ঢাকার সাভারে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাজ্জাদ হোসেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
সাজ্জাদ ছিলেন নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়া মহল্লার আলমগীর হোসেন ও সাহিদা বেগমের বড় ছেলে। এক ভাই, তিন বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। ঢাকার সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারে পড়ালেখা করতেন তিনি। পাশাপাশি সাভারের ডেইরি ফার্ম এলাকার দক্ষিণ কালমায় বাসা ভাড়া নিয়ে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তার দাফন সম্পন্ন হয় সৈয়দপুরের হাতীখানা কবরস্থানে।
সাজ্জাদের বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, আমার কোনো নিজস্ব জমি নেই, সৈয়দপুর চৌমহনী এয়ারপোর্ট এলাকায় ২ হাজার টাকা ভাড়ার বাসায় থাকি। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি, এখনো কিছু দিতে পারিনি। ছোট মেয়ে লক্ষণপুর স্কুল ও কলেজে দশম শ্রেণিতে পড়ে।
তিনি বলেন, সাজ্জাদের স্বপ্ন ছিলো একটি মসজিদ, মাদরাসা ও ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করার। আমার সন্তান বেঁচে থাকতে সেই স্বপ্ন নিয়েই পথ চলেছে। এখন আমি চাই, তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক। আমরা বাবা-মা হিসেবে সেটিই দেখতে চাই।
তিনি হত্যাকারীদের বিচার চান। একইসঙ্গে বেঁচে থাকার জন্য সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। শহীদ ছেলের জন্য সকলের কাছে দোয়াও চেয়েছেন আলমগীর হোসেন।
সাজ্জাদের মা সাহিদা বেগম বলেন, আমার বুকের ধনকে হারিয়েছি। সে ছিলো আমার একমাত্র অবলম্বন। সে স্বপ্ন দেখতো আমাদের একটি নিজস্ব ঘর হবে, থাকবে একটি মাদরাসা ও মসজিদ। এখন আমরা একেবারে অসহায়। কীভাবে সংসার চলবে, মেয়েদের পাওনা পরিশোধ করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আর্থিক সহায়তার বিষয়ে সাজ্জাদের পরিবার জানিয়েছে, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে তারা শুরুতে ৫ লাখ টাকা পেয়েছেন, যার মধ্যে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে সাজ্জাদের স্ত্রীকে মোহরানার জন্য। পরে আরও ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়, যার মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ পাওয়া গেছে পরিবারের পক্ষ থেকে এবং আড়াই লাখ সাজ্জাদের স্ত্রীর নামে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায় থেকে ১০ হাজার টাকা পেয়েছেন তারা। বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকেও ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সৈয়দপুর পৌরসভার প্রশাসক ও ইউএনও নূর-ই-আলম সিদ্দিকী সুব্যবস্থা হিসেবে আলমগীর হোসেনকে ওয়াক্তিয়া মসজিদের ইমাম হিসেবে চাকরি দিয়েছেন। ঈদুল আজহায় জামায়াতে ইসলামী একটি কোরবানির ছাগলও দিয়েছে তাদের পরিবারকে।
তবে এক পর্যায়ে শহীদ সাজ্জাদের মরদেহ আদালতের নির্দেশে উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও, পরিবার সেই উদ্যোগে বাধা দেয়। ফলে কবর থেকে মরদেহ তোলা হয়নি।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্যোগে ৩ জুলাই ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র তৃতীয় দিন শুরু হয় সাজ্জাদ হোসেনের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে। সৈয়দপুর উপজেলার হাতীখানা কবরস্থানে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে দোয়া পাঠ করান সাজ্জাদের বাবা আলমগীর হোসেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আবু সায়েদ লিওনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। কবর জিয়ারত শেষে নেতারা শহীদ সাজ্জাদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ও তাদের খোঁজ-খবর নেন।
এমজে