ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৯ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:২৫, আগস্ট ১৪, ২০২৫
লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

লালমনিরহাট: উজান থেকে হু হু করে ধেয়ে আসা পানির কারণে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে টানা তিনদিন ধরে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৩ মিটার, যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ৮ সেন্টিমিটার ওপরে।

নদীপাড়ের মানুষ ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, চারদিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সোমবার (১১ আগস্ট) রাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে তা টানা তিনদিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর দুই পাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে নতুন নতুন এলাকা ডুবে গেছে, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।  

তিস্তার পানি বাড়ার ফলে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার বেশ কিছু এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে। এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্দ্ধন, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

টানা তিনদিনের বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গবাদিপশু, বৃদ্ধ, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। চারপাশে শুধু পানি—বাড়ির ভেতরে বিছানার ওপর মাচা বানিয়ে গৃহিণীরা দিনে একবার রান্না করছেন, কেউ কেউ উঁচু রাস্তা বা বাঁধে চুলা বসিয়ে রান্না করছেন। বাঁধ ও রাস্তার ধারে পলিথিনের তাঁবু টাঙিয়ে রাখা হচ্ছে গবাদিপশুগুলোকে। সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনায় পড়েছেন নারীরা—পায়খানা ডুবে যাওয়ায় শৌচকর্মে সমস্যা হচ্ছে। প্রায় সব বাড়ির টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

গোবর্দ্ধন গ্রামের এমদাদুল হক বলেন, তিনদিন ধরে পানিবন্দি রয়েছি। চারদিকে শুধু পানি। উজানের ঢলে তিস্তা গর্জে উঠেছে, ভয়ংকর রূপ নিয়েছে নদী। নির্ঘুম রাত কাটছে বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর। পানিতে সাপ ও পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে।

উত্তর ডাউয়াবাড়ী গ্রামের আকলিমা বেগম বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। আমাদের গ্রামের সব বাড়িতে হাঁটু থেকে কোমর পানি। রান্না, খাওয়া, থাকা, শৌচকর্ম—সবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। রাতে ঘুমাতে পারিনি। বাচ্চাদের নিয়ে আতঙ্কে থাকি, কখন কে পানিতে পড়ে যায়!

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়ছে। তিনদিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হতে কিছুটা সময় লাগবে, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকালে পানি ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যায় কিছুটা কমে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) এইচএম রকিব হায়দার বলেন, পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে কিছু শুকনো খাবার ও জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, দ্রুত বিতরণ করা হবে। আরও শুকনো খাবারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।

এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।