নড়াইল: জেলার কালিয়া উপজেলায় দুই বছরে ২৭টি পার্টনার স্কুল কেবল কাগজে কলমে শেষ হয়েছে। খোদ উপজেলা কৃষি অফিসারের দুর্নীতি আর গাফিলতিতে গড়ে ওঠেনি কৃষকের কাঙ্খিত দল, পায়নি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ।
কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিকের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েক দফা তদন্তে নামে কৃষি প্রশাসন। এ প্রেক্ষিতে ইভা মল্লিককে উপজেলা কৃষি অফিসার থেকে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় অতিরিক্ত কৃষি অফিসার পদে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে।
১৯ আগস্ট (মঙ্গলবার) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে এ তথ্য জানা যায়। ওই পত্রে বলা হয়েছে, ইভা মল্লিকের (৩২৮২) গ্রেড-৬ এর অবনমন না হলেও তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অধীনে কাজ করবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে ২০২৩ সালের ১৭ মে কালিয়াতে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন ইভা মল্লিক। অফিস সহকারীকে বসিয়ে রেখে নিজের বলয়ের লোক দিয়ে হিসাব পরিচালনা, কৃষকের প্রণোদনা লুটপাট, সার ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে লাইসেন্স নবায়নের অভিযোগ পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে।
২০২৩ সালের আগস্টে যাত্রা শুরু করে কৃষকদের নিয়ে পার্টনার ফিল্ড স্কুল। ২৫ জন কৃষক নিয়ে গঠিত একেকটি স্কুলে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়ার কথা থাকলে দুই বছরে ২৭টি পার্টনার ফিল্ড স্কুল গঠন করা হয় কাগজে-কলমে।
প্রতিটি স্কুলে ১০ সপ্তাহে ১০টি টি ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও কৃষি বিভাগের মনগড়া নিয়মে কোথাও ১ দিন আবার কোথাও ৫ দিনেই শেষ হয় সেশন। ১৪টি স্কুলের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ছিলেন খোদ কৃষি অফিসার ইভা মল্লিক। তিনি নিয়মিত ভাতা গ্রহণ করলেও প্রশিক্ষণ ক্লাসে হাজির হননি।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষকদের নাস্তা ও সন্মানিবাবদ দুই হাজার ৮০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও ক্লাস শেষ করার তিন মাস পরও কিছুই জোটেনি কৃষকদের ভাগ্যে।
এসব দুর্নীতি আর অনিয়মের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে ২৯ জুলাই কয়েকটি স্কুলের পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নেন ইভা মল্লিক। এক পর্যায়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে তার পক্ষে সংবাদ পরিবেশন করেও শেষ রক্ষা হয়নি তার।
এছাড়া, সমলয় প্রকল্প, তৈল জাতীয় প্রকল্প, খুলনা ক্লাইমেট স্মার্ট প্রকল্প, রাজস্ব প্রকল্প, পারিবারিক পুষ্টি প্রকল্প, পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পসহ নানা বিষয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিকের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ইভা মল্লিক কৃষি কর্মকর্তা হিসাবে কালিয়া উপজেলায় যোগদানের পর পার্শ্ববর্তী একটি সরকারি ব্যাংকে পরিবারের সদস্যের হিসাবে তিনি পৌনে দুই বছরে পৌনে তিন কোটি টাকা লেনদেন করেন। গত ৭ জুলাই এসব অভিযোগ এনে দুদকে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ দাখিল করেন স্থানীয় এক সার ও বীজ ডিলার।
এদিকে, ইভা মল্লিকের বদলীর চিঠি আসার পর কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসে স্বস্তির ছায়া নেমে এসেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, কালিয়া উপজেলার কৃষি উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল ওই কর্মকর্তার জন্য। এখন আবার ঠিক হয়ে যাবে।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইভা মল্লিকের ফোনে বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক জসীম উদ্দীন বলেন, ইভা মল্লিকের গ্রেড-৬ ঠিকই আছে। এটা পদাবনতি অফিসিয়ালি বলা যাবে না, তবে তাকে উপজেলা কৃষি অফিসারের অধীনে কাজ করতে হবে।
এসএইচ