চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর চট্টগ্রাম বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেছেন, “বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের প্রথম যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনিই প্রথম রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নারীদের জন্য কর্মসংস্থান, শিক্ষা, এবং নেতৃত্বের সুযোগ সৃষ্টি করে নারী জাগরণের ভিত্তি স্থাপন করেন।
শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় আয়োজিত “নারীর মর্যাদা সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন” শীর্ষক বিশাল মহিলা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, “বিএনপি সরকার গঠন করলে প্রতিটি পরিবারকে ‘ফ্যামিলি কার্ড’-এর আওতায় আনা হবে এবং সেই কার্ডের মালিক হবেন পরিবারের প্রধান মহিলা। এটি হবে নারীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সিদ্ধান্তগ্রহণের একটি বাস্তব প্রতীক। একইসাথে নারীদের জন্য সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে তারা স্বাবলম্বী হয়ে পরিবার ও সমাজে নেতৃত্ব দিতে পারেন। ”
তিনি বলেন, “দেশনায়ক তারেক রহমান বিশ্বাস করেন- যে নারীরা সমাজে প্রতিনিধিত্ব করেন, তারাই প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও মানবিক অগ্রগতির চালিকাশক্তি। আগামী বাংলাদেশ হবে এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে নারীরা শুধু অংশগ্রহণকারী নন, বরং নীতি নির্ধারক ও নেতৃত্বদাতা হিসেবেও নিজেদের ভূমিকা রাখবেন।
মীর হেলাল বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাদের একটি মৌলিক শিক্ষা দিয়ে গেছেন- দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের প্রথম ও প্রধান পরিচয় হচ্ছে আমরা বাংলাদেশী। তিনি এই দেশকে এক অসাম্প্রদায়িক, ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে তোলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটিই আজ বিএনপির রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দু।
মীর হেলাল বলেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সবসময় ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করেছে, বিভাজন সৃষ্টি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছে। তারা ধর্মের ব্যবসা করেছে, জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। কিন্তু বিএনপি সেই রাজনীতি করে না। বিএনপি বিশ্বাস করে- বাংলাদেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকই বিএনপির শক্তি, আর বিএনপি তাদের শক্তি। আমাদের ভোটব্যাংক কোনো ধর্ম, বর্ণ, বা সম্প্রদায় নয়; আমাদের ভোটব্যাংক ১৮ কোটি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী।
তিনি আরও বলেন, “বিএনপি যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনসমর্থনের ভিত্তিতে বিজয় অর্জন করে সরকার গঠন করে, তাহলে আমরা প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। বিশেষ করে নারীদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হবে আমাদের সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার।
ব্যারিস্টার মীর হেলাল স্মরণ করিয়ে দেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের দিয়েছেন জাতীয়তাবাদের পরিচয়- যেটি একটি অসাম্প্রদায়িক, সমষ্টিগত জাতি গঠনের দৃষ্টিভঙ্গি। সেই আদর্শের ধারাবাহিকতায় দেশনায়ক তারেক রহমানও আজ বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, তারেক রহমান কিছুদিন আগে বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন- ‘সবার আগে বাংলাদেশ। এই তিনটি শব্দই আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গঠনের মূলমন্ত্র। দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের অধিকার রক্ষায় বিএনপি সবসময় কাজ করে আসছে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার হেলাল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের শক্তিই রাষ্ট্রের শক্তি। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে বিএনপি বিপুল বিজয় অর্জন করবে, এবং দেশনায়ক তারেক রহমান বাংলাদেশের নেতৃত্বে নতুন যুগের সূচনা করবেন।
এতে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন বলেছেন, “নারীদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেমন এই দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে একটি ভিন্ন চিন্তার পথ দেখিয়েছেন, তেমনি আজ তার সুযোগ্য উত্তরসূরি দেশনায়ক তারেক রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন একটি গণতান্ত্রিক ও মানুষের অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনে। আনোয়ারার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজারো মা-বোনের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি প্রমাণ করে- নারীরাও আজ রাজপথের পরিবর্তনের নেতৃত্বে রয়েছে। ”
