করে হাসপাতালে পাঠালেন ইউএনও

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:০৩, মে ১৪, ২০১৯
শিকলবন্দি বৃদ্ধাকে মুক্ত করে হাসপাতালে পাঠালেন ইউএনও শিকলবন্দি বৃদ্ধাকে মুক্ত করে হাসপাতালে পাঠালেন ইউএনও। ছবি: বাংলানিউজ

ঝালকাঠি: ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার উত্তর বারবাকপুর গ্রামে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা বৃদ্ধা রিজিয়া বেগমকে (৭৫) মুক্ত করে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহাগ হাওলাদার।

সোমবার (১৩ মে) সকালে উপজেলার উত্তর বারবাকপুর ইউনুচ মৃধার পরিত্যক্ত ভিটায় অরক্ষিত অবস্থায় শিকলবন্দি বৃদ্ধ রিজিয়ার কাছে যান ইউএনও সোহাগ। এ সময় তিনি খুলে দেন বৃদ্ধার কোমড়ের শিকল ও তালা।

পরে সেখান থেকে স্বজনদের সহায়তায় রিজিয়াকে রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়।  

রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, দীর্ঘদিন বন্দি থাকায় বৃদ্ধ রিজিয়া দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাকে ভিটামিন ও ঘুমের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তার এখন প্রচুর বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তার মানসিক পরিস্থিতি বুঝে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হবে।  

ইউএনও সোহাগ হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বৃদ্ধ রিজিয়াকে মুক্ত করি। পরে সেখান থেকে ব্যক্তিগত খরচে ওই বৃদ্ধাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এনে ভর্তি করেছি।

তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রিজিয়াকে চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।  এরইমধ্যে তাকে সমাজসেবার পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য পাঁচ হাজার টাকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পাশাপাশি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা ও যাবতীয় সুবিধা দেওয়া হবে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার আবাসন ও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।  

বৃদ্ধ রিজিয়ার ছেলে রাজ্জাক শেখ সাংবাদিকদের জানান, চার বছর আগে তার মা হঠাৎ ব্রেইন স্ট্রোক করেন। পরে তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন চিকিৎসকদের দেখিয়ে রাজ্জাক সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। এরপর তিনি অর্থাভাবে তার মাকে আর চিকিৎসা করাতে পারেননি। এ অবস্থায় তার মা দিন দিন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে নিরুপায় হয়ে প্রায় চার বছর ধরে লোহার শিকলে তালা লাগিয়ে বেঁধে রাখেন।

রাজ্জাক তার মাকে নিজ ঘরেও রেখেছিলেন কিন্তু সেখানে তিনি আসবাবপত্র ভাঙচুর করতেন ও পায়খানা-প্রস্রাব করে নোংরা করতেন। এ জন্য নিরুপায় হয়ে পরিত্যক্ত ওই ঘরেই মাকে রাখতে বাধ্য হয়েছেন।

তবে তার অভাবের সংসার চালিয়েও সাধ্য মতো মায়ের সেবা করেছেন বলেও জানান রাজ্জাক।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৯
এমএস/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।