ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

মৃদু তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত রাজশাহী!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:২০, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
মৃদু তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত রাজশাহী! গরমে টেপ দিয়ে পড়া পানিতে গলা ভেজাচ্ছে এক কাক

রাজশাহী: মৃদু তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পদ্মাপাড়ের জনপদ রাজশাহী। আকাশ থেকে যেন আগুন ঢেলে পড়ছে মাটিতে। সূর্যোদয়ের পর পরই যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করছে প্রকৃতি।

মৃদু তাপপ্রবাহেই মানুষের প্রাণ দেহখাঁচা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মানবকূলের পাশাপাশি দুঃসহ গরমে হাঁস-ফাঁস করছে প্রাণীকূলও।

শহরের দক্ষিণের পদ্মার ধূ-ধূ বালুচর থেকে বয়ে আসা গরম বাতাস শরীরে বিধছে আগুনের হলকার মতো। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ছুটির দিন হওয়ায় জুমার নামাজের পর থেকে প্রধান সড়কগুলো ফাঁকা হয়ে পড়েছে।  

তাপমাত্রার পারদ কেবল ওপরে উঠছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

তবে শুক্রবার তাপমাত্রা কিছুটা কমে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। কিন্তু তাপমাত্রা কমলেও কমেনি গরম। বিকেল চারটার পর থেকে পশ্চিম আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। এতে হঠাৎ করেই ভ্যাপসা গরমের মাত্রা বেড়েছে। মানুষের শরীর দিয়ে পানির মতো ঘাম ঝরছে।  

রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়ে গত কয়েক দিন ধরে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়।

আর ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকলে তাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। এছাড়া তাপমাত্রা ৪০ এর ওপরে উঠলেই তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে বলা হয়ে থাকে।  

ফলে রাজশাহীর ওপর দিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে তাপপ্রবাহ ততোই বাড়ছে। আজ তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও গরম কমেনি। বরং আকাশে মেঘ জমতে শুরু করায় ভ্যাপসা গরম বেড়েছে। ভারী বৃষ্টি না হলে তা কমার সম্ভাবনা নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে শহীদুল ইসলাম বলেন, দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ থেকে ৩৫ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছিল। কিন্তু গত ২০ এপ্রিল থেকে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপর উঠে যায়।  

২১ এপ্রিলই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২৪ এপ্রিল আবারও রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ওঠানামা করলেও গরম কমছে না বরং বাড়ছেই বলেন এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।  

অতীতের খতিয়ান টেনে শহীদুল ইসলাম বলেন, এর আগে ২০০৫ সালের ১২ জুন রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০১৪ সালের ২১ মে উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল উঠেছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর আর এই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অতিক্রম করেনি বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে।  

এছাড়া ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে স্মারণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত ওই রেকর্ড ভাঙেনি।

এদিকে, ওষ্ঠাগত গরমে সাপ্তাহিক ছুটিতে রাস্তা-ঘাট দুপুরের পর থেকে ফাঁকা হয়ে পড়েছে। এর ওপর শুক্রবার সকাল থেকে রাজশাহীর মূল শহরসহ অধিকাংশ এলাকাই রয়েছে লোডশেডিংয়ের কবলে। ফলে যারপরনাই ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রখর রোদ থেকে ঘরে ফিরেও গরমে ছটফট করছেন সাধারণ মানুষ।  

দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তীব্র গরমের কারণে হাসপাতালে হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া হৃদরোগ, ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে রোগীর ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। আর ইনডোরে জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।