ঢাকা, সোমবার, ২ ভাদ্র ১৪৩২, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

রাংপানির পাথরও খাচ্ছে পাথরখেকোরা

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:০৫, আগস্ট ১৭, ২০২৫
রাংপানির পাথরও খাচ্ছে পাথরখেকোরা রাংপানিতে চলছে পাথর লুট। ছবি: মাহমুদ হোসেন

সিলেটজুড়ে পাথরচুরি যেন থামছেই না। ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরে নজিরবিহীন লুটপাট, জাফলংয়ে বালু–পাথর দখল নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।

ঠিক এমন সময়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছে জৈন্তাপুরের ভারত সীমান্তঘেঁষা পর্যটনকেন্দ্র রাংপানির লুটের খবর। সেখানে দিনদুপুরে দৃষ্টির আড়ালে পাথর লুট করছে পাথরখেকোরা, অথচ নীরব রয়েছে প্রশাসন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বার্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নিষ্ক্রিয়তার কারণেই অব্যাহত রয়েছে লুটপাট। রোববার (১৭ আগস্ট) সকালেও রাংপানি নদী থেকে বড় বড় পাথর তুলতে দেখা যায় লুটেরাদের। এলাকাবাসীর দাবি, পাথর উত্তোলনের কারণে তাদের ঘরবাড়িও ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বিজিবি ঘটনাস্থলে গেলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, সদস্যরা শুধু বাঁশি বাজিয়ে এলাকা ছেড়ে গেলে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অথচ জৈন্তাপুরের মোকামপুঞ্জি সীমান্ত এলাকায় অব্যাহতভাবে চলছে লুটপাট। ছোট পাথর ইতোমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রোববার বড় পাথরগুলোও তুলে নিচ্ছিল পাথরখেকোরা।

রাংপানিতে চলছে পাথর লুট।  ছবি: মাহমুদ হোসেন

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাংপানি নদীর চারটি পয়েন্ট— শ্রীপুর কোয়ারি, আদর্শগ্রাম, খড়মপুর ও বাংলাবাজার ঘাট থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন চলছে। ২০২৪ সালের আগস্টের আগেও এসব কোয়ারি ছিল আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপির কয়েকজন নেতা ও স্থানীয় এক জামায়াত নেতার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের মতে, রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়া ও প্রশাসনের ভূমিকার কারণেই লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না।

লুট হওয়া পাথরের খোঁজে ভোলাগঞ্জ থেকে জৈন্তাপুর পর্যন্ত নজরদারির আওতায় এনেছে প্রশাসন। এমন তথ্য পেয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেননি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ ফোন রিসিভ করেননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার লাবনীকেও একাধিকবার ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি।  

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, জৈন্তাপুর উপজেলার আসামপাড়া এলাকায় দুই বছর আগে জাফলং ও শ্রীপুর পাথর কোয়ারি থেকে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় পাথর লুট করেন। কয়েক মাস আগে শ্রীপুর পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের অভিযোগে বর্তমান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার লাবনী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। তিনি লুট হওয়া পাথর জব্দ করেন। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে লুট হওয়া পাথর নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে গত আগস্টের শুরুতেই ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর লুট শুরু করে পাথরখেকোরা।  

গত শুক্রবার (১৫ আগস্ট) জৈন্তাপুর উপজেলার আসামপাড়া এলাকা থেকে আগে মজুদ করে রাখা প্রায় ৭ হাজার ঘনফুট পাথরকে ভোলাগঞ্জ থেকে লুট হওয়া বলে দেখিয়ে দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় প্রশাসন। সেদিন রাতেই এসব পাথর জাফলং ও ভোলাগঞ্জ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফারজানা আক্তার লাবনী।

রাংপানিতে চলছে পাথর লুট।  ছবি: মাহমুদ হোসেন 

এলাকাবাসীর দাবি, উদ্ধার হওয়া পাথর আসলে রাংপানি, জাফলং ও শ্রীপুর এলাকার। অথচ সমালোচনা এড়াতে এগুলোকে ‘সাদাপাথর’ বলে ভোলাগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন দায় এড়ানোর জন্যই এসব পাথর ভোলাগঞ্জের বলে চালিয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে নদীপথে বলগেট দিয়ে দিন-রাত পাথর পাচার হলেও এখনো কোনো অভিযান চালানো হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, জব্দ হওয়া পাথরগুলো তারা অনেকদিন ধরেই এখানে দেখতে পাচ্ছেন। এগুলো জৈন্তাপুরের রাংপানি, শ্রীপুর ও জাফলং এলাকার পাথর— ভোলাগঞ্জের নয়।

পাথর লুটের এসব ঘটনায় পর্যটনকেন্দ্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, নদী পথে দিনরাত সমানতালে পাচার চলছে। ভোলাগঞ্জের ঘটনায় সামনে আসায় পর্যটন ধ্বংসের দায় এড়াতে প্রশাসন এখন দায়সারা অভিযান চালাচ্ছে।

জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা, উপজেলা সহকারী কমিশনারের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে না পেয়ে জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মো. বদরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, রাংপানি এলাকায় পুলিশ অভিযান চালালেও কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ওই এলাকায় কারা পাথরলুটে জড়িত, সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।  

এনইউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।