ঢাকা, শনিবার, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৬ জুলাই ২০২৫, ০০ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

ছিনতাইয়ের শিকার সাংবাদিকের ভাষ্য

‘ওসি বললেন, এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে তো ছিনতাই হবেই’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:২৪, জুলাই ২৫, ২০২৫
‘ওসি বললেন, এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে তো ছিনতাই হবেই’ মোহাম্মদপুর থানা। ফাইল ফটো

ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার অদূরে আহমাদ ওয়াদুদ নামে এক সাংবাদিক ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়েছে।

ভুক্তভোগী ওয়াদুদের ভাষ্যে, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে ছিনতাইয়ের ঘটনা জানালেও সহযোগিতা পাননি। উপরন্তু ওসি তাকে বলেছেন, ‘এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই হবেই। ’ যদিও এ ধরনের বক্তব্য দেননি বলে দাবি করেছেন ওসি।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে আহমাদ ওয়াদুদ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে পুরো ঘটনা তুলে ধরেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থানার দুই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড (প্রত্যাহার) করা হয়েছে। এরই মধ্যে ছিনতাইয়ে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সাংবাদিক ওয়াদুদ তার পোস্টে লিখেছেন, “আজ (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরে আমার সঙ্গে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা আমার একটি মোবাইল ফোন এবং কিছু টাকা-পয়সাসহ মানিব্যাগ নিয়ে যায়। আমাকে চাপাতি দিয়ে কিছু আঘাত করে। সৌভাগ্যবশত আঘাত গুরুতর নয়। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী ছিলেন। একটু দূরে থাকায় তিনি নিরাপদ ছিলেন। ”

“ঘটনাস্থল থেকে মোহাম্মদপুর থানার অবস্থান ৩ মিনিট হাঁটার দূরত্বে। আমি এবং আমার স্ত্রী ঘটনার ৫ মিনিটের মধ্যে থানায় যাই। সোজা ডিউটি অফিসারের রুমে গিয়ে বলি, ৫ মিনিট আগে তিন রাস্তার মোড়ে আমার সঙ্গে একটি ছিনতাই হয়েছে। তারা আমাকে বললেন, ‘একটু অপেক্ষা করেন, দেখছি’। ”

ওয়াদুদ আরও লিখেছেন, “ডিউটি অফিসারের নাম এসআই জসিম। তার পাশে সাদা পোশাকে একজন পুলিশ সদস্য কাগজে অন্য একজনের অভিযোগ লিখছেন। সাদা পোশাকের ওই পুলিশ সদস্য আমার দিকে আঙুল তাক করে উগ্রভাবে বলেন, ‘আপনার শার্টের বোতাম লাগান’। আমি তখনই খেয়াল করলাম, ছিনতাইকারীদের আঘাতের সময় আমার একটি বোতাম খুলে গিয়েছিল। আমি ওই অফিসারের কথায় আহত হলেও কোনো ঝামেলায় না গিয়ে ‘সরি’ বলে বোতামটি লাগিয়ে নিলাম। এরপর তিনি আমাকে আমার সবগুলো বোতাম লাগাতে বললেন। আমার তখন শুধু টাই-বাটন, অর্থাৎ একদম গলার সঙ্গে থাকা বোতামটি খোলা ছিল, যেটা সাধারণত আমরা কখনো লাগাই না। আমি বললাম, ‘প্লিজ আমার অভিযোগটি নিন’। ”

“তারা বললেন, ‘অভিযোগ লেখার লোক নেই’। আমি তাদের বললাম, ‘আমি নিজেই লিখে দিচ্ছি। আমাকে একটি কাগজ দিন’। তারা কয়েক মিনিট পর আমাকে একটি সাদা কাগজ দিলেন। আমি একটি কলম দিতে অনুরোধ করলাম। অফিসার বললেন, ‘আমাদের এক্সট্রা কলম নেই’। অথচ সেখানে অনেকগুলো কলম পড়ে ছিল। ”

ভুক্তভোগী ফেসবুক পোস্টে আরও লিখেছেন, “যাহোক আমার স্ত্রী নিজের ব্যাগ খুঁজে আমাকে একটি কলম দিলেন। আমি সেটা দিয়ে আমার অভিযোগ লিখলাম। ডিউটি অফিসার আমার অভিযোগের কোনো কপি দিলেন না। শুধু আমাকে একটি ফোন নম্বর দিয়ে বললেন, ‘এটা এএসআই আনারুলের নম্বর। উনি এখন নবোদয় হাউজিংয়ে ব্যস্ত আছেন। আপনি ফোনে উনার সঙ্গে কথা বলেন’। ”

