ঢাকা, রবিবার, ২ ভাদ্র ১৪৩২, ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২২ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

নীলফামারীতে একে একে ২৬ সিনেমা হল বন্ধ, চালু মাত্র একটি

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:১০, আগস্ট ১৭, ২০২৫
নীলফামারীতে একে একে ২৬ সিনেমা হল বন্ধ, চালু মাত্র একটি তামান্না সিনেমা হল

নীলফামারী: নীলফামারী জেলায় একে একে বন্ধ হয়ে গেছে ২৬টি সিনেমা হল। বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলোর জায়গায় মার্কেট এবং অন্যান্য স্থাপনা গড়ে উঠেছে।

 

কোনোটিতে জ্বলে না বাতিও। সবেধন নীলমনি একটি সিনেমা হল চালু রয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে।  

বন্ধ হওয়ার কারণ হচ্ছে সিনেমা হলে প্রদর্শিত ছবির দর্শক টানতে ব্যর্থতা, হলে পরিবেশ নেই সিনেমা দেখার, মোবাইল ফোনের ব্যবহার।
 
নীলফামারী জেলা ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। চিত্তবিনোদনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় গড়ে তোলা হয় সিনেমা হল। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত মানুষের একমাত্র বিনোদনের স্থান ছিল সিনেমা হল। এছাড়া গ্রাম এলাকায় পালাগান, জারিগান আয়োজনের মাধ্যমেও নিজেদের বিনোদনের ব্যবস্থা করতেন এলাকাবাসী। কিন্তু এখন সিনেমার সেই জৌঁলুস আর নেই। ১৯৯০ সালের পর থেকেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে সিনেমা হলের সেই সব চিরচেনা দৃশ্য। এখন তা কেবলই ইতিহাস। স্মৃতির অধ্যায় থেকে সেই জৌলুস যেন চিরতরে হারিয়ে গেছে।

এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। মানুষ এখন ঘরে বসে ভারতীয় হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলেগু, ইরানি, টার্কিশ, ইংরেজি, কোরিয়ান সিনেমা দেখে।  

এ কারণে বন্ধ হয়ে গেছে নীলফামারীর ২৬টি সিনেমা হল। জেলার সৈয়দপুরে চালু রয়েছে একমাত্র তামান্না সিনেমা হল।  

তামান্না সিনেমা হলের মালিক মাহাবুব আলম ঝন্টু বলেন, এ সৈয়দপুরে চারটি সিনেমা হলের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে তিনটি। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টার, আধুনিক মার্কেট।  

তিনি বলেন, ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর দিকে ঝুঁকছে মানুষ। তারা আর সিনেমা হলমুখী হচ্ছে না।
জেলার বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলো ভেঙে মার্কেট, গোডাউন গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ান, হল সুপারভাইজার থেকে শুরু করে এ ব্যবসায় জড়িত প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ এখন অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন। এসব সিনেমা হল ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা হারিয়েছেন কর্মসংস্থান।

এদিকে নীলফামারী জেলা শহরের মমতাজ মহল, কিশোরগঞ্জের বাবু টকিজ, জলঢাকার জনতা টকিজ, জনতা সিনেমা হল, ডোমারের কণিকা, ডিমলার বান্ধবী ও সীমা হলে এখন বাতিও জ্বলে না। ডোমারের মায়া সিনেমা হলকে করা হয়েছে মার্কেট আর সৈয়দপুরের লিবার্টি, বিজলী সিনেমা হল ভেঙে গড়ে তোলা হয়েছে অন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।  

জেলা শহরের দিপালী সিনেমা হল ভেঙে করা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টার। অবশিষ্ট হলগুলোরও একই অবস্থা।

জেলা শহরের দিপালী সিনেমা হলের মালিক জিল্লুর রহমান বলেন, সিনেমার গুণগত মান না থাকায় দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এক সময় প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার ব্যবসা হলেও তা নেমে দাঁড়িয়েছিল পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকায়। ক্রমাগত লোকশানের কারণে বন্ধ করতে হয়েছে। সেখানে কমিউনিটি সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।  

তিনি বলেন, বর্তমানে ঘরে বসেই দেশি-বিদেশি সিনেমা উপভোগ করা যায়। বাড়তি টাকা গুণে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাংলা সিনেমা দেখতে যায় না তেমন কেউ। বাংলা সিনেমাকে টিকিয়ে রাখতে হলে ছবির মান বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিনেমা হলগুলো ডিজিটালাইজ ও আধুনিক করা গেলে প্রাণ ফিরে আসবে।

এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।