ঢাকা, বুধবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২২ রবিউস সানি ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বন্দরের ট্যারিফ পুনর্বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চান আমীর হুমায়ুন 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৭, অক্টোবর ১৪, ২০২৫
বন্দরের ট্যারিফ পুনর্বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চান আমীর হুমায়ুন 

চট্টগ্রাম: দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে অতিরিক্ত বড় পরিসরে ট্যারিফ পুনর্নির্ধারণ করলে আমদানি-রপ্তানির খরচ বহুলাংশে বাড়িয়ে দেবে আশঙ্কায় পুনর্বিবেচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছেন পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহ্বায়ক আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী।   

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) চিঠিটি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

 

চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ট্যারিফ কাঠামো বুধবার (১৫ অক্টোবর) থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত ট্যারিফ অনুযায়ী, জাহাজ ও লজিস্টিকস সেবার ওপর গড় হারে প্রায় ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য এক গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১৯৮৬ সালে সর্বশেষ ট্যারিফ কাঠামো প্রণয়নের সময় মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার বিনিময় হার ছিল ৩০ দশমিক ৬১ টাকা। বর্তমানে (২০২৫ সালে) যা ১২২ টাকা ছাড়িয়েছে, অর্থাৎ বন্দরের বিদ্যমান ট্যারিফেই কার্যত চার গুণের বেশি বেড়েছে। উপরক্ত, গত কয়েক দশকে বন্দরের সার্ভিস ফি, হ্যান্ডলিং চার্জ, পাইলটেজ, ডেমারেজ ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে ট্যারিফ ধাপে ধাপে বেড়েছে। ফলে বর্তমানে অতিরিক্ত বড় পরিসরে ট্যারিফ পুনর্নির্ধারণ করলে তা আমদানি-রপ্তানির ব্যয় বহুলাংশে বাড়িয়ে দেবে।

চট্টগ্রাম বন্দর একটি সেবা প্রদানকারী সংস্থা, কোনো বাণিজ্যিক লাভকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান নয় উল্লেখ করে আমীর হুমায়ুন বলেন, বিদ্যমান ট্যারিফ আদায়ের মাধ্যমেই বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করার পরেও বিপুল পরিমাণ অর্থ তাদের সংরক্ষিত তহবিলে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মাশুল বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ।

প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব ট্যাংকার, বাল্ক কার্গো, কনটেইনার ও অন্যান্য জাহাজ আসে, সেগুলো দেশের জ্বালানি, খাদ্যশস্য, শিল্প কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য পরিবহনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কার্যক্রমের পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রিন্সিপালদের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি, যেগুলোর ভিত্তি বিদ্যমান ট্যারিফ কাঠামো। ট্যারিফ বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যে আস্থা কমবে এবং চট্টগ্রাম বন্দর আন্তর্জাতিকভাবে একটি অনিশ্চিত ও ব্যয়বহুল গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত হবে।

ট্যারিফ বৃদ্ধির নেতিবাচক দিক সম্পর্কে তিনি বলেন, রপ্তানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে কনটেইনার হ্যান্ডলিং, স্টোরেজ এবং পরিবহন ব্যয় বাড়বে, যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবে।

আমদানি পণ্যের ব্যয় বাড়বে, বিশেষ করে জ্বালানি, গম, সার ও শিল্প কাঁচামালের ক্ষেত্রে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব দেশের মূল্যস্ফীতির ওপর পড়বে।

আন্তর্জাতিক শিপিং কমিউনিটির মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা কমে যাবে।

চট্টগ্রাম বন্দর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন একটি অবকাঠামোগত সেবা প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে তিনি বলেন, বন্দরের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া উচিত কস্ট বেইজড অ্যানড্ সার্ভিস ওরিয়েন্টেড মডেলে। তাই কেবল রাজস্ব বাড়ানোর জন্য ট্যারিফ বাড়ানো সমর্থনযোগ্য নয়। পাশাপাশি, দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ সূচক (ইজি অব ডুয়িং বিজনেস) এবং আন্তর্জাতিক লজিস্টিকস পারফরম্যান্স ইনডেক্সেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়ে বলেন, প্রস্তাবিত নতুন ট্যারিফ বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত রাখা হোক এবং বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য একটি সময়োপযোগী পর্যালোচনার উদ্যোগ নেওয়া হোক। সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের (স্থানীয় শিপিং এজেন্ট, আমদানি-রপ্তানিকারক, জাহাজ মালিক, ব্যবসায়ী সংগঠন) সঙ্গে পরামর্শক্রমে যৌক্তিক ও বাস্তবভিত্তিক ট্যারিফ কাঠামো নির্ধারণ করা হোক। বন্দরের কাঠামোগত উন্নয়ন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সেবা-ভিত্তিক এবং অলাভজনক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা হোক।

বর্ষীয়ান এ ব্যবসায়ী নেতা চিঠিতে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কেবল একটি বন্দর নয়-এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। এই বন্দর ঘিরেই গড়ে উঠেছে দেশের বৃহৎ রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রম, শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়। তাই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেকোনো নীতিগত পরিবর্তন অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং জাতীয় অর্থনীতির ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে সক্ষম।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ট্রাম্প ট্যারিফ বিষয়ক আলোচনায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও সরকারের কৌশলী উদ্যোগ এবং সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ স্বস্তির দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

তবে যেই ট্যারিফ হ্রাসের জন্য সরকার এত আন্তরিকভাবে পরিশ্রম করেছে, দেশে যদি সেই ট্যারিফ পুনরায় সংযোজন বা আরোপ করা হয়-তা হবে আমাদের রপ্তানি খাতের জন্য আত্মঘাতী। এ ধরনের পদক্ষেপ আমাদের অর্জিত সাফল্যকে ম্লান করে দেবে এবং শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

প্রধান উপদেষ্টার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ দৃষ্টি এবং কার্যকর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ট্যারিফ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি যাতে বাস্তবতাভিত্তিক ও ব্যবসাবান্ধবভাবে পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে আশাবাদ জানান এ ব্যবসায়ী নেতা।  

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।