ঢাকা, সোমবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০২ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

উন্নত চিকিৎসার অভাবে জটিল অবস্থায় জুলাইযোদ্ধা সিফায়েত

এম এম ওমর ফারুক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:২৬, জুলাই ২৮, ২০২৫
উন্নত চিকিৎসার অভাবে জটিল অবস্থায় জুলাইযোদ্ধা সিফায়েত জুলাই অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ সিফায়েত চৌধুরী (মাঝে) নড়াইলের কালিয়ায় নিজ বাড়িতে স্বজনদের সাথে

নড়াইল: বিশেষ কারো আহ্বানে নয়, সিফায়েত চৌধুরী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়েছিলেন বিবেকের তাড়নায়। উত্তাল সেই রাজপথে অধিকার আদায়ের জন্য বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন জালিম শাসকের বিরুদ্ধে।

সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

ফ্যাসিবাদ পতনের এক বছর পার হয়ে গেলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি তিনি। বরং ঠিকভাবে চিকিৎসা না পেয়ে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছেন জুলাইযোদ্ধা সিফায়েত চৌধুরী।

সিফায়েত চৌধুরীর বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাপুলিয়া গ্রামে। চার ভাই আর তিন বোনের সবার ছোট তিনি। আন্দোলনের সময় গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের মাস্টার্সে পড়তেন। পিতা কৃষি কাজ করতেন। এখন আর কিছু করেন না। বড় ভাই মারা গেছেন অনেক আগে। মেঝো ভাই এবং সেঝ ভাই মসজিদে ইমামতি করে সংসার চালান।  

মেধাবী শিক্ষার্থী সিফায়েত চৌধুরী এখন ভাবলেশহীন বিছানার এক কোনে পড়ে থাকেন দিনরাত। প্রায়ই মাথার মধ্যে ঝি ঝি শব্ধ হয়। তখন উল্টা-পাল্টা কথা বলেন। চিনতে পারেন না পরিবারের লোকজনদের। ছেলের এই অবস্থায় দুঃচিন্তায় বৃদ্ধ বাবা মা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।  

অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা সিফায়েতকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসা না দিলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে আশংকা করছে তার পরিবার।

সরেজমিনে জানা যায়, খুব বেশি কথা বলতে পারেন না তিনি। তেমন কিছু মনেও নেই। তবে আন্দোলনে যাওয়ার কথা তার মনে আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ৫ আগস্ট লং মার্চ ফর ঢাকার উদ্দেশ্যে নবীনগর এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে যোগ দেন সিফায়েতসহ তার কয়েকজন বন্ধু। হঠাৎ পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে। ছয়টি গুলির ছাররা লাগে শরীরের বিভিন্ন অংশে। তাতেও দমে যাননি তিনি।  

আন্দোলনের এক পর্যায়ে পুলিশের অস্ত্র থেকে ছোড়া একটি বুলেট সিফায়েতের কানের পিছন দিয়ে ঢুকে সামনে দিয়ে বের হয়ে যায়। সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। কয়েকজন বন্ধু মিলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় সিফায়েতকে। এরপর কি হয়েছিল এখন আর মানে করতে পারেন না। সরকারের কাছে তার একটাই চাওয়া, বেঁচে থাকার জন্য যোগত্যা অনুযায়ী একটা চাকরি।

সিফায়েত চৌধুরীর সেঝ ভাই সাফায়েত বাংলানিউজকে বলেন, ৫ আগস্টের পর প্রথম প্রথম বাড়িতে অনেক লোক দেখতে আসতো, এখন কেউ খোজঁ নেয় না। কোন সরকারি অফিসে গেলে আমাদের মানুষই মনে করে না, দুর্ব্যবহার করে। আমি ইমামতি করে সংসার চালাতাম। ভাইকে দেখাশুনা করতে গিয়ে সে চাকরিটাও হারিয়েছি। আমার নিজের সংসারই চলে না

তিনি আরো জানান, জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা এবং ডিসি অফিস থেকে এক লাখ টাকা সাহায্য পাওয়ার কথা জানালেও সেসব টাকা চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়ে গেছে। এখন অর্থভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না ।

মা মিনি বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আহত ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমরা আর কয়দিন বাঁচবো? আমার ছেলের কী হবে? কী করে খাবে সে? বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন তিনি।

অশ্রুসিক্ত চোখে পিতা আছাদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গরিব মানুষ, কোনোমতে সংসার চলে। ঢাকায় ছেলের অপারেশনের পর যে ওষুধ আনা হয়েছিল তা শেষ হয়ে গেছে। তার শারীরিক অবস্থা এখনো অনেক খারাপ। মাথা খারাপ অবস্থা, প্রায়ই ভুলভাল কথা বলে। তার উন্নত চিকিৎসার দরকার। যেখানে দু’বেলা ভাত জোটেনা সেখানে তার চিকিৎসা চালাবো কীভাবে?

জুলাই যুদ্ধাহত সিফায়েত চৌধুরী বলেন, কোন কিছুর আশায় সেদিন রাস্তায় নামিনি। বিবেকের তাড়নায় গিয়েছিলাম। আহত হয়ে ঘরে পড়ে আছি। এখন পরিবারের বোঝা হয়ে গেছি। আমার সামনে এখন শুধুই অন্ধকার। সরকারের কাছে একটাই চাওয়া, চিকিৎসার পাশাপাশি যোগত্যা অনুযায়ী একটা চাকরি পেলে বেঁচে থাকতো পারবো।

এসএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।