সোমবার (১৩ মে) দুপুরে র্যাব-৪ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে রোববার (১২ মে) সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত র্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর মিরপুর ও খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
আটক হলেন- মো. মানিক চাঁদ রাজ (২৮), মো. রতন হোসেন (১৮), মো. ইসমাইল হোসেন (৩১), এস এম আলাউদ্দিন আল মামুদ (৩৬), মো. শরিফুল ইসলাম (৩২) ও সম্রাট মল্লিক (২৪)।
এসময় তাদের কাছ থেকে এক সেট কম্পিউটার (সিপিইউ, মনিটর, প্রিন্টার), সেনা বাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, কারারক্ষীসহ বিভিন্ন বাহিনীর নিয়োগপত্র ও ভর্তি ফরম, সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ ও পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন অফিসিয়াল সিল, সাতটি মোবাইল ফোন, ১০টি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরির আবেদন ফরম, ২৭টি বিভিন্ন মূল্যের স্ট্যাম্প, প্রার্থীর কাছ সার্টিফিকেটের মূল সনদ ও ফটোকপি, বিভিন্ন প্রার্থীর ন্যাশনাল আইডি কার্ডের মূল কপিসহ ফটোকপি, বিভিন্ন ব্যাংকের স্বাক্ষরিত নয়টি চেক, ১১টি বিভিন্ন ব্যাংকের ভিসা/মাস্টার/ডেবিট কার্ড, পাঁচটি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, মনোগ্রামসহ ভিজিটিং কার্ড জব্দ করা হয়।
র্যাব-৪ জানিয়েছে, এ চক্রের প্রতিটি সদস্য নিখুঁত ও দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন। এক্ষেত্রে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ছয়টি পর্যায়ে বিভক্ত হয়ে প্রতারণা সফল করার উদ্দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। প্রতারক চক্রের এ শ্রেণীর সদস্যরা মাঠপর্যায়ে কাজ করে থাকেন। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শিক্ষিত, বেকার, চাকরি প্রত্যাশী যুবকদের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে তুলনামূলক নিম্নপদস্থ চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন- সিভি, শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদপত্রের ফটোকপি, জন্মসনদ, নাগরিকত্বের সনদ ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি সংগ্রহ করে রাজধানীতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
এ চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় অথবা হোটেলে অবস্থান করে চাকরি প্রত্যাশীদের সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ ঢাকার বিভিন্ন অফিসে ঊর্ধ্বতন ভুয়া কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে এবং চাকরি প্রত্যাশীদের যাবতীয় কাগজপত্র লোক দেখানো যাচাই-বাছাই করে চাকরি সংক্রান্তে বিভিন্ন প্রকার শর্তাদি আরোপ করে। এসব শর্তের মধ্যে আছে, ব্যাংক চেক গ্রহণ, ব্যাংক স্ট্যাম্প গ্রহণ, স্ট্যাম্পে চুক্তি স্বাক্ষর, মূল সনদপত্র জমা রাখা।
চাকরি প্রত্যাশীরা প্রদত্ত শর্তাবলীতে সম্মত হলে চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।
ভুয়া মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে চাকরি প্রত্যাশীদের বিশ্বস্ততা অর্জনের মাধ্যমে প্রতারণার জাল পাতেন। চাকরির আগে মেডিকেল সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ এ পর্যায়ের প্রতারকরা সম্পন্ন করে থাকেন। প্রার্থীর শারীরিকভাবে উপযুক্ত কিনা তা যাচাইয়ের জন্য প্রার্থীর মেডিকেল পরীক্ষা করা প্রয়োজন। তখন ভুয়া মেডিকেল টিম তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার (চেকআপ) প্রয়োজনীয় ভুয়া প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
ভুয়া নিয়োগপত্র দেখিয়ে চুক্তি মোতাবেক টাকা গ্রহণ করে এবং মূল নিয়োগপত্রটি ডাকের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় অথবা ক্ষেত্র বিশেষ হাতে হাতে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে চাকরি প্রার্থীরা নিয়োগপত্রে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানে অথবা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগদান করতে হাজির হলে তারা নিয়োগপত্রটি ভুয়া বলে জানতে পারেন এবং প্রতারিত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হন।
চাকরি প্রত্যাশীরা আইনের স্মরণাপন্ন হলে প্রতারক চক্রটি অভিনব উপায় অবলম্বন করে। তারা চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে সংগ্রহকৃত ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্পের উপর ভিত্তি করে পাল্টা মামলা করে। চাকরি প্রত্যাশীরা মামলা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রতারক চক্রের সঙ্গে আপস করে। তারা পাওনাকৃত টাকা চান না তথাপি, নিজেরা যে মামলা করেছিলেন তা তুলে নেন।
এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫১ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৯
এমএমআই/আরবি/