শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মা সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড সংলগ্ন মাঝিরঘাট এলাকায় পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধের অন্তত ২০০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আকস্মিক এই ভাঙনে ২০টি দোকান ও আশপাশের বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি পদ্মায় ধসে পড়ে।
ভাঙনের খবর পেয়ে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন শরীয়তপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. ওয়াহিদ হোসেন, জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায়, শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সরদার একেএম নাসির উদ্দীন কালু এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুর জেলা আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, নদীর ভাঙন প্রতিরোধে জিওব্যাগ ফেলার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ডিসি মো. ওয়াহিদ হোসেন জানান, ভাঙনকবলিত ৩০টি পরিবারকে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে টিন ও নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ১৫০ জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। আরও ৪০০ ব্যাগ প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী আরও প্রস্তুত করা হবে। স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার (৭ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করে মাঝিরঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। স্থানীয়রা তড়িঘড়ি করে ঘরবাড়ি ও দোকান সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
সাগর মাদবর, শফিকুল ইসলাম ও আলী আহম্মদ নামে স্থানীয়রা জানান, ভাঙনে অন্তত ২০টি স্থাপনা নদীতে তলিয়ে গেছে। কেউ কেউ দোকান সরাতে সক্ষম হলেও অধিকাংশই সব হারিয়েছেন।
শরীয়তপুর পাউবো জানিয়েছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা-আলমখার কান্দি পর্যন্ত ২ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর বাঁধটির মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট অংশে প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে। পরবর্তীতে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে সংস্কারকাজ শুরু করে পাউবো, যেখানে জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলা হয়।
এরপর চলতি বছরের ঈদুল আজহার দিন সকালে বাঁধের নতুন সংস্কার করা অংশসহ আরও একটি স্থানে আবারও ভাঙন শুরু হয়। একদিনের মধ্যে প্রায় ২৫০ মিটার বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। টানা বৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধির কারণেই এমন ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আতঙ্কে অনেকেই ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিচ্ছেন।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, হঠাৎ ভাঙনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন সরেজমিনে দেখেছি। এখানে অনেক দোকানপাট ও ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দ্রুত সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।
এসআরএস