ঢাকা, শনিবার, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২, ১২ জুলাই ২০২৫, ১৬ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি

উঁচু স্থান-আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪৯, জুলাই ১০, ২০২৫
উঁচু স্থান-আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল

ফেনী: যেখানে মানুষ সেখানেই আবার গরু-ছাগলের আশ্রয়। ফেনীর ফুলগাজীতে বানের পানি বাড়ায় উঁচু স্থান ও আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ।

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থানে ভেঙে প্লাবিত হয়েছে জেলার শতাধিক গ্রাম।

বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর থেকে বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে পানিও। ভাঙনের স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। তীব্র স্রোতে পানি প্রবেশ করছে ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। একাধিক সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। এতে দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন দেড় লক্ষাধিক বেশি মানুষ।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, পরশুরামের ১২টি ও ফুলগাজী উপজেলায় ৯টিসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মোট ২১টি স্থানে ভেঙে গেছে। এরমধ্যে মুহুরী নদীর ১১টি, কহুয়া নদীর ৬টি ও সিলোনিয়া নদীর ৪টি অংশে ভাঙনে ১০০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সময় বাড়ার সঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক অংশে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাদুর্গত ৬ হাজার ৮২৬ জন মানুষ অবস্থান করছেন। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এরই মধ্যে ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবক মাঠে কাজ করছে।

স্কুলশিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার বলেন, বাড়িঘরে পানি উঠেছে তাই একটি ভবনে আশ্রয় নিয়েছি। নিজেদের সঙ্গে এনেছি গবাদিপশু।

ছাগলনাইয়ার মহামায়া ইউনিয়নের উত্তর সতর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, বিগত দুই দশকে উত্তর সতর নদীকূলের সড়কটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এখান দিয়ে মুহুরী নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে আশপাশের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়৷ এবারও উপজেলার মাটিয়াগোধা, দক্ষিণ সতর নদীরকূল, দক্ষিণ সতর, উত্তর পানুয়া, কাশিপুর, নিচিন্তা, লক্ষ্মীপুরসহ ১০টিরও বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।

পাঠাননগর এলাকার বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, পরশুরাম-ফুলগাজীর ভাঙন স্থান দিয়ে আসা পানিতে ছাগলনাইয়া উপজেলা প্লাবিত হচ্ছে। সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে পানির চাপ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে পানি ফেনী সদর উপজেলাতেও প্রবেশ করার শঙ্কা রয়েছে।

ফুলগাজীর ঘনিয়ামোড়া এলাকার বাসিন্দা হাসান ভূঞা বলেন, নদীতে পানি কমলেও ভাঙনের স্থান দিয়ে তীব্র স্রোতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। গলা সমান পানিতে বের হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আরও বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বাড়িতে পানিবন্দি থাকলেও কোনো ধরনের খাবার বা প্রশাসনিক সহায়তা পাইনি।  

ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, জেলায় টানা তিনদিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার (৯ জুলাই) রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও জেলাজুড়ে হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, রাত ১১টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর পানি কমলেও ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি কমার পরেই বাঁধ মেরামতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবল চাকমা বলেন, মাঠপর্যায়ে থেকে দুর্গত মানুষের সহায়তায় আমরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছি। উপজেলায় ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র স্রোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে।


 
এ ব্যাপারে ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। সর্বশেষ তথ্যমতে ফেনীতে তিন উপজেলায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৩৯টি আশ্রয় কেন্দ্র। জেলা প্রশাসনের হিসেব মতে ৪৯টি কেন্দ্রে ৮হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে। মুহুরী নদী পাড়ের বাঁধ ভেঙেছে ২১ স্থানে। ১০০'র বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দেড় লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি।

এসএইচডি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।