শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সারাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে এই জবানবন্দি দেয় পপি। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম আদালতে তোলেন তাকে।
আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পপি জানায়, সে নুসরাত হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। নুসরাতের বান্ধবী নিশাতকে কেউ মারছে বলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে যায় সে। তারপর অন্য সহযোগীরা মিলে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পপির জবানবন্দির ব্যাপারে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পিবিআই’র চট্টগ্রাম বিভাগের স্পেশাল পুলিশ সুপার মো. ইকবাল। তিনি বলেন, কয়েক ঘণ্টাব্যাপী স্বীকারোক্তিমূলক জবাবনন্দিতে পপি এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিয়েছে। তার এ জবানবন্দিতে নতুন কিছু নামও উঠে এসেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা উল্লেখ করা যাচ্ছে না।
গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারীরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে তারা চাপ দেয়। ২৭ মার্চ সিরাজের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা হয়েছিল।
দগ্ধ নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে মারা যায় নুসরাত।
মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলে যায়, সে যখন মাদ্রাসার কেন্দ্রে যায় তখন তার সহপাঠী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করেছে বলে ডেকে নিয়ে যায় এক বোরকাপরিহিত ছাত্রী। ওই ছাত্রীর নাম শম্পা বলেও জানিয়ে যায় নুসরাত।
পরে অন্য আসামিদের ধরতে শুরু করার পাশাপাশি ১০ এপ্রিল সোনাগাজী থেকে গ্রেফতার করা হয় পপিকে। এরপর ১১ এপ্রিল তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে পপি আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়।
অন্যদিকে এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার ঘনিষ্ঠ নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও দুইজনের নামোল্লেখ করে। তারা জানায়, জাবেদ ও পপি (শম্পা) সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেয়। জাবেদ নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় আর পপি ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এসময় তাদের সঙ্গে আরও তিনজন ছিলো।
শ্লীলতাহানির মামলায় আগে থেকেই কারাবন্দি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। হত্যা মামলা হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এজহারভুক্ত ৮ জনসহ মোট ১৭ জন গ্রেফতার হয়েছে। এর মধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে পপিসহ পাঁচজন। ১৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড নেওয়া হয়। সর্বশেষ এ ঘটনায় সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকেও আটক করা হয়েছে।
শ্লীলতাহানির অভিযোগ করতে থানায় যাওয়ার পর নুসরাতের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ায় ১৫ এপ্রিল সোনাগাজী থানার ওই সময়ের (নুসরাত হত্যার পর প্রত্যাহার) ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করা হয়েছে। এ মামলাও তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৯
এসএইচডি/ওএইচ/এইচএ/