ঢাকা, বুধবার, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ জুলাই ২০২৫, ২৭ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

সংকট উত্তরণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনই একমাত্র পথ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩৬, জুলাই ২২, ২০২৫
সংকট উত্তরণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনই একমাত্র পথ মঙ্গলবার বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ‘সংকট উত্তরণে সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশন। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: দেশের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংস্কার সময়ের প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্নভাবে করা প্রয়োজন।

তাই সংস্কারের অজুহাত দিয়ে নির্বাচন বিলম্বিত করা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে ‘সংকট উত্তরণে সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন। বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টিফোর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, ডেইলি সানের সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাস, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান, এবি পার্টির সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু, এনসিপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ। বৈঠক সঞ্চালনা করেন নিউজটোয়েন্টিফোরের হেড অব নিউজ শরিফুল ইসলাম খান।

‘সংকট এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণাও দেয়’
ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আমাদের রাষ্ট্র কী অবস্থায় আছে সেটা বোঝার জন্য গতকালের ঘটনা যথেষ্ট। এই রাষ্ট্র ভেতর থেকে যেমন দুর্বল-ভঙ্গুর, সঙ্গে সঙ্গে এই ভঙ্গুর রাষ্ট্র আরও অনেক কিছুকে ভঙ্গুর করে দিচ্ছে। ভঙ্গুর করে দিচ্ছে সেই মাইলস্টোনের মত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। ভঙ্গুর করে দিচ্ছে কয়েকডজন পরিবারকে, ভঙ্গুর করে দিচ্ছে আমাদের বিশ্বাসকে, আমাদের আস্থাকে। কাজেই আমরা একটা সংকটের মধ্যে আছি এবং এই সংকটটা সর্বগ্রাসী সংকট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহসংকট কালে কালে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুগে যুগে আমাদের সামনে নতুন করে চ্যালেঞ্জ আসবে। সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এভাবেই কিন্তু ইতিহাস এগিয়ে চলবে। আবার বিপ্লবের পরেও যে সংকট থাকবে না, কন্ট্রাডিকশন (বৈপরীত্য) থাকবে না তা নয়। কন্ট্রাডিকশন যদি না থাকে তাহলে সমাজের অগ্রগতি সম্ভব হবে না। কাজেই সংকট আমাদেরকে যেমন বিপদে ফেলে, কষ্ট দেয়; সংকট আবার আমাদের কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণাও দেয়।

ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, তিন তিনটি নির্বাচন হয়েছিল শেখ হাসিনার সময়। এই তিনটি নির্বাচনে যে ভয়াবহ ধরনের ঘটনা ঘটেছে... কাজেই যে নির্বাচনহীন একটা অবস্থা, এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সমাধান হচ্ছে নির্বাচন এবং একটা সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, নির্ভরযোগ্য এবং যেটাকে ক্রেডিবল (বিশ্বাসযোগ্য) বলা হয়—যে ধরনের একটা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না, কোনো সন্দেহ থাকবে না, এই ধরনের একটা নির্বাচন যদি আমরা করতে পারি, আমার মনে হয় আমরা যে সংকটের মধ্যে আছি, সেই সংকটের অন্তত অর্ধেক সমাধান আমরা করতে পারি।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের সার্বভৌমত্বের সংকট রয়েছে। আরেকটা হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্রের সংকট। সার্বভৌমত্বের সংকটটা কীভাবে এসেছে? আপনারা জানেন, শেখ হাসিনার ১৫-১৬ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের স্বার্থ ভারতীয় আধিপত্যবাদের কাছে যেভাবে বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল এবং যেভাবে বাংলাদেশকে একেবারে কুমড়ো টুকরোর মত ফালিফালি করে দিল্লির শাসকদের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্য দিয়ে আমাদের একটা সার্বভৌমত্বের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জুলাই-আগস্টের যে অভ্যুত্থান, সেই অভ্যুত্থান আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছে যে, আমরা কত বড় বিপদের মধ্যে ছিলাম। আমরা স্বাধীন হয়েও পরাধীন হয়ে পড়েছিলাম। আমি মনে করি গত বছরের অভ্যুত্থানের একটা বড় অর্জন হচ্ছে আমাদের মধ্যে সার্বভৌমত্বের চেতনাটা জাগ্রত হয়েছে, জোরদার হয়েছে, তীক্ষ্ণ হয়েছে। আগামী দিনে এই সার্বভৌমত্ব নিয়ে যদি কোনো খেলা হয়, তাহলে এই জাতি যে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

