সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে সরকার।
বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে জারি হওয়া এই অধ্যাদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সই করা এ সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়েছে।
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর অধিকতর সংশোধন করে গত মে মাসে অধ্যাদেশ জারির পর থেকে তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন সরকারি চাকরিজীবীরা। পরে তা দ্বিতীয় সংশোধন করা হয়।
২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ধারা ৩৭ক এর সংশোধন নিয়ে মূলত আপত্তি ছিল। সরকারি কর্মচারীরা এই অধ্যাদেশকে 'কালো আইন' বলে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
সবশেষ জারি করা অধ্যাদেশে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং শাস্তির বিধানও যুক্ত আছে। নতুন জারি হওয়া এই অধ্যাদেশের বিষয়ে রাতে আন্দোলনকারীদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
'সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' এর ধারা ৩৭ক এর পরিবর্তে নিম্নরূপ ধারা ৩৭ক প্রতিস্থাপিত হবে,
যথা:-
"৩৭ক। সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান।
(১) এই আইন বা এই আইনের অধীন প্রণীত বিধিমালায় যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যদি কোনো সরকারি কর্মচারী---
(ক) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করেন, আইনসংগত কারণ ব্যতিরেকে সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশ অমান্য করেন বা তার বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেন বা এই সকল কাজে অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করেন, অথবা
(খ) ছুটি বা যুক্তিসংগত কোনো কারণ ছাড়া অন্যান্য কর্মচারীদের সঙ্গে সমবেতভাবে নিজ কাজ থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন, অথবা
(গ) যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কাজে উপস্থিত থাকতে বা কর্তব্য পালনে বাধাগ্রস্ত করেন,
তা হলে এটি হবে সরকারি কাজে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ এবং তজ্জন্য তিনি উপ-ধারা (২) এ বর্ণিত যেকোনো দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো কাজের জন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে নিম্নবর্ণিত যেকোনো দণ্ড প্রদান করা যাবে, যথা:-
(ক) নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ;
(খ) বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান; এবং
(গ) চাকরি থেকে বরখাস্ত।
(৩) যেক্ষেত্রে কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত কোনো অসদাচরণের জন্য কার্যধারা গ্রহণ করা হয়, সে ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অথবা এতদুদ্দেশ্যে তৎকর্তৃক, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, অভিযোগ গঠন করবেন এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারীকে, অতঃপর অভিযুক্ত ব্যক্তি বলে অভিহিত, কেন এই ধারার অধীন দোষী সাব্যস্তপূর্বক দণ্ড আরোপ করা হবে না- এই মর্মে সাত কার্যদিবসের মধ্যে যথাযথভাবে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করবেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে শুনানি করতে ইচ্ছুক কি না ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাও উক্ত নোটিশে উল্লেখ করবেন।
(৪) অভিযুক্ত কারণ দর্শাইলে তা বিবেচনার পর এবং, ক্ষেত্রমত, তিনি ব্যক্তিগত শুনানিতে উপস্থিত হলে শুনানি গ্রহণের পর, যদি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা অভিযোগ গঠনকারী ব্যক্তির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কার্যধারা গ্রহণ করার মতো পর্যাপ্ত ভিত্তি রয়েছে, অথবা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত কারণ না দর্শাইয়া থাকেন, তা হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা অভিযোগ গঠনকারী ব্যক্তি তদন্তের জন্য তিন দিনের মধ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করবেন।
(৫) তদন্ত কমিটির সদস্যগণকে অভিযুক্ত ব্যক্তি অপেক্ষা কর্মে জ্যেষ্ঠ হতে হবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি নারী হলে তদন্ত কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন নারী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
(৬) তদন্তের আদেশ প্রাপ্তির তারিখ হতে পরবর্তী ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
তবে শর্ত থাকে যে, যুক্তিসংগত কোনো কারণে উক্ত সময়সীমা বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে তা কেবল একবারের জন্য অনধিক সাত কার্যদিবস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যাবে।
(৭) তদন্ত কমিটি উপ-ধারা ৬ এ বর্ণিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে না পারলে নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং উক্ত নতুন তদন্ত কমিটি উপ-ধারা ৬ এ বর্ণিত সময়সীমা অনুযায়ী তদন্ত সম্পন্ন করবে।
(৮) তদন্ত কমিটি যুক্তিসংগত কারণ ব্যতিরেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে তা তদন্ত কমিটির সদস্যদের অদক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এইরূপ অদক্ষতার বিষয়টি, ক্ষেত্রমত, তাহাদের সরকারি কর্মচারী বাতায়ন (GEMS) এর Personnel Management Information System (PMIS) এবং ডোসিয়ারে লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষিত হবে এবং চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাহাদের বিরুদ্ধে দণ্ডমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
(৯) তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা অভিযোগ গঠনকারী ব্যক্তি তা বিবেচনা করবে, অভিযোগ, ও ক্ষেত্রমত, দণ্ডের বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করবে এবং উক্ত সিদ্ধান্ত, তদন্ত প্রতিবেদনের কপিসহ, অভিযুক্তকে যথাযথভাবে পাঠাবে।
(১০) উপ-ধারা (৯) এর অধীন কোনো সরকারি কর্মচারীকে দণ্ড প্রদান করা হলে, তিনি দণ্ড আরোপের আদেশ প্রাপ্তির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে ধারা ৩৪ এর অধীন আপিল করতে পারবেন এবং আপিল কর্তৃপক্ষ উক্ত আদেশ বহাল রাখতে, বাতিল করতে বা পরিবর্তন করতে পারবে।
(১১) রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না, তবে এইরূপ ক্ষেত্রে দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী দণ্ড আরোপের আদেশ প্রাপ্তির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ধারা ৩৬ অনুযায়ী উক্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট আবেদন করতে পারবেন এবং রাষ্ট্রপতি যেরূপ উপযুক্ত মনে করবেন, সেইরূপ আদেশ প্রদান করবেন।
(১২) উপ-ধারা (১০) ও (১১) এর অধীন, যথাক্রমে, আপিল ও রিভিউ এ প্রদত্ত আদেশ চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
** সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি
এমআইএইচ/আরএ