পহেলা বৈশাখে সারাদেশের অন্যসব স্থানের মতো রংপুরের বদরগঞ্জও সাজবে বর্ণিল সাজে। আবহমান কাল ধরে এই ১লা বৈশাখকে বুকে ধারণ করে লালন করে আসছে বাঙালি।
সরেজমিনে রোববার (৮এপ্রিল) দুপুরে পৌরশহরের জামুবাড়ি ফায়ার সার্ভিস মহল্লায় গিয়ে দেখা যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাক ঢোল মেরামতের কারিগরেরা। একদমই দম ফেলার ফুরসত নেই কারোর। এই তুমুল ঘর্মাক্ত ব্যস্ততার মধ্যেই কথা হয় বাদ্যযন্ত্র প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার দুই ভাই রতন দাস (৫৬) ও সুরেশ দাসের (৪৬) সঙ্গে।
তাদের আদি নিবাস টাঙ্গাইল জেলায়। জন্মের পর থেকেই বাবা রাজেন্দ্র দাস ও দাদুকে দেখেছেন দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরি করতে। তাদের কাজে সহয়োগিতা করতেন তাদের মা আমাপতি দাস(৯১)। ওই সময় দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা এত বেশি ছিল যে, দম নেয়ার সময় ছিল না তাদের। সময়ের সাথে সাথে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের সাথে পাল্লা দিতে না পেরে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়। তাই স্বাধীনতার পর বাধ্য হয়ে বাবা রাজেন্দ্র দাস টাঙ্গাইল জেলা থেকে রংপুরের বদরগঞ্জে চলে আসেন। শুরু করেন দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামতের কাজ।
পিতা রাজেন্দ্র দাস মারা যাওয়ার পর দুই ভাই রতন দাস ও সুরেশ দাস একসঙ্গে বাবার ব্যবসার হাল ধরেন। কিন্তু এ ব্যবসার যা আয়, তা দিয়ে দুই পরিবারের ভরণ-পোষণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অগত্যা সুরেশ দাস গাইবান্ধা জেলার লক্ষ্মীপুরে বসতি গেড়ে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
রতন দাস জানান, পহেলা বৈশাখে বেড়ে যায় দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা। এর কারণ দেশের প্রায় প্রতিটি জায়গায় পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
এসব অনুষ্ঠানে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা অনেক বেশি। কার্তিক মাসে হিন্দু সম্প্রদায়ের যেসব লোক গ্রামে গ্রামে কীর্তন করে বেড়ায় এরাই মূলতঃ দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের মূল ক্রেতা। তাছাড়াও বাসাবাড়ি,বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের লোকেরা কিছু কিছু করে ক্রয় করেন। এসব দেশীয় বাদ্যযন্ত্র বিক্রি হয় ২শত টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। সাধারণ ঢুলিদের কাছে তিনি বেশ কম দামেই নিজেদের হাতে তৈরি বাদ্যযন্ত্র বিক্রি করে থাকেন।
বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিমলেন্দু সরকার জানান, পহেলা বৈশাখে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। দেশীয় বাদ্যযন্ত্রগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হলে এর আধুনিকায়ন যেমন জরুরি, তেমন জরুরি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাও। তা না হলে বাংলার ঐতিহ্য ঢাক-ঢোল,তবলা একতারা,দোতারা একদিন হারিয়ে যাবে। হয়ে যাবে অতীত।
বদরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ওমর ফারুক বলেন, পহেলা বৈশাখেই হরেক রকমের দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের দেখা মেলে। এসব দেশীয় বাদ্যযন্ত্র ও ঢাক-ঢোল যেন হারিয়ে না যায় সেদিকে আমাদের সবার মনোযোগী হওয়া উচিত। যারা দেশীয় ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোল-বাদ্যকে টিকিয়ে রাখতে চায়, তাদের দিকে সহযোগিতার হাতটুকু বাড়িয়ে একটুখানি পাশে দাঁড়ানো দরকার। তা না হলে হবে না ঐতিহ্যের লালন ও বিকাশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৮
জেএম