শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়কের সদর উপজেলার চিতলি-বৈটপুর মোড়ে অ্যাম্বুলেন্সটির সামনের চাকার নাকাল (চাকা যেটার সাথে লাগানো থাকে) ভেঙে রাস্তার মাঝে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা শেষে অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী তুলে দেন অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. সবুজ।
শুধু আজ নয় প্রায়ই বিভিন্ন সমস্যায় এভাবেই রাস্তায় পড়ে থাকতে হয় অ্যাম্বুলেন্সটিকে।
অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগী বেলালের ভাই আব্দুস ছালাম বলেন, সকালে ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে নিয়ে আমাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে আমরা খুলনার উদ্দেশে রওনা দেই। চিতলি পর্যন্ত আসার পরে অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট হয়ে যায়। খুব কষ্টে আছি। এখন অন্য অ্যাম্বুলেন্সে যেতে হবে। রোগী নিয়ে এ বিড়ম্বনা আর ভাল লাগে না।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্সটি অনেক পুরোনো। গত দশ বছর ধরে এর অবস্থা খুব নাজুক। প্রতিমাসেই কোনো না কোনো সমস্যায় গ্যারেজে নিয়ে মেরামত করাতে হয়। মাস ছয়েক আগে অ্যাম্বুলেন্সটির পেছনের ও বাম পাশের জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। পরে ফাঁকা স্থানে মোটা পলিথিন দিয়ে কোনোমতে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ইঞ্জিনটি অনেক পুরোনো হওয়ায় মাঝে মাঝেই রাস্তার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়।
চালক সবুজ বলেন, সকালে হেলাল নামের গুরুতর অসুস্থ রোগীকে নিয়ে মোরেলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেই। চিতলি পর্যন্ত এসে অ্যাম্বুলেন্সের সামনের চাকার নাকাল ভেঙে যায়। অনেক কষ্ট করে গাড়িটিকে নিয়ন্ত্রণ করেছি। নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে অনেক বড় বিপদ ঘটার সম্ভাবনা ছিল। পরে পরিচিত অন্য অ্যাম্বুলেন্স এনে রোগীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর গাড়িটিকে সচল করে রাত ৮টার সময় হাসপাতালে পৌঁছেছি।
সবুজ আরও বলেন, পাঁচ মাস আগে আমি মোরেলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছি। আসার পরে অ্যাম্বুলেন্সের ইঞ্জিন ও অন্যান্য সরঞ্জাম মেরামত করিয়েছি। তারপরও প্রায়ই রাস্তার মাঝে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকতে হয়। এটি অনেক পুরোনো হওয়ায় এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স এলে রোগীদের অনেক ভাল সেবা দেওয়া যাবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন মুফতি বলেন, ৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য আমাদের একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। সেটিও এতো পুরোনো যে পেছনের গ্লাস ও পাশের জানলার গ্লাস ভেঙে পরে গেছে। সেখানে মোটা পলিথিন দিয়ে কোনোমতে কাজ চালাতে হচ্ছে। রোগী নিয়ে অন্যত্র যাওয়ার সময় প্রায়ই রাস্তায় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকতে হয়। আজও বাগেরহাটের চিতলিতে নষ্ট হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, একটি অ্যাম্বুলেন্স মেরামতের জন্য বছরে মাত্র ২০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারি। এর থেকে বেশি ব্যয় করলে আমাদের অডিট আপত্তি জানায়। অ্যাম্বুলেন্সটি এতোটাই পুরোনো যে প্রতি মাসেই মেরামত করতে হয়। একটি নতুন অ্যাম্বুলেন্স পেলে রোগীদের সেবার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হত।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৯
আরএ