চট্টগ্রাম: বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ইউনিলিভার বাংলাদেশ এ বছরও ব্যবস্থাপনার বাইরে থাকা চসিকের ১০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও রিসাইক্লিং অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউর মেজবান হলে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অংশীদারিত্বমূলক উদ্যোগ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সেবকরা পর্দার আড়ালে কাজ করছেন।
'আমাদের চট্টগ্রাম' অ্যাপস চট্টগ্রামবাসীকে উপহার দেবো। ময়লা, সড়ক সংস্কারসহ ১০টি সেবা এখানে থাকবে। ৫৭টি খাল এবং ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালা পরিষ্কারের জন্য ৪০০ কোটি টাকা চেয়েছি ইক্যুইপমেন্ট কিনতে। এখন বেশিরভাগ ইক্যুইপমেন্ট নষ্ট। বাধ্য হয়ে অনেক টাকায় ভাড়া করতে হচ্ছে ইক্যুইপমেন্ট। পরিবহন শ্রমিক মালিকদের আহ্বান জানিয়েছি, বর্জ্য ফেলার জন্য গাড়িতে বিন রাখতে।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মাথাপিছু ৯ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার হয় বাংলাদেশে। চট্টগ্রামের চ্যালেঞ্জ জলাবদ্ধতা। এর কারণ প্লাস্টিক ও পলিথিন। ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্লাস্টিকের স্তর। এখন সময় প্লাস্টিকের লাগাম টেনে ধরার। চসিক নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে। জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্টে সংকট আছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, চসিকের সেবকরা পরিচ্ছন্ন নগর উপহার দিতে কাজ করছেন। মেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহে শৃঙ্খলা আনার ক্ষেত্রে টোকাই নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হচ্ছে। তারপরও আমরা আশাবাদী।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডিরেক্টর শামিমা আক্তার বলেন, ইউনিলিভারের সঙ্গে ছয় দশকের সম্পর্ক এ নগরের। পরিবেশ না বাঁচলে মানুষ বাঁচবে না। বাংলাদেশ সরকারের ৪০ শতাংশ (৩৯ দশমিক ২৫) শেয়ার আছে ইউনিলিভারে। ১৯০টি দেশে আমরা কাজ করি। চলমান ইনিশিয়েটিভের অংশ চসিক ও ইপসার সঙ্গে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে কাজ করা। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইপসার সঙ্গে আমরা কাজ শুরু করি। চসিক আমাদের গাইড করেছে। একেক শহরের বর্জ্য সংগ্রহ পদ্ধতি একেক রকম। তথ্য থেকে জেনে বুঝে কাজ করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ভাঙারিওয়ালাদের ডাটাবেজ তৈরি করছি। বর্জ্য সংগ্রহকারীদের জীবন বিমার পলিসি শুরু করেছি। এ বছর চট্টগ্রামের ১০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করবো আমরা। আমাদের চেষ্টা করতে হবে আরও পার্টনার নিয়ে আসা, শতভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করতে হবে। ইপসা কাজটা শুরু না করলে আমাদের পক্ষে এতদূর আসা যেত না।
ইপসার পরিচালক (সামাজিক উন্নয়ন) নাসিম বানু বলেন, দেশে প্লাস্টিক ব্যবহার বেড়েছে। ১০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল হয়। জলাবদ্ধতার বড় কারণ প্লাস্টিক। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট কার্যক্রম শুরু করি আমরা। আমাদের লক্ষ্যে একটি মডেল তৈরি করা।
ইপসার সহকারী পরিচালক আবদুস সবুর বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৩ হাজার টন বর্জ্য বের হয়। বোতল বা শক্ত প্লাস্টিকের মূল্য থাকায় অনেকে সংগ্রহ করে। কিন্তু ২০২২ সাল পর্যন্ত একবার ব্যবহৃত পলিথিন তেমন সংগ্রহ করা হতো না। এরপর আমরা এটা রিসাইকেলিংয়ের জন্য সংগ্রহ ও সরবরাহের প্রক্রিয়া শুরু করি। এখন ৩ হাজারের বেশি পলিথিন সংগ্রাহক কাজ করছেন। আমরা তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করেছি। ভাঙারিওয়ালাদের ব্যাংক হিসাব খুলতে উদ্বুদ্ধ করেছি। বিমার ব্যবস্থা করেছি। এ পর্যন্ত ২৪ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে রিসাইক্লিংয়ের জন্য পাঠিয়েছি।
সভাপতির বক্তব্যে ইউনিলিভারের সাপ্লাই চেইন ডিরেক্টর রুহুল কুদ্দুস বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের জন্মস্থান। আমরা মনে করি, আমরা অনেক ক্ষেত্রে অগ্রদূত। যখন চট্টগ্রাম শহরে ইটিপি ছিল না তখন আমরা বসিয়েছিলাম। আমরা বিশ্বাস করেছি, আমাদের দেখে অনেকে ইটিপি বসাবে। আশাকরি প্লাস্টিক সংগ্রহেও অনেকে এগিয়ে আসবে। চট্টগ্রামে আরও বিনিয়োগ নিয়ে আসতে হবে। আমরাও আরও বড় হতে চাই।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে একটি কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে কোম্পানির ৯৬ শতাংশ পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। ইউনিলিভার বাংলাদেশ একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এআর/টিসি