ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে মায়ের আকুতি 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:০১, মে ১১, ২০১৯
একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে মায়ের আকুতি  অসুস্থ মুসলিম ও তার মা রাবেয়া। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: তিস্তা নদীর হিংস্র স্রোতে ভিটেমাটি হারিয়ে ৮ বার নতুন করে মাথাগুজার ঠাঁই করতে হয়েছে বিধবা রাবেয়াকে। বারংবার ভিটিমাটি হারিয়েও বিচলিত হননি তিনি। ভাগ্যের বিড়ম্বনা বলে মেনে নিয়ে একমাত্র সন্তান মুসলিম উদ্দিন পঁচাকে অবলম্বন ভেবে নতুন উদ্যমে চালিয়েছেন জীবন সংগ্রাম। 

বিধবা মায়ের সেই সন্তান দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারে  আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাকে সুস্থ করতে প্রয়োজন তিন লাখ টাকা।

 

বিধবা রাবেয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের রসুলপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের স্ত্রী। তার একমাত্র সন্তান মুসলিম উদ্দিন পঁচা (২২) পেশায় চালকের সহকারী।  

রাবেয়া জানান, মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধন পাসাইটারী গ্রামে ফসলি জমিসহ ছিল সুখের সংসার। হঠাৎ স্বামীর মৃত্যু তাকে কষ্ট সহিষ্ণু করে তোলে। স্বামীর অবর্তমানে তিন মাসের শিশু সন্তান মুসলিমকে নিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকেই। এরই মধ্যে তিস্তার কড়াল গ্রাসে বিধ্বস্ত হয় বিধবার ফসলি জমি ভিটেমাটি। আশ্রয় নেন নদীর তীরে। এভাবে বসতভিটে নদীগর্ভে চলে যায় প্রায় ৮ বার। এরপর অবস্থান নেন রসুলপাড়া গ্রামে। ঝিয়ের কাজ করে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন। স্বপ্ন ছিল সন্তান বড় হয়ে উপার্জন করলে কষ্ট দূর হবে।  

সন্তান বড় হয়ে চালকের সহকারী হিসেবে উপার্জন করায় সংসারে সুখ দেখা দিলেও স্থায়ী হয়নি। হঠাৎ অর্শ্বরোগে আক্রান্ত হন বিধবা মায়ের সন্তান মুসলিম। চিকিৎসকদের পরামর্শে রংপুর শহরের একটি ক্লিনিকে অপারেশন করান।  

ভেবেছিলেন সুস্থ হবে সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি। কিন্তু বিধিবাম দেখা দিলো টিউমার। পায়খানার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহ শাহজাদার তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। চিকিৎসকরা মুসলিমের পেটে বিকল্প পায়খানার পথ বের করলেও সুস্থ করতে পারেননি তাকে। চিকিৎসকরা দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে পরামর্শ দেন নচেৎ পঁচাকে বাঁচানো যাবে না। চিকিৎসার এই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পুনরায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন রাবেয়া বেওয়া ।

উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আদরের ধন ছেলেকে বাঁচাতে ধার-দেনা করে ৫ হাজার টাকা নিয়ে দুই সপ্তাহ আগে রংপুরের সেই চিকিৎসকের কাছে যান রাবেয়া।  চিকিৎসকরা জানান তার ছেলের সেই টিউমারটি ক্যানসারে রূপ নিয়েছে। এখন সরাসরি অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। ৪-৬টি কেমোথেরাপি দিয়ে তবে অস্ত্রোপচার করতে হবে। এজন্য ভারতে নিতে হবে এবং খরচ হবে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা। চিকিৎসকদের এমন কথায় বাকরুদ্ধ বিধবা অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে চোখের জলে বাড়ি ফেরেন। চোখের সামনে ছেলের মৃত্যু যন্ত্রণা দেখে তাকে বাঁচাতে ছুটছেন সমাজের বিত্তবানদের কাছে।  কিন্তু কে দেবে তাকে এতো টাকা। ছেলে না বাঁচলে তাকেও যে না খেয়ে মরতে হবে। এমন কিছু প্রশ্ন তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

রাবেয়া বেওয়া জানান, তিস্তা নদী সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। এখন বেঁচে থাকার অবলম্বন ছেলেকেও কেড়ে নিতে চায় অভাব নামক দানব। কোথায় পাবেন এতো টাকা?। সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে ছেলের জীবন বাঁচাতে ভিক্ষা চান তিনি।

দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত মুসলিম বাংলানিউজকে বলেন, আমি মরে গেলে মাকে কে দেখবে? । মায়ের দেখাশুনা করার জন্য বাঁচতে চাই। সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে আমি আমার জীবন ভিক্ষা চাই।  

তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে (মোবাইল- ০১৭১৭৩২০৪০৯)।

প্রতিবেশী মহিষখোচা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক রেজাউল করিম মানিক বাংলানিউজকে জানান, গ্রামবাসীর সাহায্যের টাকায় দু'এক বেলা ওষুধ পেলেও উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছে না মুসলিম। মা ছেলের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।