ঢাকা, সোমবার, ৯ ভাদ্র ১৪৩২, ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

শর্ত মেনেই উৎপাদনে যাচ্ছে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:২৩, আগস্ট ২৪, ২০২৫
শর্ত মেনেই উৎপাদনে যাচ্ছে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

পাবনা (ঈশ্বরদী): পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন উৎপাদনের অপেক্ষায়। বর্তমানে চলছে কমিশনিং কাজ।

তবে নিয়োগে অদক্ষতা ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রকল্পটির নিরাপত্তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রশ্ন উঠেছে।  তবে এনিয়ে জনমনে উদ্বেগ তৈরি হলেও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে, এখানে চেরনোবিলের মতো দুর্ঘটনার কোনো আশঙ্কা নেই।

রূপপুর প্রকল্পের তথ্য কর্মকর্তা ও ফোকাল পয়েন্ট সৈকত আহমেদ জানান, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নিবিড় তত্ত্বাবধানে ধাপে ধাপে সব লাইসেন্স পাওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক শর্ত পূরণ করেই সর্বাধুনিক ভিভিইআর থ্রি প্লাস প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে।  

এদিকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বার্তায় বলা হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনায় অদক্ষ ও অভিজ্ঞতাহীন জনবলকে চিফ সুপারিনটেনডেন্টসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আপত্তি তুলে চিঠি দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটমও। অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক)।

প্রকল্প কর্মকর্তাদের দাবি, রোসাটম চিঠিতে প্রকল্পের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আপত্তি তোলা হয়নি। চিফ সুপারিনটেনডেন্ট পদে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও সুনির্দিষ্ট শর্ত পূরণের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে আইএইএ থেকে পরবর্তী ধাপের লাইসেন্স নিতে হয়েছে। কর্মকর্তাদের দক্ষতার শর্ত পূরণ না হলে সেই লাইসেন্স পাওয়া অসম্ভব। তারা ভিত্তিহীন প্রচারণায় প্রকল্পকে ঝুঁকিতে না ফেলতে আহ্বান জানান।

সম্প্রতি রূপপুর প্রকল্পে ভারপ্রাপ্ত চিফ সুপারিনটেনডেন্ট পদে পদোন্নতি পান মুশফিকা আহমেদ।  

দুদকে পাঠানো অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ২০১৯ সালে ‘কেমিক্যাল অ্যান্ড রেডিওঅ্যাকটিভ ওয়েস্ট ম্যানেজার’ পদে অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ পান। অথচ বিজ্ঞপ্তিতে পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা রেডিয়েশন মনিটরিংয়ে অন্তত দুই বছরের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক ছিল।

মুশফিকা ছাড়াও মেকানিক্যাল বিভাগের ঊর্ধ্বতন সহকারী ব্যবস্থাপক রবিউল আলম প্রয়োজনীয় তিন বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে দুদকে পাঠানো এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, অসত্য ও প্রকল্পকে বিতর্কিত করার চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রথম নির্মিত হচ্ছে। এমন প্রকল্পে বিজ্ঞপ্তিতে চাওয়া শর্তের শতভাগ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মী পাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল।

ব্যবস্থাপক ইরতিয়াজ মাহমুদ, একেএম নাজমুল হাসান এবং আল মামুনের অভিজ্ঞতার ঘাটতির অভিযোগও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তারা। তাদের ভাষ্য, স্বীকৃত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি পাওয়ার প্ল্যান্ট ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়োগের সময় দাখিল করা হয়েছিল। রাশিয়ায় সফলভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তাদের ডেপুটি চিফ সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা তিন উপব্যবস্থাপক আবু কায়ছার, মেরাজ আল মামুন এবং রবিউল আলম জানান, তারা স্বীকৃত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী। আবু কায়ছার সিকিউরিটি অ্যান্ড পিপিএস ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি হেড পদে ছিলেন। তিনি নৌবাহিনী পরিচালিত ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে সাত বছর এবং নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দুই বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।

অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দাবি, বোর্ড তার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিয়োগ সম্পর্কিত নিয়মনীতি নির্ধারণ করে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মপরিবেশ নষ্ট করতে একটি চক্র ষড়যন্ত্র করছে, তারাই বিভ্রান্তিকর প্রচারণায় দেশের গর্বের এই প্রকল্পকে বিতর্কিত করছে।

রূপপুর প্রকল্পের তথ্য কর্মকর্তা সৈকত আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ৫০ বছর আগের সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনার সঙ্গে রূপপুর প্রকল্পকে তুলনা করার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার নিবিড় তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিরাপত্তার শর্ত শতভাগ পূরণ করে সর্বাধুনিক ভিভিইআর থ্রি প্লাস প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যারা এ কেন্দ্র পরিচালনা করবেন, দায়িত্ব অর্পণের পূর্বেই তাদের যথাযথ যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ বিবেচনায় নেওয়া হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ এবং রোসাটমের প্রত্যয়নের ভিত্তিতেই দায়িত্ব দেওয়া হবে।

প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ কবীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কর্মীদের দক্ষতা নিশ্চিত করেই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালনায় কোনো অসুবিধা নেই।

এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।