ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, দুই নাইজেরিয়ানসহ গ্রেপ্তার ৩ 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩:২৪, জুলাই ৮, ২০২৫
প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, দুই নাইজেরিয়ানসহ গ্রেপ্তার ৩ 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাভজনক বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুই নাইজেরিয়ানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গ্রেপ্তার দুই নাইজেরিয়ান হলেন—ফ্র্যাঙ্ক কোকো ও এমানুয়েল।

গ্রেপ্তার বাংলাদেশি নারী হলেন মোসা. সুইটি আক্তার। রাজধানীর ভাটারা ও মিরপুরের পল্লবী এলাকায় পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সোমবার (৭ জুলাই) রাতে কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ জাহিদুল করিম।

তিনি জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন বিদেশি নম্বর ব্যবহার করে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র।

একই সঙ্গে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে চক্রের সদস্যরা সুকৌশলে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করছে। তারা তথ্যপ্রযুক্তিতে অত্যন্ত দক্ষ।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, প্রতারণার সময় চক্রের সদস্যরা বিদেশি হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম নম্বর বা ভুয়া অনলাইন ই-কমার্স সাইট ব্যবহার করে। এসব সাইটের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট যুক্ত থাকে।

এভাবে গড়ে ওঠা একটি চক্রকে র‌্যাব-১ অনুসন্ধান চালিয়ে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় শনাক্ত করে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন বিদেশি নম্বরের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যায়, এই চক্রে নাইজেরিয়ান নাগরিকরা জড়িত।

তারা বাংলাদেশি নারীদের ‘মিডিয়া’ হিসেবে ব্যবহার করে। এসব নারী ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতেন এবং আড়াল থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতেন।

‘মিডিয়া’ হিসেবে কাজ করা নারীদের মাধ্যমে প্রতারকরা ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস অর্জনের পরই বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিত।

কর্নেল জাহিদুল করিম জানান, প্রতারকরা ফেসবুকে ধনী বিদেশি পরিচয় দিয়ে বিনিয়োগের সুযোগ, বিমানবন্দরের কার্গোতে ডলারের প্যাকেজ পাঠানো বা কাস্টম ক্লিয়ারেন্সে বিদেশি দামি পণ্য ছাড় করানোর কথা বলে টাকা দাবি করত।

তারা ফটোশপে তৈরি ভুয়া ছাড়পত্র ও সনদপত্র দেখিয়ে প্রথম ধাপে কম টাকা নিত। পরে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স বা নথিপত্রের খরচের অজুহাতে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করত। অধিকাংশ ভুক্তভোগী প্রলুব্ধ হয়ে অর্থ প্রদান করতেন।

এই প্রতারণার কৌশল শনাক্ত করে ৬ জুলাই রাতে এবং ৭ জুলাই দিনে পৃথক অভিযানে র‌্যাব-১ নাইজেরিয়ান নাগরিক ফ্র্যাঙ্ক, এমানুয়েল এবং বাংলাদেশি নারী সুইটি আক্তারকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তার দুই নাইজেরিয়ান প্রায় দুই বছর ধরে এ কাজে জড়িত। সুইটি আক্তার গত তিন মাস ধরে তাদের সঙ্গে কাজ করছেন।

ফ্র্যাঙ্ক দুই বছর আগেও র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

অভিযানে তাদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১৮ লাখ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এখনো বিভিন্ন জায়গা থেকে পূর্বে পাঠানো মেসেজের সূত্র ধরে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হচ্ছে।

তারা আরও কিছু মোবাইল ব্যাংকিং সিম ও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতেন, যেগুলোর খোঁজে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সুইটি দেশের স্থানীয় ‘মিডিয়া’ বা সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি বাংলাদেশি নম্বরে যোগাযোগ করে ভুক্তভোগীদের প্রলুব্ধ করতেন এবং অর্থ হাতিয়ে নিতেন।

এ প্রতারণায় আরও কিছু বাংলাদেশিও জড়িত। ‘মিডিয়া’ হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিরা প্রতারিত অর্থের ১০-১৫ শতাংশ ভাগ পেতেন।

গ্রেপ্তার হওয়া দুই বিদেশি নাগরিকের ভিসার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। একজনের পাসপোর্ট আগেই জব্দ করা হয়েছিল।

তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত দুটি ল্যাপটপ, চারটি আইফোন, তিনটি স্মার্টফোন, তিনটি বাটন ফোন, একটি ট্যাব এবং একটি ওরিকো ব্র্যান্ডের হার্ড ড্রাইভ উদ্ধার করা হয়েছে।

এসসি/আরএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।