ঢাকা, রবিবার, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

মুক্তমত

ডাকসু নির্বাচন: বিএনপির জন্য সতর্ক সংকেত নাকি পুনর্জাগরণের সুযোগ?

ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩২, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫
ডাকসু নির্বাচন: বিএনপির জন্য সতর্ক সংকেত নাকি পুনর্জাগরণের সুযোগ?

ডাকসুর সাম্প্রতিক নির্বাচন কেবল একটি ক্যাম্পাসভিত্তিক আয়োজন নয়; বরং এটি বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিফলন। ছাত্রসমাজের নির্বাচনে যে বৈষম্য, অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্ব প্রকাশ পেয়েছে, তা জাতীয় রাজনীতির সংকট, গণতান্ত্রিক অবক্ষয় এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের গভীর অসুস্থতার প্রতিচ্ছবি।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির জন্য নির্বাচন-পরবর্তী বাস্তবতা একদিকে যেমন হতাশার কারণ, অন্যদিকে তেমনি ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে পুনর্গঠন করার একটি সম্ভাবনাময় সুযোগ।

শক্তি:
• দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ঐতিহ্য ও গণতন্ত্রের জন্য ত্যাগের উত্তরাধিকার।
• দমন-পীড়ন ও অবরোধ সত্ত্বেও ত্যাগী কর্মীবাহিনী সক্রিয়ভাবে দলকে টিকিয়ে রেখেছে।
• জনগণের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, যা বিএনপিকে একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিস্থাপন করার সম্ভাবনা জাগায়।

দুর্বলতা:
• সাংগঠনিক দুর্বলতা সুস্পষ্ট, বিশেষ করে ছাত্রদল নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত শক্তি প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে।
• তরুণদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থতা; সুস্পষ্ট ভিশন, কর্মপরিকল্পনা ও সময়োপযোগী বার্তার অভাব।
• নেতৃত্ব নির্বাচনে স্বচ্ছতার ঘাটতি, অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও গোষ্ঠীভিত্তিক রাজনীতি।
• মিডিয়া উইং দুর্বল, আধুনিক গণমাধ্যম কৌশল প্রয়োগে পিছিয়ে থাকা।

সুযোগ:
• তরুণ প্রজন্ম বিকল্প নেতৃত্বের সন্ধান করছে—বিএনপির জন্য নতুন করে আস্থা অর্জনের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
• ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সরাসরি তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ।
• জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থান উপস্থাপনের সম্ভাবনা।
• জনগণের জীবনের বাস্তব সমস্যার সমাধানকেন্দ্রিক নীতি প্রণয়ন ও উপস্থাপনা করে বিএনপি একটি গ্রহণযোগ্য শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

হুমকি:
• ক্ষমতাসীনদের প্রভাব, প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা।
• আন্দোলনভিত্তিক রাজনীতির বাইরে বিকল্প কর্মপরিকল্পনা দিতে ব্যর্থ হলে জনগণের আস্থা হারানোর আশঙ্কা।
• অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, আর্থিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্ব নির্বাচনে অস্বচ্ছতা।
• আন্তর্জাতিক মহলে দুর্বল উপস্থিতি দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

সংগঠন পুনর্গঠন ও বিশেষত মিডিয়া উইং সংস্কারে করণীয়
১. কেন্দ্রীয় মিডিয়া উইং পুনর্গঠন:
• একটি স্বাধীন ও পেশাদার মিডিয়া টিম গঠন করতে হবে, যেখানে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, গবেষক, সাংবাদিক, গ্রাফিক্স ডিজাইনার ও ডিজিটাল বিশেষজ্ঞ থাকবে।
• মিডিয়া উইং শুধু প্রচারণা নয়, বরং তথ্যভিত্তিক গবেষণা, নীতি-সংক্রান্ত বিশ্লেষণ এবং জনগণের জীবনের সমস্যাকে সামনে এনে কনটেন্ট তৈরি করবে।

২. আধুনিক ডিজিটাল কৌশল গ্রহণ:
• ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স, টিকটকসহ জনপ্রিয় সব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় ও সংগঠিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
• নিয়মিত লাইভ টকশো, ডকুমেন্টারি ভিডিও, অ্যানিমেটেড গ্রাফিক্স ও শর্ট কনটেন্ট প্রকাশ করতে হবে।
• ভুয়া প্রচারণা প্রতিহত করার জন্য একটি কার্যকর ফ্যাক্ট-চেকিং সেল গঠন অপরিহার্য।

৩. স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সক্রিয় উপস্থিতি:
• বিদেশি সংবাদমাধ্যম ও থিঙ্ক-ট্যাংকের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির অবস্থান শক্তিশালী করা।
• জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনে নিয়মিত অপ-এড, গবেষণাভিত্তিক নিবন্ধ এবং পরিসংখ্যানভিত্তিক তথ্য প্রচার করতে হবে।

৪. প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন:
• মিডিয়া উইংয়ের সদস্যদের সাংবাদিকতা, তথ্য বিশ্লেষণ, প্রোপাগান্ডা মোকাবিলা ও ডিজিটাল ক্যাম্পেইন কৌশলে প্রশিক্ষণ প্রদান।
• তরুণ, উদ্যমী ও প্রযুক্তি-সচেতন নেতাদের মিডিয়া উইংয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া।

৫. জনগণকেন্দ্রিক কনটেন্ট প্রোডাকশন:
• কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবেশ ও প্রযুক্তি খাতে বিএনপির সুস্পষ্ট পরিকল্পনা সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে।
• তরুণদের ভাষা ও মনস্তত্ত্ব বিবেচনা করে রাজনৈতিক বার্তা প্রদান করতে হবে।

এনডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।