সিলেট: সাদাপাথর লুটপাটের অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ভোরে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে কোম্পানীগঞ্জ থানা ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গ্রেপ্তার আলমগীর আলম কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ২নং পুর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া উইং থেকে জানানো হয়, বালু ও পাথর লুটের একটি মামলায় আলমগীর আলমকে গ্রেপ্তারের আগে ওয়ারেন্ট তামিল করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সাদাপাথর লুটের ঘটনার পর এই প্রথম কাউকে গ্রেপ্তার দেখালো পুলিশ।
এর আগে বুধবার (১৩ জুলাই) বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের জরুরি বৈঠকের পর লুণ্ঠিত পাথর সাদাপাথরে ফেরানোর উদ্যোগসহ পাঁচ সিদ্ধান্ত হয়। এর একটি ছিল সাদাপাথরকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া এবং কোয়ারি এলাকায় সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনী মোতায়েন।
এরপর বুধবার রাত ৯টায় যৌথ বাহিনী মাঠে নামে এবং রাত ১১টায় সাদাপাথরকে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে রাতেই লুট হওয়া পাথর উদ্ধারের অভিযান চালায়। অভিযানে ভোলাগঞ্জের আশপাশের এলাকা থেকে উদ্ধার করা সাদাপাথর রাতেই যথাস্থানে রাখতে শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করে যৌথবাহিনী। এসব সাদাপাথর ফেরত নেওয়া হচ্ছে যথা স্থানে। এক রাতেই ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে বলে জানান আভিযানিক দলের সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে সেনাবাহিনীসহ যৌথবাহিনীকে ট্রাক তল্লাশি করতে দেখা গেছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় সিলেট সার্কিট হাউজে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের সমন্বয় সভায় পাথর লুটপাট ঠেকানো এবং লুট হওয়া পাথর সাদাপাথরে পুনঃস্থাপনে পাঁচ দফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ।
সভায় গৃহীত পাঁচ দফা সিদ্ধান্ত:
জাফলং ইসিএ এলাকা ও সাদাপাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথবাহিনীর দায়িত্ব পালন। গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের চেকপোস্টে যৌথ বাহিনীর সার্বক্ষণিক উপস্থিতি। অবৈধ ক্রাশিং মেশিন বন্ধ ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান অব্যাহত রাখা। পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনা। চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়া।
ওইদিন দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সিলেট কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমূস সাদাতের নেতৃত্বে একটি দল সাদাপাথর এলাকার লুটপাটের চিত্র দেখতে ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর এলাকায় যান।
তদন্ত শেষে দুদক কর্মকর্তারা জানান, সাদাপাথরে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। এতে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও স্থানীয়রা এবং প্রশাসনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে তারা মনে করছেন। তবে তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
দেরিতে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে দুদকের এ কর্মকর্তা বলেন, সিলেট থেকে ভৌগলিক দূরত্বের কারণে দেরিতে অভিযান চালানো হয়েছে। এটা ভৌগলিক দিক থেকে স্থানীয় প্রশাসনের অনেক কাছে। স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল।
দুদক কর্মকর্তারা আরও বলেন, প্রতিদিন সাদাপাথর লুটপাটের বিষয়টি সারাদেশে ভাইরাল হয়েছে। বাস্তব অর্থে আমরা এখানে এসে দেখলাম, সব পাথর লুটপাট করে নিয়ে গেছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারলাম, প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক এখানে পাথর লুটপাট করেছে। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন জড়িত আছে। প্রশাসনেরও ভূমিকা আছে। পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন আছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাছেই বিজিবি ক্যাম্প আছে।
দুদক কর্মকর্তারা জানতে পারেন, বিজিবি ক্যাম্প থাকার পরও রাতদিন ২৪ ঘণ্টা ৫০ হাজার মানুষ পাথর লুট করছে। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার নৌকা এসে পাথর লুট করে। প্রতিটা নৌকায় ১০/১২ জন মানুষ থাকে। এতো এতো মানুষ গত এক বছর ধরে পাথর লুট করছে, তাহলে আর কিছু থাকে।
দুদক কর্মকর্তারা স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছেন, শুনেছেন, অনেকের নাম পেয়েছেন, যারা এ পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত। এ ব্যক্তিগুলো ছাড়াও প্রশাসনের দায়বদ্ধতাও দেখা হবে, জানান তারা। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের পর পরবর্তী নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবেন। তাছাড়া স্পেশালিস্ট কোনো টিম আসলে দেখা যেতো, কত টাকার পাথর লুট হয়েছে। তবে কোটি কোটি টাকারতো হবেই।
স্থানীয়রা জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর থেকে শুরু হয় আদালতের নিষেধাজ্ঞায় বন্ধ থাকা পাথররাজ্যে লুটপাট। ভোলাগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা, রোপওয়ে বাংকার থেকে প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন করে এখন ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সেসময় নিরব ছিল প্রশাসন।
সর্বশেষ গণমাধ্যমে আলোচিত হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এনইউ/আরআইএস