‘নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন সম্ভব নয়’
অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, আমরা সবাই নির্বাচনের পক্ষে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। জনগণের সরকার বা নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন সম্ভব নয়। আমরা সবাই জানি যে ড. ইউনূস সরকার যদি নির্বাচন না দিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশে কী রকম সমস্যা হবে। নির্বাচনটা কিন্তু আপনাদের ওনার কাছ থেকে আদায় করে নিতে হবে। সুতরাং আমরা যখন ওনার সরকার নিয়ে কথা বলবো, আমাদের সাবধানতার সঙ্গে ওনাকে আমাদের মেসেজটাও দিতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীতিনি বলেন, সবার একটাই ভাবনা নির্বাচন আমরা কীভাবে করবো, যে নির্বাচনটা শুধু একটা ইলেকশন হবে না, নির্বাচনটা বাংলাদেশে একটা স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাবে। সেই স্থিতিশীল ব্যবস্থার দিকে নিতে যে নির্বাচনের দরকার সেই নির্বাচনের জন্য আমি বলি সংস্কার হওয়া দরকার। সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। পরবর্তী যে নির্বাচিত সরকার আসবে তারা এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যেখানে সাতশ’ বছরের গণতান্ত্রিক ইতিহাস আছে সেখানেও কিন্তু এখন সংস্কার হচ্ছে। সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে নানা রকম সংস্কার জাতির সামনে আসে।

‘অর্থনৈতিক সংকটও আছে’
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সংকট উত্তরণের একটি পথ নির্বাচন। রাজনৈতিক সংকটটা দৃশ্যমান, সেটা বেশি আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটও হচ্ছে। এইটার ভেতরে যে অর্থনৈতিক সংকট আছে সেটা খুব বেশি আলোচিত না। বৈষম্যবিরোধী প্রয়াসকে দৃশ্যমান এবং কার্যকর করার জন্য আলোচনার দরকার। রাজনৈতিক দলের বড় বিতর্ক হলো সংস্কার। সংস্কার দুই রকম হতে পারে। সামনের দিকেও হতে পারে, পেছন দিকেও হতে পারে। খুব সতর্ক থাকতে হবে, আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংস্কার করতে গিয়ে যেন পেছন দিকে ফিরিয়ে না নেই।

‘অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে দেশ আবার পিছিয়ে যাবে’
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এই সরকার নিজেই সংকট তৈরি করেছে বলে আমার ধারণা। তারা যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফেরার জন্য উদ্যোগী হতো, তাহলে গত এক বছরে অনেক দৃষ্টান্ত রাখতে পারতো। নির্বাচনকে ঠেকানোর জন্য অথবা বিলম্বিত করার জন্য কাজ করছে তারা। এই জায়গা থেকে যদি আমরা বের হতে পারি তাহলে সংকট উত্তরণের পথ বের হবে।

তিনি বলেন, ইতিহাসখ্যাত জুলাই অভ্যুত্থান শুধু ৩৬ দিনের কোনো ঘটনা নয়। এর পেছনের পূর্ববর্তী ঘটনা, আন্দোলন, জেল- জুলুম, ত্যাগ-তীতিক্ষা রয়েছে। নির্বাচন করতে সুদীর্ঘকাল লাগবে বিষয়টি এমন নয়। এখনো নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য নানা ধরনের তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

সরকারের সংস্কার করার ইচ্ছা থাকলে বিএনপির দেওয়া ৩১ দফা যথেষ্ট ছিল মন্তব্য করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমরা যদি একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হই, তাহলে দেশ আবারও পিছিয়ে যাবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুহানাহানিতে সরকারের ব্যর্থতা বেশি
হাসান হাফিজ বলেন, আমাদের দেশে এর আগে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধ, ’৯০-এর আন্দোলন হয়েছে। সর্বশেষ ’২৪-এর অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্ররা। তারা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। দল গঠন করে নির্বাচন অংশ নিলে সেটি হবে তাদের জন্য একটি পরীক্ষা। ছাত্ররা ক্ষমতাধর হয়েছে, এটা আমাদের জন্য কতটুকু সঠিক হবে সেটি ভাববার বিষয়।  

তিনি বলেন, এখন একটি নতুন সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে ‘মব জাস্টিস’। প্রতিনিয়ত মারামারি হানাহানি হচ্ছে, এর জন্য রাজনৈতিক দল ও সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে। তবে আমি বলব সরকারের ব্যর্থতাই বেশি।

নিজেদের দোষ ঢাকতে বিদেশিদের দোষ দেই
রেজাউল করিম লোটাস বলেন, আমাদের মধ্যে এক ধরনের প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে নিজেদের দোষকে ঢাকার জন্য বিদেশিদের দোষ দেই। কখনো দিল্লিকে দেই কখনো, পিন্ডিকে দেই, আবার কখনো আমেরিকাকে দোষারোপ করি। আমাদের যে সংস্কার কমিশন করা হয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ সদস্যই বিদেশ থেকে এসেছেন। আর সংস্কারের যে প্রক্রিয়া দেখছি তাতে মনে হচ্ছে ১০-১৫ বছর আগে এক ধরনের পরীক্ষার পদ্ধতি ছিল ‘টিক’ দেওয়া। এখন সংস্কারও ঠিক একই পদ্ধতিতে হচ্ছে। এভাবে সংস্কার হতে পারে না।

সংস্কার ও নির্বাচন একইসঙ্গে চলতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংস্কার তার মতো করে এগিয়ে যাবে, একইসঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়াও এগিয়ে যাবে। আর এখন পর্যন্ত সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ইস্যু নিয়ে সংস্কার ও নির্বাচনকে বিলম্বিত করা হচ্ছে। এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না। তাই সংস্কার হওয়া উচিত ছিল একটি রোডম্যাপ অনুযায়ী। কত দিনে সংস্কার হবে এবং কী কী বিষয় হবে তা নির্দিষ্ট থাকা দরকার।

