অনেকটা আক্ষেপের সুরে এ কথাগুলো বলছিলেন খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন।
ভাঙন কবলিত এলাকার বর্ণনা দিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গত ২৪ এপ্রিল দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১৪/১ পোল্ডারে গোলখালী গ্রামে কপোতাক্ষ নদীর মোহনায় ওয়াঁপদা বেড়িবাঁধে নদীভাঙন শুরু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিন যতই যাচ্ছে কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানির চাপে কয়রার ঘাটাখালি বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে চলতি বোরো মৌসুমের পাকা ধান, মাছের ঘের, বসতবাড়ির ক্ষতি হচ্ছে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙনরোধে কাজ করে কোনো রকম পানি আটকানোর চেষ্টা করা হলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। শুধু ঘাটখালী নয় অব্যাহত ভাঙনের কারণে কয়রা সদর ইউনিয়নের গোবরা, হরিণখোলা ও গোবরা পূর্বচক গ্রামের বাসিন্দারা রয়েছেন আতঙ্কে।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, ভাঙনে প্রায় ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে ১৩-১৪/২নং পোল্ডারের গোবরা, ঘাটাখালী ও হরিণখোলার বেড়িবাঁধ। রোববার (২১ এপ্রিল) রাতের জোয়ারে ঘাটাখালী মসজিদ সংলগ্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে হঠাৎ লবণপানিতে পুরো ঘাটাখালি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
তারা আরও জানান, বাঁধ ভাঙতে ভাঙতে কিছু জায়গায় মাত্র এক-দেড় ফুট চওড়া রয়েছে। জোয়ারে নদের পানি কানায় কানায় ভরে বাঁধ উপচে পড়ে। চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না। একটু ঝড় বৃষ্টি হলে ভয়ে ঘরের জিনিসপত্র ও খাদ্যসামগ্রী পাশের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে আসেন।
ঘাটাখালী এলাকার প্রবীণ মজিবুর শেখ বলেন, নদী ও বাঁধ ভাঙন কয়রাবাসীর নতুন দুঃখ নয়। প্রতি বর্ষা মৌসুমে আগ্রাসী রূপে আবিভূত হয় শাকবাড়িয়া নদী, কপোতাক্ষ নদ ও কয়রা নদী। খরশ্রোত নদীগুলো মুহূর্তেই গ্রাস করে ফেলে সবকিছু। বাঁধ ভেঙে বাড়িঘর আর বসতভিটা পানিতে তলিয়ে যায়।
এদিকে খুলনার কয়রার মতো বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় নতুন করে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বটিয়াঘাটা উপজেলার ৪ নং সুরখালী ইউনিয়নের বারোআড়িয়া গ্রামের নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওয়াপদা রাস্তা ও ভাঙন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বারোআড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
এলাকাবাসী জানান, ভাঙনের ফলে ইতিমধ্যে ওয়াপদার বাঁধ ও পিচের রাস্তার ৯৫ ভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে যে কোনো মুহূর্তে অবশিষ্ট রাস্তার সামান্য অংশটুকুও ভেঙে যাবে। নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে বারোআড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবনসহ একাধিক স্থাপনা, প্লাবিত হয়ে গৃহহীন হতে পারে বারোআড়িয়া, সুন্দরমহলসহ একাধিক গ্রামের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান এলাকার লোকজন।
খুলনা-৬ আসনের (পাইকগাছা-কয়রা উপজেলা নিয়ে গঠিত) সংসদ্য সদস্য আকতারুজ্জামান বাবু বাংলানিউজকে বলেন, আমি তো চার মাস হলো নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচিত হওয়ার আগে দীর্ঘদিন ধরে বেড়িবাঁধ খারাপ ছিল। এখন বর্তমানে ৫৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের খুব খারাপ অবস্থা। যেকোন সময় বড় ধরনের বিপর্যয় আসতে পারে। এ ব্যাপারে আমি কয়রায় পাউবোর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী, সাতক্ষীরা নির্বাহী প্রকৌশলী ও এলজিডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। যেসব জায়গাগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ সেসব এলাকা চিহ্নিত করে নিরাপদ রাখার জন্য আপাতত আমি একটি বরাদ্দ করিয়েছি। তার টেন্ডার চলছে। চার কোটি টাকা বরাদ্দ করিয়েছি এবং ২ কোটি টাকা পাইপ লাইনে আছে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা চলছে, তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার আমি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সঙ্গে কথা বলেছি। শুক্রবার মন্ত্রীর সঙ্গে আমি এ নিয়ে বসবো। কিভাবে আগামী বছর টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা যায়। সেই পরিকল্পনা করব। আমি বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তাকে ভাঙনের বিষয়ে অবহিত করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
এমআরএম/এসএইচ