ঢাকা, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩২, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৮ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

ছিনতাইয়ের সালিশ নিয়ে বিরোধের জেরে তিনজনকে গণপিটুনিতে হত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:১৪, জুলাই ৩, ২০২৫
ছিনতাইয়ের সালিশ নিয়ে বিরোধের জেরে তিনজনকে গণপিটুনিতে হত্যা ঘটনাস্থল

মাদক ও ছিনতাই নিয়ে সালিশের বিরোধ থেকে স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং মেম্বারের গায়ে হাত তোলা নিয়ে কুমিল্লায় একই পরিবারের তিনজনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে জেলার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রাম এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন-কড়ইবাড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম রুবি (৪৭), রুবির মেয়ে তাসপিয়া আক্তার হ্যাপি ওরফে জোনাকি (২৯) ও রুবির ছেলে মো. রাসেল মিয়া (৪০)।  

এ ঘটনায় রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তারকে (২৭) গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  

নিহত জোনাকির স্বামী হায়দারাবাদ গ্রামের  আবদুল হামিদের ছেলে মনির হোসেন। মনির হোসেন, নিহত তিনজন ও হাবিবুর রহমানের আরেক মেয়েসহ তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে ৪৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে নিহত তিনজনের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৩০টি।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সাততলা ভবনের বেশির ভাগ জানালার কাঁচ ভাঙা। তিনটি স্থানে ছোপছোপ রক্তের দাগ। বাড়ির আঙিনায় একটি মোটরসাইকেল ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে। বাইরে অসংখ্য মানুষের জটলা।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি এ পরিবার মাদক কেনাবেচার সঙ্গে সম্পৃক্ত। কমপক্ষে ৪০ বছর ধরে তারা মাদকবিক্রি করে আসছে। অনেকবার শুনেছি, তাদের ক্রসফায়ার দেওয়া হবে। কিন্তু তারা বারবার বেঁচে যায়। তারা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা ব্যক্তিদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল।  

সম্প্রতি এক স্কুল শিক্ষকের মোবাইল ছিনতাই হয়। ওই ছিনতাইকারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল রুবিদের পরিবারের। রুবিদের পরিবার ওই ছিনতাইকারীকে তাদের বাড়িতে আশ্রয়ও দেয়। গত মঙ্গলবার কড়ইবাড়ি গ্রামে এ ঘটনাসহ তাদের অপকর্ম নিয়ে সালিশ হয়। সেখানে তাদের অপকর্মের বিষয়ে মানুষজন অভিযোগ তোলেন। এ পরিবারের মাদক ছড়িয়ে দেওয়ায় গ্রামের আটজন রিহ্যাব সেন্টারে আছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।  

বৃহস্পতিবার সকালে হায়দারাবাদ-কড়ইবাড়ি সড়কের কাজ পরিদর্শনে আসেন আকুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল। এ সময় শিমুল বিল্লাল ও স্থানীয় বাচ্চু মেম্বারের গায়ে সালিশের ঘটনা নিয়ে আচমকা হাত তোলেন রোকসানা বেগম রুবি। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে, রুবি নিজের হাত কেটে মামলার ভয় দেখান। এরপর পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়।

নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার জানান, ননদের দোকানে চাকরি করা এক যুবক মোবাইল চুরির অভিযোগে ধরা পড়ে। অভিযুক্তের বাবা এ ঘটনায় আমাদের বাড়িতে এসে বলেন, আমি এক লাখ টাকা জরিমানা দেব। আমার স্বামী রাসেল যাতে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। গত পরশু বিষয়টি সুরাহার জন্য সবাই বসে। আমার শাশুড়ি বিষয়টি নিয়ে কথা বললে, স্থানীয় বাছিরের সঙ্গে ঝামেলা হয়। বাছির আমার শাশুড়ি ও ননদকে মারধর করে। এ সময় তর্কাতর্কি ও ঝামেলার একপর্যায়ে আমার এক বছরেরও কম বয়সী মেয়েকে মেরে হাত ভেঙে দেয় তারা। আমার স্বামী তখন বাইরে ছিল। তিনি এটি জানতে পারার পর খুবই উত্তেজিত হয়ে যান। এ নিয়ে খুব ঝামেলা হয়। তবে ওইদিন রাতের মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়।  

পরে বৃহস্পতিবার সকালে এক-দেড়শ লোক বাঁশ ও ছুরি নিয়ে হাজির হয়। তারা প্রথমে ঘরের ভেতর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর ঘরে ঢুকে আমার শাশুড়িকে হত্যা করে। ঘরের বাইরে নাশতার জন্য যাওয়া ননদকেও হত্যা করা হয়। এরপর আলমারিতে লুকিয়ে থাকা স্বামীকেও হত্যা করে তারা। আমার স্বামী ছোট সন্তানের জন্য বারবার প্রাণভিক্ষা চাইলেও লাভ হয়নি। এখনও পর্যন্ত আমার শ্বশুর নিখোঁজ। আমি এ ঘটনায় মামলা করব।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খাঁন জানান, নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের বিরুদ্ধে যতই অভিযোগ থাকুক, এভাবে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। যারা হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।