সংকট উত্তরণের জন্য নির্বাচন প্রয়োজন
মনজুরুল ইসলাম বলেন, এখন বর্তমান সরকারই সংকট তৈরি করেছে। কারণ যারা সরকারের সমালোচনা করবে তাদের সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশনে ঢুকিয়েছে। কিন্তু এসব কমিশনের ব্যয় কত হচ্ছে তা বলছে না সরকার।  

তিনি আরও বলেন, সংকট উত্তরণের জন্য নির্বাচন প্রয়োজন। সরকার কে গঠন করবে তা জনগণই ঠিক করবে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টুসংস্কারকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনটা গুরুত্বহীন করা হচ্ছে
তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, সংকট আসলে কী সে বিষয়ে সবার আগে জানা প্রয়োজন। ৫ আগস্টের আগে সংকট ছিল ফ্যাসিবাদের পতন এবং শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে হবে। সেই সংকটের সমাধান হয়ে গেছে। এখন গত এক বছরের মধ্যে যেসব সংকট তৈরি হয়েছে তার মধ্যে আমার মনে হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা সংকট, অর্থনৈতিক সংকট। অভ্যুত্থানের সময় রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে ঐক্য ছিল সেখানে এখন বিভাজন তৈরি হয়েছে। আর এই বিভাজনের মূল জায়গা হচ্ছে সংস্কার। সংস্কার আগে হবে নাকি নির্বাচন আগে হবে, আবার কেউ বলছে নির্বাচন আগে না সংস্কার আগে, এই বিষয়টাকে বারবার সামনে আনা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী সংস্কার কে এত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন যাতে নির্বাচনটা গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে বিএনপি শুধু নির্বাচন চাচ্ছে, সংস্কার চাচ্ছে না এমনটিও বলা হচ্ছে। আমরা দেখলাম, ১৩ জুন লন্ডনে বৈঠকের পর সরকার নির্বাচন চাচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখছি, সেই জায়গা থেকেও সরে এসে সামনে আনা হচ্ছে, আগে নির্বাচন না সংস্কার। আমাদের দরকার একটি সমঝোতা। আর এই সমঝোতার জন্য আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার জনগণের কাছে উপস্থাপন করব। জনগণ যেটি পছন্দ করবে সেটিই সংস্কার হবে। এজন্য জাতীয় নির্বাচনটা সবার আগে গুরুত্বপূর্ণ।

সংকট উত্তরণে সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
জোনায়েদ সাকি বলেন, সংকট উত্তরণে সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটা সংকট ছিল ৫ আগস্টের আগে, যে ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করতে হবে। এই সংকট সমাধান হয়ে গেছে। এখন এই এক বছরের মাথায় যেসব সংকট তৈরি হয়েছে তার মধ্যে আমার কাছে মনে হয় যে অর্থনৈতিক সংকট, আইনশৃঙ্খলা সংকট। মূল জায়গাটাই তৈরি হচ্ছে যে, সংস্কার আগে না পরে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি দাবি ছিল দেশকে স্বাধীন করতে হবে, পাকিস্তানকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। কিন্তু এর কিছুদিন পরে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে ভিন্ন ভিন্ন চেতনা সৃষ্টি হলো। ঠিক একইভাবে ’২৪-এর আন্দোলনের আগে শেখ হাসিনার পতনের বিষয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হলেও এখন সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। সংস্কারের বিষয়ে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার জনগণের সামনে উপস্থাপন করব। সেটি জনগণ কতটি গ্রহণ করবে সেটি দেখার বিষয়। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়, আমি মনে করি এই দাবিটিও সঠিক নয়।

দেশ বিভিন্ন বিষয়ে বৈশ্বিক চাপে পড়েছে
ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পর মনে হয়েছে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারবো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেই জায়গা থেকে দূরে সরে এসেছি। বর্তমানে দেশ বিভিন্ন বিষয়ে বৈশ্বিক চাপে পড়েছে যা এখন দৃশ্যমান।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা ধরনের খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। বিনিয়োগকারীরা স্থায়ী সরকার ব্যবস্থা না থাকলে এগোতে চায় না। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ‘মব’ সৃষ্টি করে।

মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার আগে নির্ধারণ করতে হবে কোন কোন বিষয় সংকট সৃষ্টি করছে। আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট ছিল আমাদের মাথার ওপর যে জগদ্দল পাথর ছিল, আমরা সেটা সরাতে পেরেছি। কিন্তু কিছু কিছু সংকট দৃশ্যমান হয়েছে। বিশেষ করে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য থাকায় বেশি দিন এই সরকারের ক্ষমতায় থাকা ঠিক হবে না।

ড. আতিক মুজাহিদ বলেন, দেশের সংকটের মূল কারণ শেখ হাসিনা। এই হাসিনা বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা তৈরি করে গেছে। বিদ্যমান প্রশাসন-পুলিশসহ সবই তার তৈরি। এখন এগুলো সংস্কারে রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে হবে।

টিএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।