নীলফামারী: উত্তরের জেলা নীলফামারীতে শীত অনুভূত হতে শুরু করেছে। সকাল-সন্ধ্যা ও শেষ রাতে দেখা মিলছে শীতের।
এদিকে জেলায় আগাম শীত অনুভূত হওয়ায় শীতের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে সর্বত্র।
শীতের প্রস্তুতিতে গ্রামীণ জনপদের মানুষ তুলে রাখা লেপ, তোষক ও কাঁথা নামিয়ে নিয়েছেন। কেউ নতুন করে তৈরির জন্য লেপ-তোষক তৈরির দোকানে যাচ্ছেন। গরিব মানুষেরা নিজ হাতে ছেঁড়া কাঁথা তালি লাগাছেন কিংবা সেলাই করে নিচ্ছেন। যে যার মতো শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
এদিকে নীলফামারীর সৈয়দপুরের ক্ষুদ্র গার্মেন্টস কারখানার মালিকরা জ্যাকেট, ট্রাউজার, কার্ডিগানসহ শীতের পোশাক তৈরি করে মজুদ করেছেন। দিনরাত এসব কারখানায় চলছে কারিগরদের ব্যস্ততা। ঝুট কাপড়ে তৈরি হচ্ছে নান্দনিক সব শীতের পোশাক। তৈরি এসব শীতের কাপড় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানে পাঠানো হবে বলে জানান সৈয়দপুর ক্ষুদ্র গার্মেন্টস কারখানা মালিক সমিতির সভাপতি আখতার খান।
সরেজমিনে নীলফামারীর বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক ও রেললাইনের ধারে ঘুরে দেখা যায় সব লেপ তোষকের দোকানে ব্যস্ততা। মূলত এই দুই জায়গায় সবচেয়ে বেশি লেপ-তোষক তুলার দোকান রয়েছে। শীতের আগমনে সৈয়দপুরে লেপ-তোষক তৈরিতে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
লেপ তৈরির পৈত্রিক পেশায় জড়িয়ে পড়া যুবক অসি হাসান (২৮) ও রাফি হাসান (২৬) বলেন, এরই মাঝে রাতে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। গভীর রাতে একটু একটু শীত শীত অনুভূত হচ্ছে। সামনে অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাস। সাধারণত এ অঞ্চলে একটু আগেভাগে শীত নামে। তাই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আগে থেকে লেপ তৈরি করে রাখছি।
লেপ তোষক তৈরির প্রতিষ্ঠান হোসেনী ট্রেডার্সের কর্ণধার শমসের আলী (৫৫) জানান, শীতের অর্ডার ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই লেপ তৈরি করতে আসছেন মানুষ। এখন প্রতিদিন ৫/৬টি করে লেপ তৈরি হলেও ফুল সিজনে ১২/১৫টি তৈরি হয় বলে জানান তিনি। শ্রমিকরা এখন লেপ তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
ধুনকর ইমন আশরাফী (২৫) ও আজিজ আশরাফী (৩৩) বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীত তাই লেপ তৈরি করছি। শীত এলেই আমাদের কদর বেড়ে যায়। শীত চলে যাওয়ার পর টুকটাক তোষক, জাজিম, বালিশ, কুশন ইত্যাদি তৈরির কাজ হয়।
লেপ তৈরি করে কত টাকা পান জানতে চাইলে তারা বলেন, একটু ভালোমানের লেপ বানালে ৩০০ টাকা মজুরি পেয়ে থাকি। এখন আগের মতো লেপ তৈরি করা হয় না বলে জানান তারা। কারণ হিসেবে বলেন, লেপের জায়গা দখল করেছে বিদেশি কম্বল। তাই বাজারে লেপের চাহিদা কমেছে।
শহরের একরামুল হক কটনশপ, ফেরদৌস কটন শপ, সৈয়দপুর তুলা ঘর, গাউসিয়া বেডিংয়ে একেকটি নরমাল লেপ বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে ১৫শ টাকায়। এর সঙ্গে তিনশ টাকা দিলে পাওয়া যাচ্ছে লেপের কভার।
একরামুল কটন শপের মালিক আরমান জানান, এখন বাজার দর হিসেবে বোগা ও খুপড়া তুলা ৩০-৫০ টাকা কেজি, কার্পাস তুলা ৫০-৬০ টাকা কেজি শিমুল তুলা ৩৮০ থেকে প্রকারভেদে ৫০০ টাকা কেজি। একটি নরমাল লেপ তৈরিতে ৫/৬ কেজি কার্পাস তুলা লাগে। সবমিলিয়ে খরচ পড়ে যায় ১১শ থেকে ১৩শ টাকা। শীত বাড়লে লেপের চাহিদাও বাড়বে বলে জানান তিনি।
আরএ