এখন আর সেই পরিচিত স্কুলবাসে নয়, স্কুল ক্যাপ্টেন তানভীর আহমেদ ফিরছে কাফনের সাদা কাপড়ে মোড়া এক নিথর বাক্সে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তানভীর।
সেদিনও স্কুল শেষে বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ছিল বিশেষ ক্লাস। তানভীর সে ক্লাসে যাওয়ার জন্য প্রতিদিনের মতোই উদগ্রীব ছিল।
সে আর ফিরবে না, এটা বুঝে উঠতেই পারছিলেন না বাবা রুবেল হোসেন। পোড়া নিথর শরীরটা যখন শনাক্ত করলেন, শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে থাকলেন, ‘ও তো ক্যাপ্টেন ছিল... খুব ভালো ইংরেজি বলত…। ’
সোমবার (২১ জুলাই) রাতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে ছেলের পোড়া দেহ শনাক্ত করেন তিনি। এর আগে ছোট ছেলে তাসফিককে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন। বড় ছেলে তানভীরের ক্লাস শেষ হওয়ার কথা ছিল একটু পরই।
কিন্তু হঠাৎ খবর আসে বিমান দুর্ঘটনার। ছুটে যান এক হাসপাতাল থেকে আরেকটিতে, শেষ পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে গিয়ে ছেলের আইডি কার্ড দেখে চেনেন তাকে।
দুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে স্কুল ভবনের একাংশে। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন, দগ্ধ হয় তানভীরসহ অনেকে।
বার্ন ইউনিটে এখনও মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে অনেক শিশু। চিকিৎসকদের মতে, অনেকের অবস্থাই সংকটাপন্ন। আর বাইরে অপেক্ষমাণ বাবা-মা, স্বজনরা— চোখে পানি, ঠোঁটে শুধু প্রার্থনা— ‘হে আল্লাহ, অন্তত মৃত্যুর খবরটা না দিও। ’
যে তানভীর প্রতিদিন বইয়ের ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ক্লাসে এসে বলত, ‘আই অ্যাম রেডি, স্যার!’— আজ সে ফিরে এসেছে কাফনের কাপড়ে মোড়ানো ঠান্ডা শরীর হয়ে। যে ভবনে তার প্রতিদিনের যাওয়া-আসা, যেখানে সে বেঞ্চে বসে স্বপ্ন আঁকত— আজ সেখানে ছাই, ছিন্নভিন্ন বেঞ্চ।
এজেডএস