ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, আগামী মাসে (মে ২০২৫) ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য পুরস্কার হিসেবে এক লাখ টাকা প্রাইজমানি দেওয়া হবে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠে ডিএনসিসি এবং বনানী স্পোর্টস এরেনা কর্তৃক আয়োজিত ‘ক্রিকেট কার্নিভাল-২০২৫’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, এই মাঠটি (বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠ) একসময় শেখ পরিবারের দখলে ছিল। এটিকে আমরা অবমুক্ত করেছি। আপনারা এখন দেখবেন মাঠের বাইরে (প্রবেশ মুখে) একটি সাইনবোর্ড লাগিয়েছি সেটিতে লেখা আছে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠ। ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশটাই আসলে দখল হয়ে গিয়েছিল। মেটাফোরিক্যালি (রূপকার্থে) এটা অন্য দেশের দখলে ছিল আর প্র্যাক্টিক্যালি (বাস্তবে) এটা তাদের দোসরদের দখলে ছিল। শেখ পরিবার দেশের ন্যাচারাল রিসোর্স দখল করার পাশাপাশি গত সতেরো বছরে পাবলিক স্পেসগুলোও দখল করেছিল। পাবলিক স্পেস যেখানে মানুষ খেলাধুলা করবে, হাঁটবে সেগুলোও তারা নাতিপুতিদের নামে দখল করেছে। সাধারণ মানুষের কোনো প্রবেশ ছিল না।
তিনি আরও বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে ঘোষণা দিয়েছি ডিএনসিসির আওতাধীন মাঠগুলো কোনো ক্লাবের আন্ডারে থাকবে না। ক্লাবের আন্ডারে থাকায় সাধারণ মানুষের এক্সেস (প্রবেশাধিকার) বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পাবলিক স্পেসে মানুষের আসা-যাওয়া, শিশুদের খেলাধুলা এগুলো অধিকার। সাধারণ মানুষের অধিকার বঞ্চিত করে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির জন্য মাঠ বরাদ্দ থাকলে সামাজিক বৈষম্য হয়, অবিচার হয়। তাই এটি আর করতে দেওয়া হবে না।
এ সময় ডিএনসিসি প্রশাসক উল্লেখ করেন, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠসহ ডিএনসিসির অনেকগুলো মাঠে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য কেয়ার কিভিং সার্ভিস ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের বিনোদন ও বিকাশের জন্য এই মাঠে বিভিন্ন ব্যবস্থা আছে। এই মডেল অনুযায়ী অন্যান্য মাঠেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এগুলো দেখভালের জন্য স্থানীয় অধিবাসীদের নিয়ে কমিটি করে দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়েছি দুই মাস হলো। গত দুই মাসে আমরা কয়েকটি মাঠ উদ্ধার করেছি। গত সপ্তাহে মিরপুর প্যারিস রোড মাঠের অবৈধ মেলা আমরা গুঁড়িয়ে দিয়েছি। এর আগে মিরপুর বাউনিয়ায় ১২ বিঘা একটি মাঠ উদ্ধার করেছি। সেখানে বড়দের জন্য একটি অলিম্পিক সাইজের ফুটবল মাঠের পাশাপাশি শিশুদের জন্যও আলাদা খেলার মাঠ থাকবে। যেসব মাঠ বড় সেখানে আমরা মায়েদের ক্লাব করে দেব যেন তাদের শিশুদের খেলা নিশ্চিত করতে পারে। সিনিয়র সিটিজেনদেরও আমরা মাঠের ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করবো। এ ধরনের মডেল তৈরি করতে আমরা কাজ করছি।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসি এলাকায় বর্তমানে ২৫টি মাঠ রয়েছে। তবে ড্যাপের নকশা অনুযায়ী শুধু ডিএনসিসি এলাকায় মাঠ ও পার্কের জন্য সাড়ে ৫০০ একর জায়গা রয়েছে। এগুলো সব দখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা রাজউকের সঙ্গে এগুলো উদ্ধারে কাজ করছি। এই সাড়ে ৫০০ একর জমির খাজনা-খারিজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে ঢাকার পাবলিক স্পেসগুলো উদ্ধার করা হবে।
বক্তব্য শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ শিশু-কিশোরদের উৎসাহিত করতে নিজে ব্যাটিং করে ‘ক্রিকেট কার্নিভাল-২০২৫’ এর উদ্বোধন করেন। এ সময় বিপরীতে বোলিং করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিক। এরপর ডিএনসিসি প্রশাসক অন্য অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যে ছবি আঁকা হয়েছে সেগুলোর প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি (বিসিবি) ফারুক আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক তারকা ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিক, হাবিবুল বাশার সুমন, জাবেদ ওমর বেলিম ও শাহরিয়ার নাফীস প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৫
এমএমআই/আরবি