তিনি বলেন, “৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ সালে সিপাহি জনতার বিপ্লবের পর যখন দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্ব হুমকির মুখে ছিল, তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দায়িত্ব নেন জাতিকে নতুনভাবে গঠনের। তিনি ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠা করেন- যেখানে ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, অর্থনৈতিক শ্রেণিভেদ ভুলে সবাই একটি পরিচয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়- আমরা সবাই বাংলাদেশি। সেই আদর্শেই বিএনপি বিশ্বাস করে: সবার আগে বাংলাদেশ, সবার আগে জনগণ। ”
লায়ন হেলাল উদ্দিন বলেন, “গত ১৭ বছর ধরে দেশে একদলীয় শাসন, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, বিচারহীনতা, দুর্নীতি আর লুটপাটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। বিরোধী মতের হাজারো নেতাকর্মী মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে কারাগারে ছিলেন। যারা কথা বলেছে, আন্দোলন করেছে, তারা নিপীড়নের শিকার হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে আমরা একটি নতুন যাত্রার সূচনা করেছি- ফ্যাসিবাদমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে। ” তিনি বলেন, “আজকে এই সমাবেশে যারা এসেছেন, তারা প্রত্যেকেই সেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সৈনিক। আজ যাদের সন্তানরা রাজপথে লড়েছে, নির্যাতিত হয়েছে- আগামী দিনে সেই সন্তানদের জন্যই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। ” বিএনপির এই শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, “আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় শুধু বিএনপির জন্য নয়—এটি হবে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধারের বিজয়। এজন্য ঘরে ঘরে গিয়ে জনমত গঠন করতে হবে। নারীদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। ” তিনি উল্লেখ করেন, “দেশনায়ক তারেক রহমান ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য ৩১ দফা রূপরেখা দিয়েছেন। যেখানে রয়েছে- দারিদ্র্য বিমোচন, কৃষকদের পুনর্বাসন, বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু, নারীদের সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার। ” লায়ন হেলাল বলেন, “তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। তার শাসনামলেই সমাজের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছিল। কিন্তু তাকেও বিনা বিচারে কারাগারে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকার।
তিনি বলেন, “আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করলে নারীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান হবে অগ্রাধিকার। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। নারীদেরকে শুধু সহযাত্রী নয়, এই পরিবর্তনের নেতৃত্বে থাকতে হবে। ”
তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “যদি সত্যিকার অর্থে আমরা বাংলাদেশকে বিশ্ব উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখতে চাই, পরিবার-পরিজনের জন্য নিরাপদ জীবন চাই, দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রাষ্ট্র চাই- তাহলে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করতেই হবে। এটা শুধু রাজনৈতিক লড়াই নয়- এটা মুক্তির সংগ্রাম। ” এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মাষ্টার রফিক আহমদ, সরোয়ার হোসেন মাসুদ, জাগির আহমদ, আমিনুল ইসলাম, দিল মোহাম্মদ মনজু, এম মনছুর উদ্দিন, বিএনপি নেতা আবদুল মইয়ুম চৌধুরী ছোটন, রফিক ডিলার, কাশেম, মোজাম্মেল হক, জাহাঙ্গীর, আবু সাদেক,জসিম, জামাল আনছারী, মোস্ততাক আহমেদ, ইউচুপ মাষ্টার, আবদুল হক, ইসমাইল তালুকদার, লিয়াকত, আকতারুজ্জান, আবু সালেহ, মহরম আলী, মামুন খান, কনক চৌধুরী, যুবদল নেতা জিয়াউল কাদের জিয়া, ওসমান শিকদার, মাবুদ, শাকিল, কায়েস, নুরুল কবির রানা, সোয়াইব, আরিফ, আজম খান, হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব গাজী ফোরকান, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আতিকুর রহমান, আবু তৈয়ব মাহির, হাসান, শামসুল। আলম, বাবলু হোসেন, সেলিম, ফোরকান, কৃষক দলের আহবায়ক সালাউদ্দিন সুমন, জেলা ছাত্রদল নেতা ইসমাইল বিন মনির, রিপন, সায়েম, শিফাত, উপজেলা ছাত্রদল মোফাচ্ছল হোসেন জুয়েন, হান্নান, সোহেল, রাশেদ, নুর মোহাম্মদ, অনিক, শাহেদ, বোরহান উদ্দিন, শফি উদ্দিন চৌধুরী, ইমরান, মাহিম, তারেক, মিনহাজসহ প্রমুখ। সমাবেশে আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম থেকে হাজার হাজার নারী অংশ নেয়।
এমআর/টিসি