আজ শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ। একইসঙ্গে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আবাহনের মাধ্যমে দেবীর শুভাগমনের আনুষ্ঠানিক প্রতীক্ষাও শুরু হয়েছে।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন মন্দিরে-মণ্ডপে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ বইতে শুরু করেছে।
পঞ্জিকা মতে, এবার দেবী দুর্গার গজে (হাতি) চড়ে আসবেন যা শুভ লক্ষণ আর বিদায় হবে দোলায় (পালকি) যা অশুভ লক্ষণ।
দুর্গাপূজার বাজনা বেজে উঠেছে সারাদেশে। দুর্গাপূজার দিন গণনা এই মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয়।
জেলাজুড়ে এবার ২২২টি পূজামণ্ডপে শুক্রবার মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ।
এ সময় পিতৃতর্পণ ও চণ্ডিপাঠের মাধ্যমে দেবীকে আবাহন করেন সনাতন ধর্মের অনুসারীরা। পুণ্যার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্গাপূজার দিন গণনাও শুরু করেছেন শুভ মহালয়ার মাধ্যমে।
মহালয়া উপলক্ষে সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মন্দিরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মন্দিরগুলোতে চণ্ডিপাঠসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
দশভূজা শক্তিরূপী মা দুর্গা মর্ত্যে অবস্থান করবেন মোট পাঁচদিন। সে লক্ষ্যে জেলাজুড়ে প্রতিটি মণ্ডপেও ভোর থেকে চণ্ডিপাঠ আর অমাবশ্যায় হৃদয়ে নাচন তুলে ঢাকে পড়েছে কাঠি। দেবী দুর্গার আগমনে বিভিন্ন মণ্ডপে ধূপের ধোঁয়ায় ঢাক-ঢোলক, কাঁসর, মন্দিরের চারপাশে পুরোহিতের ভক্তিকণ্ঠে ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরুপেন সংস্থিতা-নমন্তৈস্য নমন্তৈস্য নমোঃ নমোঃ’ মন্ত্র উচ্চারণের ভেতর দিয়ে উদযাপিত হয়েছে মহালয়া।
চণ্ডিপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গার সৃষ্টি রহস্য জানার মধ্য দিয়ে দেবীর আবাহন ‘মহালয়া’ হিসেবে পরিচিত। শাস্ত্রীয় বিধান মতে, মহালয়ার অর্থ হচ্ছে মহান আলোয় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে আবাহন। দুটি পক্ষ রয়েছে, একটি হলো পিতৃপক্ষ, অন্যটি দেবীপক্ষ। অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের শেষ হয়, আর প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয় দেবীপক্ষের।
মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছে সেই দেবীপক্ষ। ধর্মমতে, এই দিনে দেব-দেবীরা দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন।
শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে এখন নানা আয়োজনে ব্যস্ত সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ। দেবীর প্রতিমা নির্মাণ প্রায় শেষ। এখন মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রতিমার সাজসজ্জা ও প্যান্ডেল স্থাপনসহ নানা কাজ।
এখন চলছে মা দুর্গার লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ির জরির কাজ, গণেশের ধুতিতে নকশাদার পাড় বসানো, আর মহিষাসুরের জাঁকালো পোশাক তৈরির কাজ।
কামারপাড়া থেকে বানিয়ে আনা হাতের চক্র, গদা, তীর-ধনুক ও খর্ব-ত্রিশূল দিয়ে সাজানো হচ্ছে দেবীকে। আর ঘষা-মাজায় মিস্ত্রিরা ব্যস্ত মণ্ডপগুলোকে নতুন করে তুলতে। আয়োজকদের ফরমায়েশ ও ডিজাইন অনুযায়ী গড়ে তুলছেন দৃষ্টিনন্দন অস্থায়ী পূজামণ্ডপ গড়ে তুলছেন ডেকোরেটর কর্মীরাও।
পূজা কমিটিগুলো জানায়, মহালয়ার ছয় দিন পর ২৮ সেপ্টেম্বর শ্রী শ্রী দুর্গাষষ্ঠী। এর মাধ্যমেই মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্গাপূজা শুরু হবে। সেদিন দেবী দুর্গার ষষ্ঠাদি কল্পনারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা হবে। সেই সঙ্গে হবে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। দুর্গোৎসবে ২৯ সেপ্টেম্বর হবে মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী, ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন পিপিএম (বার) বলেন, দুর্গাপূজায় পুলিশের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। সার্বক্ষণিক আমাদের একটি কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। কন্ট্রোল রুমের নম্বরগুলো প্রতিটি মন্দিরের কমিটির সদস্যদের কাছে দেওয়া থাকবে, যাতে তারা আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে পারে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় এবার মোট ২২২টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। এই বিশাল আয়োজনকে নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এ ছাড়াও সব প্রতিবন্ধকতা এড়াতে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।
এমআরপি/এএটি