ঢাকা: দীর্ঘ লাইন। দেড় কিলোমিটার যাওয়ার জন্য আধঘণ্টা অপেক্ষা।
সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় গত আগস্টে যাত্রা করে এই ‘ঢাকা-চাকা’। এই পরিবহন চলে দু’টি রুটে। একটি তেজগাঁও-গুলশান লিঙ্ক রোডের নাভানা মোড় থেকে শুরু হয়ে গুলশান শুটিং ক্লাব, গুলশান-১ ও রূপায়ন টাওয়ার হয়ে গুলশান-২ নম্বর পর্যন্ত। অপরটি বনানীর কাকলী মোড় থেকে শুরু হয়ে বনানী বাজার ও গুলশান-২ নম্বর হয়ে বারিধারার নতুন বাজার পর্যন্ত।
এ পরিবহন চালুর সময় থেকেই ভাড়া নিয়ে কথা ওঠে। এখন সেই কথা জোর বেড়েছে আরও। অনেকেই বলছেন, বাস সার্ভিসটি অতিরিক্ত ভাড়াই নিচ্ছে। উপায় না দেখে যাত্রীরা এভাবেই চলতে বাধ্য হচ্ছেন। বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন নিলেও এসব বাস বিআরটিএ’র কিলোমিটার অনুযায়ী ভাড়া মানছে না।
যাত্রীদের অভিযোগ, গুলশান-১ থেকে কাকলী পর্যন্ত পথ বেশি দূর না হলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে ‘ঢাকা-চাকা’র দু’টি বাস ব্যবহার করা লাগে। প্রতিটি বাসে ১৫ টাকা করে ৩০ টাকা দিতে হয়। কেউ গুলশান-১ থেকে কাকলী যেতে হলে তাকে গুলশান-২ এ আসা লাগে। সেখান থেকে নেমে যে বাসটি নতুন বাজার থেকে গুলশান-২ হয়ে বনানী বাজার ঘুরে কাকলী যায় সেটিতে ওঠা লাগে। সেখানেও নতুন করে ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে উঠতে হয়।
যাত্রীরা বলেন, স্বল্প দূরত্ব হলেও কোনো বিবেচনা নেই এই পরিবহনের। গাড়িতে উঠলেই ১৫ টাকার টিকিট করে নিতে হবে। নতুনবাজার থেকে কেউ গুলশান-২ গিয়ে নামলেও তাকে গুনতে হয় ১৫ টাকা, যে ভাড়া কাকলী পর্যন্ত নির্ধারিত।
নতুনবাজার থেকে নিয়মিত বনানী কাঁচাবাজার যাতায়াত করেন ব্যাংক কর্মকর্তা আসলাম আরেফিন। কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “সার্ভিসটা ভালো, কিন্তু যেসময় দেখা যায় আধঘণ্টা পর বাসটি এলো অথবা লাইন দীর্ঘ হওয়ায় একেবারে শেষে দাঁড়িয়ে আছি, তখন খারাপ লাগে। ”
তার মতে, এ পরিবহন ছাড়াও বিশেষ আরও কিছু বড় বাস গুলশান-বনানীতে নামিয়ে দেওয়া উচিত। ব্যক্তি-মালিকানায় না দিয়ে সরকারের বিআরটিসি’র দোতলা বাস যদি দেওয়া যায়, তাহলে সবাই উপকৃত হবেন।
গুলশান-১ থেকে কাকলী যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাশুরুর। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “১ নম্বর থেকে একটি বাসে ১৫ টাকা দিয়ে এলাম। আবার ১৫ টাকা দিয়ে কাকলী যেতে হবে। ১ নম্বর থেকে আসা বাসগুলো কাকলী পর্যন্ত যায় না। আর ভাড়াও ঠিক করে না। ”
তার মতো অনেক যাত্রী অভিযোগ করেন, বাসটি ভাড়া বেশি নিচ্ছে। আবার যাত্রী টানছে বোঝাই করে। এ পরিবহন সিটিং নাকি লোকাল, তাও বোঝেন না যাত্রীরা।
এ রুটের যাত্রী মনির আহমদ বলেন, “দেড় কিলোমিটার যেতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস দরকার নেই। স্বল্প দূরত্বে অল্প ভাড়ায় যেতে পারলেই ভালো। ”
গুলশান-বনানী ঘুরে দেখা যায়, এ রুটের যাত্রীদের কাছে চলাচলের জন্য নিটল মোটরসের এসব বাস ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। বাস না পেলে হয়তো রিকশায় অথবা সিএনজি অটোরিকশায় যেতে হয়। আর কিছু না পেলে হাঁটা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। ”
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে নিটল মোটরস ‘ঢাকা-চাকা’ বাসের অপারেটর মমিনুল্লাহ মামুন বাংলানিউজকে বলেন, “যে ভাড়া আছে সেটা পরিবর্তন করার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর কেউ গুলশান-১ থেকে একবারে কাকলী যেতে চাইলে ২০ টাকার টিকিট করে যেতে পারবে। ”
তবে পরিবহনের কয়েকটি কাউন্টার ঘুরে ২০ টাকার কোনোই টিকিট পাওয়া যায়নি।
এমন ভোগান্তির পাশাপাশি আছে কাউন্টারে টিকিট কিনতে গেলে ১০০, ৫০ বা ২০ টাকা দিলে নির্ধারিত ১৫ টাকা রেখে ৫ টাকার কয়েন ধরিয়ে দেওয়া। এ কয়েন অনেক সময় যাত্রীরা নিতে চান না। ম্যানিব্যাগ-ওয়ালেট থেকে পড়ে যায়। কিন্তু একপ্রকার বাধ্য হয়েই এ কয়েন নিতে হয় তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৬
এসএ/এইচএ/