ভোলার চরফ্যাশনের মাদ্রাজ ইউনিয়নের চরআফজাল গ্রামে জমি বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে স্ত্রী জাহানারা বেগম ও ছেলে আবিরকে (৮) হত্যার দায়ে স্বামী মাহাবুব আলম ওরফে মাফু ও দেবরের ইব্রাহিমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের দুজনকে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ মামলায় অপর আসামি মান্নান মাঝির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে আদালত খালাস দেন। আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া আসামি মাহাবুব ও ইব্রাহিম আপন ভাই, তারা একই মামলায় খালাস পাওয়া মান্নান মাঝির ছেলে।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় চরফ্যাশন চৌকি অতিরিক্ত দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইনের আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন।
মামলার রায়ের সময় রাস্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট হযরত আলী হিরণ ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক মাতাব্বর ও অ্যাডভোকেট মাঈনুল ইসলাম নাবিল সরমান উপস্থিত ছিলেন। ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে আদালতে এ রায় দেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ৩ মার্চ হত্যা ঘটনা ঘটে। মামলার ভিকটিম জাহানারা বেগম ছিলেন আসামি মো. মাহাবুব আলম মাফু আলমে স্ত্রী। অপর ভিকটিম মো. আবির ছিলেন আসামি মাহবুবের ছেলে। আসামিদের পরিবারের সঙ্গে তাদের গ্রামের জনৈক মিলন নক্তির জমিজমা নিয়ে পূর্বশত্রুতা ও বিরোধ ছিল। এই বিরোধের সূত্র ধরে মিলন নক্তিকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য আসামি মাহাবুব এবং ইব্রাহীম ভিকটিম জাহানারাকে হত্যা করে এর দায় মিলনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেন। পরে পরিকল্পনামতো তারা ঘটনার দিন রাতে জাহানারাকে ধারালো দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে হত্যা করেন। কিন্তু এ ঘটনা, ওই সময়ে একই বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা আবির (৮) দেখে ফেলে বিধায় আসামিরা আবিরকেও হত্যা করে লাশ বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে দেন। ঘটনা ঘটিয়ে আসামি ইব্রাহীম অপর আসামি মাহাবুবকে তাদের ঘরের সামনের গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধে এবং চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে এবং দাবি করে যে মিলন ভিকটিমদের খুন করেছে। ভিকটিম জাহানারার বাবা মো. সৈয়দ আলী চৌকিদার ঘটনার দিনই বাদী হয়ে চারজন আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে চরফ্যাশন থানা পুলিশ এবং তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনজন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। বাদীপক্ষ উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দরখাস্ত দিলে আদালত ডিবি ভোলাকে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেন। অধিকতর তদন্ত শেষেও তিনজন আসামির বিরুদ্ধেই ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি পুনরায় চার্জশিট দেওয়া হয়। পরে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলায় তিনজন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিদের মধ্যে আসামি মাহবুব আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
এসআরএস