ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

‘একজনও যেন পুনর্বাসন ছাড়া না থাকেন’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৫১, মে ৪, ২০১৯
‘একজনও যেন পুনর্বাসন ছাড়া না থাকেন’ সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে

ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় ফণী’র ছোবলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হলো, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত একটি লোকও যেন পুনর্বাসন ছাড়া না থাকেন। 
 

দুর্বল হয়ে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টির কবলে উপকূলের বেশকিছু ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসেবে দুপুর পর্যন্ত চারজন নিহত ও আহত হয়েছেন ৬৩ জন।


 
ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক বিষয় নিয়ে শনিবার (০৪ মে) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, চারজনের মধ্যে দুইজন ঘর ধসে এবং দু’জন গাছ চাপা পড়ে মারা যান।
 
নিহতদের আত্মার প্রতি শোক জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রথম থেকেই আমাদের যে প্রস্তুতি ছিল, ১৬ লাখ লোককে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম যে একটি লোকও মারা যাবে না, কিন্তু যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি, তারা ঘরে ছিল।
 
‘আমাদের পরবর্তীতে লক্ষ্য থাকবে উপকূলীয় অঞ্চলে একটি লোকও যেন নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রের বাইরে না যায়। আমরা ৪ হাজার ৭১টি কেন্দ্র প্রস্তুত করেছিলাম। ’
 
এনামুর রহমান বলেন, আমরা যে শঙ্কায় ছিলাম সে শঙ্কা কাটিয়ে বাংলাদেশ আজকে ভালো অবস্থানে আছে। আমরা শুক্রবার রাত থেকে যে খবর পেয়েছি কোথাও সে রকম উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
 
‘এখন ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে সে অনুযায়ী প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে। ’
 
এনামুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সরকার, আওয়ামী লীগ সরকার, শেখ হাসিনার সরকার এখন অত্যন্ত সামর্থ্যবান সরকার, অত্যন্ত ধনি সরকার। আমাদের অর্থের কোনো কমতি নেই। যেকোনো প্রয়োজন, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য আমরাই যথেষ্ট।
 
তিনি বলেন, নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আহতদের জন্য মেডিকেল টিম আছে, প্রয়োজন মতো তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। প্রত্যেক জেলায় সিভিল সার্জন এবং জেলা প্রশাসক তা মনিটর করছেন।
 
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ পাওয়া যাবে, সে অনুযায়ী আমাদের প্রত্যেক মন্ত্রণালয় প্রস্তুত আছে, যথেষ্ট ফান্ড আছে। তাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেবেন। ঘরবাড়ির যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যেখানে যে পরিমাণ টিন দরকার আমরা সহায়তা করবো।
 
‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে- একটা লোকও যেন পুনর্বাসন ছাড়া না থাকেন। ’
 
বিদেশি সাহায্য প্রয়োজন হবে কিনা- প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের যে রিজার্ভ ও সামর্থ্য আছে, সেই সামর্থ্য দিয়ে… এই ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলার জন্য কারো কাছে হাত পাততে হবে না। প্রধানমন্ত্রী এখন হাত গুটিয়ে নেওয়ার পক্ষে, হাত পাতার পক্ষে নয়।
 
দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল জানান, ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৪১৭ জন মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিযে আসা হয়েছিল।
 
জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য দিয়ে সচিব বলেন, আল্লাহর অশেষ কৃপায় খুব একটা ক্ষতি হয়নি, ফসলেরও খুব ক্ষতি হয়নি। কোনো গবাদি পশুর ক্ষতি হয়নি।
 
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমাদের খাদ্য গুদামগুলোতে খাদ্য মজুদ আছে, খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই। মাঠ পর্যায়ে এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর সময় এসেছে।  
 
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে প্রয়োজন ফণী’র আঘাতে যে ক্ষতি হয়েছে সেগুলো নিরূপণ করা। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ভূমিকা রাখবে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তা মেরামত করবে, সেতু বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম আছে।
 
প্রধানমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন এবং মিডিয়ার যে ইতিবাচক ভূমিকা ছিল জনসচেতনতার জন্য সেটির তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে তিনি আন্তরিক ধন্যবান জানিয়েছেন, জানান মুখ্য সচিব।
 
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংষ্কার) মো. শামসুল আরেফিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব এখন নিষ্ক্রিয় হওয়ার পথে। ঘরবাড়ি, ফসল ও গবাদি পশুর যে ক্ষতি হতে পারে, এগুলোর অ্যাসেসমেন্ট সংশ্লিষ্ট বিভাগ সঠিকভাবে করে। এর পরিসংখ্যানের মধ্যে যেন ঘাটতি না থাকে। সবাই যেন তথ্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়।
 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, তথ্য সচিব আবদুল মালেক ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৯
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।