সিলেট: সড়ক, রেল ও আকাশপথ-তিন রুটেই সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে নগরের কুমারপাড়াস্থ নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেট দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার।
আরিফুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের টানা ১৫-১৭ বছরের শাসনামলেও সিলেট ন্যায্য উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও সেই বৈষম্যের পথেই হাঁটছে। সিলেটবাসীর মৌলিক অধিকার—নিরাপদ, সহজ ও সুশৃঙ্খল যোগাযোগ ব্যবস্থা—আজ মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সংস্কারকাজ বছরের পর বছর ধরে চললেও এর অগ্রগতি নেই। প্রতিদিন যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছেন মানুষ। রেলপথের অবস্থাও করুণ—সময়সূচি অনিয়মিত, কোচ জরাজীর্ণ। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে, দুর্ঘটনা বেড়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব কারণে পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়ায় সিলেটে নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। অথচ সমস্যাগুলোর সমাধানে সরকারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।
বিমান ভাড়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক মেয়র বলেন, দেশে যেখানে ফ্লাইট ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে সিলেট-ঢাকা রুটে উল্টো অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ওয়ানওয়ে টিকিটের দামই এখন ১৪-১৬ হাজার টাকা। সড়ক, রেল ও আকাশ—তিন রুটেই সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার।
সরকারপ্রধানের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আরিফুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম, কোনো সরকারপ্রধান একবারের জন্যও সিলেটে আসেননি। অতীতে সব সরকারপ্রধানই অন্তত ওলি-আউলিয়াদের মাজার জিয়ারতের জন্য হলেও এসেছেন। কিন্তু এবার সেই ঐতিহ্যও ভঙ্গ হয়েছে। তিনি সরকারপ্রধানকে আহ্বান জানান-উপদেষ্টাদের নিয়ে সড়কপথে সিলেট ঘুরে বাস্তব চিত্র দেখার জন্য।
সিলেটবাসীর ন্যায্য অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থায় মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট হওয়া সত্ত্বেও আজ মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা, জনভোগান্তি চরমে। ঢাকায় পৌঁছাতে ১৮-২০ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে, অনলাইনে রেলের টিকিট পাওয়া যায় না।
আরিফুল হক বলেন, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি থেকেও এখনো পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সিলেট। সব উপজেলার রাস্তাঘাট নাজুক অবস্থায় আছে। এলজিআরডি মন্ত্রণালয় এ বছর সিলেট সিটি করপোরেশনকে মাত্র তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, যা দেশের সব সিটি করপোরেশনের মধ্যে সর্বনিম্ন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, চট্টগ্রামে ২০ কোটি বরাদ্দ হতে পারে, কিন্তু সিলেটকে কেন সর্বনিম্ন দেওয়া হবে?
তিনি আরও বলেন, সিলেট ভূমিকম্প জোনে পড়লেও ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে না। সিসিকের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্প এখনো বাস্তবায়ন হয়নি, জলাবদ্ধতা নিরসনেরও কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষ পানির সংকটে ভোগছে-বিদ্যুৎ এলেও পাম্প চালু হতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে।
গ্যাস নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গ্যাস আমাদের এখানেই উৎপাদিত হয়, কিন্তু বাসাবাড়িতে সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। যেখানে উৎপাদন হয়, সেখানে তো কিছু সুবিধা থাকার কথা। কিন্তু সিলেট সেটিও পাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, সিলেট থেকে কোটি কোটি টাকার তেল, গ্যাস, বালু-পাথর ও খনিজ সম্পদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ এসব পরিবহনের জন্য যে সড়কগুলো ব্যবহার হয়, সেগুলো নাজেহাল অবস্থায়। খনিজ সম্পদ থেকে যে রয়্যালটি স্থানীয় উন্নয়নে বরাদ্দ হওয়ার কথা, তাও দেওয়া হয়নি।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় অঞ্চল। এর উন্নয়নে দেশি-বিদেশি সব মহলকে স্বোচ্চার হতে হবে।
এনইউ/আরবি