ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

দৈনিক ১৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন পরিবহন শ্রমিকরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩২, মে ৪, ২০১৯
 দৈনিক ১৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন পরিবহন শ্রমিকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: আইএলও কনভেনশনে দৈনিক ৮ কর্মঘণ্টার কথা নির্ধারিত থাকলেও বাংলাদেশে তা মানা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস)। 

সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতের অধিকাংশ শ্রমিকই ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। সবচেয়ে বেশি সময় দৈনিক ১৫ ঘণ্টা কাজ করেন পরিবহন শ্রমিক, নিরাপত্তা কর্মীরা ও রি রোলিং সেক্টরে।

এরপরই রয়েছেন হোটেল/রেস্তোরাঁ শ্রমিকেরা। তারা দৈনিক ১৩-১৪ ঘণ্টা কাজ করেন।

মহান মে দিবস উপলক্ষে নিরাপত্তাকর্মী, পরিবহন খাত, হোটেল-রেস্তোরাঁ, রি-রোলিং মিল ও হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার- এই ৫টি প্রচলিত বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের ওপর বিলস এই প্রতিবেদনে তৈরি করেছে।  

শনিবার (০৪ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে আইএলও কনভেনশন-১ এর শতবর্ষ পূর্তি এবং বাংলাদেশে কর্মঘণ্টার বর্তমান পরিস্থিতি শীর্ষক সেমিনারে এ প্রতিবেদন তথ্য তুলে ধরা হয়।

বিলস’র তথ্য বিভাগের উপ-পরিচালক ইউসুফ আল মামুন বাংলাদেশে কর্মঘণ্টার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

পরিবহন খাতের শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা বিষয়ে বিলস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, দূরপাল্লার পরিবহনে সকল শ্রমিকই দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। এরমধ্যে এ খাতের শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেকই দৈনিক ১৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। ৪০ শতাংশ শ্রমিক দৈনিক ১৩-১৪ ঘণ্টা কাজ করেন, ২০ শতাংশ পরিবহন শ্রমিক কোনো কর্মবিরতি ছাড়াই কাজ করেন।  

‘৯০ শতাংশ শ্রমিকের সাপ্তাহিক ছুটি নেই, ৯৮ শতাংশ শ্রমিক সরকারি ছুটির দিনে কাজ করেন। ৮৪ শতাংশ শ্রমিক মে দিবসের দিনেও কাজ করেন। ’

শ্রমিকদের নির্ধারিত মজুরির পরিবর্তে ট্রিপ সংখ্যার ভিত্তিতে বেতন দেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দূরপাল্লার পরিবহনের ক্ষেত্রে একটানা ৫ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালানো এবং বিকল্প চালক রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও তার প্রতিফলন নেই।  

নিরাপত্তা কর্মীদের শ্রমঘণ্টা নিয়ে এতে বলা হয়, ৮০ শতাংশ নিরাপত্তা কর্মী দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন।  ২৪ শতাংশ কর্মী দৈনিক ১৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন, ৪৮ শতাংশ ১১-১২ ঘণ্টা কাজ করেন।

‘৫০ শতাংশ নিরাপত্তাকর্মী নিয়মিত কর্মবিরতি ছাড়াই কাজ করেন। ৬৬ শতাংশ নিরাপত্তা কর্মীর সাপ্তাহিক ছুটি নেই, ৮৮ শতাংশ কর্মী মে দিবসে এবং ৮৬ শতাংশ কর্মী অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও কাজ করেন। ’

হোটেল-রেস্তোরাঁ শ্রমিকদের কর্মঘণ্টার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় সব শ্রমিক (৯৮ শতাংশ) দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। ৪০ শতাংশ শ্রমিক ১১-১২ ঘণ্টা, ১৪ শতাংশ শ্রমিক দৈনিক ১৩-১৪ ঘণ্টা, ৪২ শতাংশ শ্রমিক দৈনিক ৯-১০ ঘণ্টা কাজ করেন।  

‘২৬ শতাংশ শ্রমিক কর্মবিরতি ছাড়া কাজ করেন। ৮৬ শতাংশ শ্রমিকের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই এবং ৮২ শতাংশ শ্রমিক সরকারি ছুটি দিন এমনকি মে দিবসেও কাজ করেন। ’

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, রি রোলিং সেক্টরের ৯২ শতাংশ শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। ১৬ শতাংশ শ্রমিক দৈনিক ১৫ ঘণ্টা বা তার বেশি সময়, ৩৪ শতাংশ শ্রমিক ১৩-১৪ ঘণ্টা, ২৬ শতাংশ শ্রমিক দৈনিক ১১-১২ ঘণ্টা কাজ করেন।  

বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যাথলজি ল্যাবে কর্মরতদের কর্মঘণ্টা বিষয়ে বলা হয়েছে, এ সেক্টরে ৪২ শতাংশের বেশি শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। এর মধ্যে ২৮ শতাংশ শ্রমিক ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করেন। ৫০ শতাংশ বেশি শ্রমিককে সরকারি ছুটির দিনে কাজ করতে হয়। সাপ্তাহিক কোনো ছুটি নেই প্রায় ২২ শতাংশ শ্রমিকের।

অনুষ্ঠানে বিলস-এর মহাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ আইএলও-এর সদস্য হলেও এত বছরেও আইএলও কনভেনশন বাস্তবায়ন করছে না। শ্রম আইন থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নাই।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শিবনাথ রায় শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনের সবগুলো ধারা পরিপূর্ণ করতে না পারার কথা উল্লেখ করেন।  

সভাপতিত্ব করেন বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান শুক্কুর মাহমুদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৯
এমইউএম/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।