ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

রাষ্ট্রবিরোধী ভয়ংকর তথ্য আফ্রিদির তিন ডিভাইসে!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪৯, আগস্ট ২৮, ২০২৫
রাষ্ট্রবিরোধী ভয়ংকর তথ্য আফ্রিদির তিন ডিভাইসে! তৌহিদ আফ্রিদি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যা মামলার আসামি আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ‘ব্যাডবয়’ তৌহিদ আফ্রিদির কাছ থেকে জব্দ হওয়া তিন ডিভাইস ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। এসব ডিভাইসে রাষ্ট্রবিরোধী অনেক ভয়ংকর তথ্য-প্রমাণ থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

২৪ আগস্ট রাতে বরিশাল থেকে গ্রেপ্তার তৌহিদ আফ্রিদি যাত্রাবাড়ী থানার ওই হত্যা মামলায় পাঁচদিনের রিমান্ডে রয়েছেন। তিনি বেসরকারি চ্যানেল মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলে। হত্যা মামলায় নাসির উদ্দিন সাথীও গ্রেপ্তার রয়েছেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের ভাষ্যে, জিজ্ঞাসাবাদে তৌহিদ আফ্রিদি অভ্যুত্থানের সময়ের নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিশেষ করে তার কাছ থেকে জব্দ করা তিনটি ডিভাইসের ফরেনসিক পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। এসব ডিভাইসে রাষ্ট্রবিরোধী অনেক ভয়ংকর তথ্য-প্রমাণ থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান বলেন, তার (তৌহিদ আফ্রিদি) কাছ থেকে মোবাইল ফোন, হার্ডডিস্ক ও ম্যাকবুক (তিনটি ডিভাইস) জব্দ করা হয়েছে। এসব ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আপাতত এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানকালে তৌহিদ আফ্রিদি ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। অনেককে প্রভাবিত করেছেন। এমনকি কাউকে কাউকে হুমকি-ধমকিও দিয়েছেন পতিত সরকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রোসিকিউটর মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, আসামি তৌহিদ আফ্রিদি লাইভে এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের নারকীয় কায়দায় হত্যা করতে উৎসাহিত করেন। যথাযথ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে জব্দ ডিভাইসে অবশ্যই ভয়ংকর তথ্য-প্রমাণ আছে। এগুলো ফরেনসিক পরীক্ষা করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ষড়যন্ত্র, কার কী ভূমিকা এবং আন্দোলন দমনে কী ধরনের যোগসাজশ ছিল তা জানা যাবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য, জব্দ ডিভাইসগুলোতে তৌহিদ আফ্রিদি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, এমন প্রমাণ রয়েছে। এসব চ্যাটে আন্দোলনের সময় কোথায় কিভাবে বিক্ষোভকারীদের দমন করা করা, সেসব পরিকল্পনার তথ্য রয়েছে।

যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় গত ২৪ আগস্ট রাতে তৌহিদ আফ্রিদিকে সিআইডির একটি দল বরিশাল থেকে গ্রেপ্তার করে।  

মামলা সূত্রে জানা যায়, গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানাধীন পাকা রাস্তার ওপর আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটায় আসামিদের ছোড়া গুলি আসাদুলের বুকে ও ডান পাশে লাগে। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  

এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন বাবুর বাবা জয়নাল আবেদীন। এ মামলায় পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ভারতে পলাতক শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী ২২ নম্বর ও তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি ১১ নাম্বার এজাহারনামীয় আসামি।

১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে আফ্রিদির বাবা নাসির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন এ মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

২৫ আগস্ট আফ্রিদিকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাত দিন রিমান্ডের আবেদন করেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ ও বিদেশে একজন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং মাই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত পতিত সরকারের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ও আজ্ঞাবহ হয়ে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ২৪ জুলাইয়ে স্বৈরাচারীর পক্ষ নিয়ে তিনি সেলিব্রিটি ও অন্যান্য কনটেন্ট ক্রিয়েটর দিয়ে আন্দোলন বন্ধের জন্য প্ররোচিত করেছেন এবং যারা দ্বিমত পোষণ করেছেন, তাদের বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সরাসরি একজন মিডিয়া সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে এবং ওই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলেনের বিপক্ষে লাইভ প্রচার করে উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে ছাত্র-জনতার দাবি উপেক্ষা করে আন্দোলনবিরোধীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ জোগান।  

আসামির উসকানিমূলক কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণে মামলার ভিকটিম আসাদুল হক বাবু মৃত্যুবরণ করেন বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। মামলার প্রকৃত ঘটনা, অজ্ঞাতনামা আসামিদের পরিচয় শনাক্তকরণ ও রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে আসামিকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সাত দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।  

শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এনডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।