ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের পক্ষে ৫০৭ বিশিষ্টজনের বিবৃতি

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৫০, মে ১৩, ২০১৯
অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের পক্ষে ৫০৭ বিশিষ্টজনের বিবৃতি

ঢাকা: চট্টগ্রামের অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের ‘চরিত্রহননের অপচেষ্টা’ চলছে উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের ৫০৭ বিশিষ্টজন। পাশাপাশি এই অপচেষ্টার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেছেন তারা।

সোমবার (১৩ মে) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, গবেষক, সাহিত্যকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, সমাজকর্মী ও পেশাজীবীসহ ওই ৫০৭ জন এ  বিষয়ে একটি বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষে অপ্রাসঙ্গিকভাবে যৌনতা বিষয়ক আলোচনার যে-অভিযোগ অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা আমাদের ক্ষুব্ধ ও বিচলিত করেছে।

এই বর্ষীয়ান শিক্ষক চার দশক ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে অধ্যাপনা করেছেন। এর আগে কখনোই তার বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে বা তার বাইরে নীতিবিরুদ্ধ কোনো কাজে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ আসেনি। সুতরাং, অবসর গ্রহণের পর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বপালনকালে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত এই অভিযোগ কেবল অবিশ্বাস্যই নয়, তীব্রভাবে আপত্তিকরও বটে। ’ 

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সংবাদমাধ্যমে কিছুক্ষেত্রে তার মন্তব্য না নিয়েই যেসব একপেশে ও তথ্যবিভ্রাটপূর্ণ রিপোর্ট করা হয়েছে তাকে আমরা চরিত্রহননমূলক মনে করি। অভিযোগ আছে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সে অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগংয়ের (ইউএসটিসি) ইংরেজি বিভাগের উন্নয়নের স্বার্থে নেওয়া অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের কিছু পদক্ষেপে কতিপয় মানুষের স্বার্থে আঘাত লাগার ফলে শিক্ষার্থীদের কাজে লাগিয়ে একটি ষড়যন্ত্র রচনা করা হয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়ার প্রয়োজন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। ’

বিশিষ্টজনেরা বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে, বিশেষত সাহিত্যের শ্রেণিকক্ষে, প্রাসঙ্গিকভাবেই যৌনতা বিষয়ক আলোচনা আসতে পারে। যৌনতা মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং সাহিত্যেও এর প্রতিফলন ঘটে থাকে। এ-বিষয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করা একজন শিক্ষকের দায়িত্ব এবং অধিকার। নিজেদের চিন্তা-চেতনার অপরিপক্বতার কারণে কোনো শিক্ষার্থী যদি এ-ধরনের আলোচনায় আহত হন, তার দায় শিক্ষকের নয়। শিক্ষার্থীর সীমাবদ্ধতার দোহাই দিয়ে শিক্ষককে তার আলোচনাকে সীমিত করতে বলা জ্ঞানচর্চার স্বাধীনতায় আঘাত করার সামিল। শিক্ষার্থীকে জ্ঞানের নতুন-নতুনতর ভূখণ্ডে পরিভ্রমণ করানোর মাধ্যমে তার মেধা, রুচি, চিন্তাশীলতা ও মননের বিকাশ ঘটানোই একজন প্রকৃত শিক্ষকের কর্তব্য; অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ ঠিক সেটিই করছিলেন বলে আমাদের বিশ্বাস। ’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা জানতে পেরে হতবাক হয়েছি যে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ শ্রেণিকক্ষে যৌনতা বিষয়ক আলোচনা করেছেন কি-না এবং করে থাকলে তার প্রকৃতি কী ছিলো তা তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে। বিদ্যায়তনে কী আলোচনা হবে, কী হবে জ্ঞানচর্চার প্রকৃতি তা শিক্ষাবিদদের বদলে যদি রাষ্ট্রযন্ত্র এবং পুলিশ প্রশাসনের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় তবে শিক্ষাদান ও গ্রহণ এবং গবেষণাকর্ম পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহই নেই। সুতরাং, আমরা এই ভয়ঙ্কর প্রবণতার ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানাই। মুক্তবুদ্ধি ও জ্ঞানচর্চা এবং তার প্রকাশের অধিকার আমাদের যেকোনো মূল্যে সমুন্নত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো অযাচিত হস্তক্ষেপ দেশ ও মানবতার অগ্রগতির পরিপন্থী। ’

বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা দাবি জানান, ‘অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক আনীত অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে তার তিলে-তিলে গড়ে তোলা সামাজিক সম্মান খানিকটা হলেও ফিরে পাবার সুযোগ করে দেওয়া হোক। আমরা উদ্ভূত অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশু সমাধান কামনা করি। ’

বিবৃতিদাতাদের তালিকা

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।