ঢাকা: গুম সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের বিচার সেনাবাহিনীর আইন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে করার আহ্বান জানিয়েছে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খাঁন সাইফ।
সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা প্রতিহত করতে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রোকন উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সার্জেন্ট (অব.) মুসফিকুর রহিম রনি, সংগঠক সৈনিক (অব.) মো. হানিফ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাইফুল্লাহ খাঁন সাইফ বলেন, এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে কিছু কুচক্রী মহল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ও জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে জড়িত। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই অপতৎপরতা কোনোভাবেই দেশপ্রেমিক জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাসী সেনা সদস্যদের বিপথে নিতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায় যে, বাংলাদেশের সংবিধান সেনা আইনের বৈধতা দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আদালতও সংবিধান স্বীকৃত। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সঙ্গে সেনাবাহিনীর আইনের সমন্বয় করে একটি দৃষ্টান্তমূলক বিচারের উদাহরণ সৃষ্টি করা যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে আর কারও মায়ের বুক খালি করবে না, কোনো স্ত্রীকে বিধবা করবে না, কোনো সন্তানকে বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত করবে না।
এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই—আমরা অপরাধীদের বিচারের পক্ষে, তবে সেই বিচার হতে হবে স্বচ্ছ, সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে এবং সংবিধান ও মানবাধিকারের মূলনীতির আলোকে, যেখানে কোনো ফুলস্টপ থাকবে না। একই সঙ্গে আমরা মনে করি, কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরণ করা সংবিধানবিরোধী। রাষ্ট্র ও সংবিধান স্পষ্টভাবে বলেছে, কোনো ব্যক্তি চূড়ান্তভাবে অপরাধী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে অপরাধী বলা যাবে না, এবং সে যদি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়, তাহলে তার চাকরি আইনগতভাবে বহাল থাকবে।
সাইফুল্লাহ খাঁন সাইফ আরও বলেন, আমরা আরও জোর দিয়ে বলতে চাই—দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের মনোবল ভেঙে দেওয়া বা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান ক্ষুণ্ণ করা কোনো দেশপ্রেমিকের কাজ হতে পারে না। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী দেশসমূহের সামনে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে মাথা নিচু করে দাঁড়াতে হবে—এমন কোনো পরিস্থিতি আমরা মেনে নিতে পারি না। অতএব, এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন সব দেশপ্রেমিক নাগরিক, প্রাক্তন ও বর্তমান সেনাসদস্য এবং বিভ্রান্তি ছড়ানো কুচক্রী মহলের অপপ্রচারে কান না দিয়ে অনুরোধ জানাচ্ছে, সার্বভৌমত্ব ও সেনা মর্যাদার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিন।
আইসিটি ও সেনাবহিনীর সমন্বয়ের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, যে ধরনের গুম-খুন হয়েছে দেশে, সে যদি আমার ভাইও হয়, আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই এবং জনসম্মুখে ফাঁসি চাই। কিন্তু এই বিচার করতে গিয়ে ভবিষ্যতে যেন কোনো ধরনের প্রশ্ন না ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেজন্য সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সেনা আইনের সংশোধনী নিয়ে আসা উচিত। তা না করা হলে ভবিষ্যতে অভিযুক্তরা কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ করলে তাদের পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কারণ এই আদালত, এই বিচারকরাই এক সময় বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল, সুদখোর বলেছিল। কিন্তু আজকে আবার একই আদালত বলছে—তিনি নিরপরাধ। সুতরাং, ভবিষ্যতে এই অপরাধীরা যাতে পার না পায়, তাই সেনা আইনের সংশোধনী করে সেনা আইনের মাধ্যমেই বিচার করা প্রয়োজন।
এসসি/এইচএ/