“আমি তখন তাকে বিনীতভাবে বললাম, ‘আমার মনে হয় এখন ঘটনাস্থলে গেলে ওদের পাওয়া যাবে। দয়া করে এমন কাউকে বলুন, যিনি আমাদের সঙ্গে এখন সেখানে যেতে পারবেন’। এসআই জসিম আমার কথায় প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘এটা সম্ভব নয়। ওই এলাকায় ইনি ছাড়া আর কেউ যেতে পারবে না। এটা তার এলাকা। আপনি এখান থেকে এখন চলে যান। ওখানে গিয়ে ছিনতাইকারীদের পাবেন না’। ”

ওয়াদুদ তার বর্ণনায় বলেন, “আমি বললাম, ‘আমার ধারণা ওরা ওখানে এখনো আছে’। তবে এসআই জসিম বললেন, ‘আপনার কমন সেন্স নাই? ছিনতাইকারী আপনার-আমার জন্য বসে থাকবে নাকি?’ আমি তবু তাকে অনুরোধ করলাম, ‘কাছেই যেহেতু, যেন একবার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়’। আমি সেখান থেকে বের হয়ে ওসি সাহেবের রুমে যাই। ওসি ইফতেখার হাসান সাদা পোশোকে ছিলেন। আমি তাকে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন, ‘আমি ওসি হয়েও এই কম দামি ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই’!”

সাংবাদিক ওয়াদুদ আরও লিখেছেন, “আমি তার কথায় কোনো উত্তর দিলাম না। আমি তাকে অনুরোধ করলাম, যেন এখনই আমার ছিনতাইয়ের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেন। তিনি পূর্বোক্ত এএসআই আনারুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাকে তার জন্য বাসস্ট্যান্ড মোড়ে অপেক্ষা করতে বলেন। আমি বাসস্ট্যান্ডসহ মোট তিনটি পয়েন্ট ঘুরে এএসআই আনারুলের সঙ্গে দেখা করি। তার সঙ্গে আরও সাত-আটজন পুলিশ সদস্য ছিল। আনারুল সাহেব আমার কথা শুনে বলেন, ‘চলেন আমরা ঘটনাস্থলে যাই’। আমি তার সঙ্গে গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে যাই। এর মধ্যে প্রায় ৪০ মিনিট পার হয়ে গেছে। তবে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আমি ওই ছিনতাইকারীদের সেখানেই বসে থাকতে দেখি। আমি দূর থেকে তাদের দেখিয়ে দিলেও এএসআই আনারুল সেখানে না গিয়ে একটু দূরে অন্য একটি জায়গায় গিয়ে কিছু লোকের সঙ্গে কথোপকথন করেন। ”

“মিনিট দুয়েক পর তিনি ফিরে এলে আমি এএসআই আনারুলকে আবার ওই সন্ত্রাসীদের দেখিয়ে দিই। তবে আনারুল সেখানে না গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এসময় সন্ত্রাসীরাও পুলিশসহ আমাকে দেখে আস্তে আস্তে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে থাকে। আমি অবাক হয়ে এএসআই আনারুলের দিকে তাকিয়ে থাকি! ওরা চলে যাওয়ার পর এএসআই আনারুল আমাকে বলেন, ‘এখন তো ওদের পাওয়া যাবে না। আমরা গভীর রাতে এসে এখানে অভিযান চালাবো। আপনারা এখন বাসায় চলে যান’। ”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভুক্তভোগীর সঙ্গে আমার বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছিল। তার এক বছর আগে একটি আইফোন চুরি হয়েছিল। আর গতকাল তার স্যামসাং একটি ফোন ছিনতাই হয়েছিল। ’ 

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলে, ‘দামি ফোন ব্যবহার করলে ছিনতাই হবে, এ কথা আমি বলতে যাব কোন দুঃখে? তিনি লিখেছেন তার মতো করে। গতকালকে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম জানান, ‘এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যারা ভুক্তভোগীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ এ বিষয়ে কঠোর। এরই মধ্যে মোহাম্মদপুর থানার দুই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে। ’

এমএমআই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।