ঢাকা, শুক্রবার, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২২ মহররম ১৪৪৭

রাজনীতি

জুলাই শহীদ রিজভীর প্রতি সিপিবির শ্রদ্ধা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:০৪, জুলাই ১৮, ২০২৫
জুলাই শহীদ রিজভীর প্রতি সিপিবির শ্রদ্ধা বক্তব্য রাখেন সিপিবি সভাপতি মো. শাহ আলম সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স

ঢাকা: ২০২৪ এর গণআন্দোলনে ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় পুলিশের গুলিতে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের উত্তরা থানা কমিটির সদস্য।

 

শুক্রবার (১৮ জুলাই) পুরানা পল্টনের সিপিবি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শহীদ রিজভী স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।

সভায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি নেতরা বলেছেন, ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। আর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার আকাঙ্ক্ষাও সামনে চলে এসেছিল। এ আন্দোলন একদিনে হয়নি। দীর্ঘ এক যুগ ধরে কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামের পটভূমিতে ২০২৪ এ জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান হয়।

অস্থায়ী বেদিতে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এরপর অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সভাপতি মো. শাহ আলম সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ।  

সমাবেশ পরিচালনা করেন পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল।

সমাবেশে নেতারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেল এখনো পর্যন্ত জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট সময় পাওয়া যায়নি। বৈষম্যহীনতার কথা সামনে এলেও, এসব নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। বিচার, ২০২৪ এর আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন সুনিশ্চিত করা যায়নি। এ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও হতাহতদের মধ্যে বেশি সংখ্যক হলো শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের জীবন আজ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ঘোষিত হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় কর্মহানি হচ্ছে। গ্রামের কৃষক ক্ষেতমজুররা ফসলের লাভজনক দাম না পেলেও উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। অথচ উৎপাদন খরচ কমানো আর সাম্প্রতিক সময়ে জলবদ্ধতায় অসহায় মানুষের পাশে ও বীজতলা নির্মাণে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

সমাবেশ থেকে নেতারা বলেন, রাজনীতির অনেক ডামাডোলের মধ্যে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে রাখাইনে করিডর, চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়া, অন্যদেশকে সমরাস্ত্র তৈরির কারখানার অনুমতি দেওয়া, আমেরিকার সঙ্গে গোপন ও অসম বাণিজ্য চুক্তি এবং জনগণের সম্মতি না নিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘকে মানবাধিকার কমিশন কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। যা দেশকে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তির আধিপত্য বিস্তারের আরও বেশি সুযোগ করে দেবে।

সমাবেশে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যে সুযোগ ছিল, তা হলো রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে গণতন্ত্রের চলার পথ অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। এ কাজে সরকারের মনোযোগ দেখা যাচ্ছে না। বরং রাজকীয় দল তৈরি, একাত্তরের ঘাতক শক্তিকে নানা সুযোগ সুবিধা দেওয়ার খবর শুধু প্রকাশ হচ্ছে না, জনগণ দেখতেও পাচ্ছে।

গোপালগঞ্জের চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ সরকারের সময় গুলি করে মানুষ হত্যা কেউ প্রত্যাশা করেনি। অথচ তাই ঘটলো। এমনকি নিহতদের তদন্ত ছাড়া কবর দেওয়া ও সৎকারের মতো ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নেতারা এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সবার সমাবেশ করার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

নেতারা বলেন, দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে সরকারি দল বলে পরিচিতদের আর্মির সাজোয়া বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর প্রহরায় সমাবেশ করতে সহায়তা করা হচ্ছে আর অন্যদিকে সরকারি ট্রেন ভাড়া দেওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর জনসভায় লোক আনার জন্য। মব সন্ত্রাস চলছে। নতুন নতুন রূপে ভয়ের রাজত্ব আবির্ভূত হচ্ছে। এ অবস্থা দেখার জন্য দেশের মানুষ গণঅভ্যুত্থান করেনি।

নেতারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। কমিউনিস্ট ও বামপন্থিরা গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার মধ্য দিয়ে এসব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

নেতারা বলেন অনেক দলের দায়িত্বহীন আচরণ, কথাবার্তা পুরো রাজনৈতিক পরিবেশ ও সংস্কৃতিকে কলঙ্কিত করছে। এ অবস্থা থেকে এসব দলকে সরে আসতে হবে। তাহলে না হলে এর ফলে উদ্ভূত ঘটনার দায় তাদের নিতে হবে। সরকারকে এ বিষয়ে দল নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

আন্তর্জাতিক সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

আরকেআর/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।