ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ জুলাই ২০২৫, ২৬ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

পাইলট তৌকিরের মৃত্যুতে রাজশাহীতে শোকের ছায়া

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:৩৪, জুলাই ২১, ২০২৫
পাইলট তৌকিরের মৃত্যুতে রাজশাহীতে শোকের ছায়া

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলাম সাগরের মৃত্যুর খবরে রাজশাহীতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।  

নিহত পাইলটের উপশহরের ভাড়া বাসায় স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, কেউ নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ‘আশ্রয়’ ভবনের সামনে।

তৌকিরের পরিবার রাজশাহী শহরের উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের ২২৩ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকেন। তার বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন এবং ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন শোকসন্তপ্ত অবস্থায় রয়েছেন।  

প্রতিবেশীদের মতে, তৌকির ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র ও মেধাবী তরুণ। এই পরিবারটি রাজশাহীতে প্রায় ২৫ বছর ধরে বসবাস করছে।

তৌকিরের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নে। ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন বিবাহিত এবং রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন।

এক প্রতিবেশী বলেন, ওকে ছোটবেলা থেকে দেখেছি। এমন একটি তরতাজা প্রাণ এভাবে ঝরে যাবে—ভাবতেই পারছি না। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

সোমবার (২১ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত ‘আশ্রয়’ ভবনের সামনে দেখা যায় নিহত পাইলটের মামা রফিকুল ইসলামকে। তিনি জানান, বিকেল ৫টার দিকে র‍্যাবের একটি গাড়িতে করে তৌকিরের বাবা-মা, বোন সৃষ্টি ও তার স্বামী তুহিন ইসলাম এবং আরও এক মামা মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

তৌকিরের একক প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে অংশ নেওয়ার খবরে পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু দুপুরের পর বিধ্বস্ত হওয়ার সংবাদে সবকিছু বদলে যায়। শুরুতে পরিবারকে জানানো হয়েছিল, সাগর ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। তাই স্বজনরা ঢাকা যেতে চাওয়ায় বিমানবাহিনী হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করে। তবে তারা রওনা হওয়ার আগ পর্যন্ত সাগরের মৃত্যুর খবর জানতেন না।

নিহত তৌকির ইসলাম সাগরের স্ত্রী ঢাকায় সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন এবং তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষক। বছর খানেক আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তৌকিরের মামা রফিকুল বলেন, এ রকম ভালো ছেলে আমি আর দেখিনি। এমন ভদ্র, পরিশ্রমী, মেধাবী ছেলেকে এভাবে হারাতে হবে, ভাবতেই পারিনি।

তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম পেশায় আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরেই পরিবার নিয়ে রাজশাহীতে বসবাস করছেন। তৌকির রাজশাহীর নিউ গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন এবং ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন।

তার সাবেক প্রশিক্ষক মোস্তাক আহমেদ বলেন, তৌকির খুবই শান্ত স্বভাবের, ভদ্র ও মেধাবী ছাত্র ছিল। ওর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

গত বছর তৌকির রাজশাহীর সপুরায় নিজস্ব জমিতে তিনতলা বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন, কিন্তু তার শেষ দেখা হয়নি সে বাড়ির।

ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাঙ্গণে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় এ পর্যন্ত ২০ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।