পুরাতন জরাজীর্ণ-গ্লানিকে পেছনে ফেলে বছর ঘুরে আবারও বৈশাখ এলো দ্বারে। নতুন বছর, নতুন ভোর, নতুন আশা- সব নতুনের আহ্বানে এলো ১৪৩২; বাংলা নববর্ষ।
ঢাকার মতো সারা দেশে উৎসব-উদ্দীপনায় বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে। জেলায় জেলায় বিভিন্ন প্রাঙ্গণে বসেছে মেলা। নাগরদোলা, বায়স্কোপ, পুতুল নাচের ব্যবস্থাও করা হয়েছে কোনো কোনো মেলায়। কোথাও আবার শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কণসহ নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। নতুন বছরকে ঘিরে দেশজুড়ে উচ্ছ্বাসের জোয়ার বইছে।
বাংলানিউজের স্টাফ ও ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্টদের পাঠানো খবরে সেসব তথ্য তুলে ধরা হলো -
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বৈশাখী শোভাযাত্রা করা হয়েছে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া এলাকা থেকে শোভাযাত্রা বের হয়।
নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে রং-বেরঙের প্ল্যাকার্ড, বাঘ, প্যাঁচা, ফল, রাজা, রানীসহ নানান রকমের মুখোশ ও রঙিন কাগজের নকশা আঁকা নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন বিভিন্ন স্কুল কলেজের ও চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
এসময় নববর্ষ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমাদের ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতি। আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে চেয়েছি। বাংলাদেশ যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লীলাভূমি সেটা আমরা দেখাতে চেয়েছি। আজ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। আজ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই আমরা এক কাতারে। আমরা সকলকে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এ দেশকে গড়ে তুলব এবং বিকশিত করবো।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করবে। কোথাও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে বলে আমি মনে করি না। আমরা আশাবাদী খুব সুন্দর ভাবে বাংলার হাজার বছরের এই ঐতিহ্য বাংলা নববর্ষ উদ্যাপিত হবে।
এসময় শোভাযাত্রায় নারায়ণগঞ্জের সকল রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতারা ও সাংস্কৃতিক-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা: যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দঘন পরিবেশে খুলনায় বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদ্যাপিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, লোকজ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সকালে রেলওয়ে স্টেশন প্রাঙ্গণ থেকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ হাদিস পার্কে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে খুলনা শহীদ হাদিস পার্কে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য ও সর্বজনীন উৎসব। বাঙালির লোকসংস্কৃতির সঙ্গে বাংলা নববর্ষ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এবছর খুলনাবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও আনন্দঘন পরিবেশে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. হুসাইন শওকত, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি) দেবপ্রসাদ পাল, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম, পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
নববর্ষের কর্মসূচি অনুযায়ী জেলা কারাগার, হাসপাতাল ও সরকারি শিশু পরিবার, এতিমখানাসমূহে ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবার পরিবেশন এবং শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া কারাগারে কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রদর্শনী, কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নাটক প্রদর্শন করা হয়। উপজেলাসমূহ অনুরূপ কর্মসূচি উদ্যাপন করে।
রাজশাহী: ফ্যাসিবাদ নির্মূলের দৃঢ় প্রত্যয়ে বর্ণিল আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাজশাহীতে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদ্যাপন করা হচ্ছে। আজ সকাল থেকে প্রাণের উচ্ছ্বাসে বর্ষবরণের অনন্য এই রঙিন আনন্দ উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছেন নবীন-প্রবীণ সবাই।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৭টায় আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। মহানগরীর সিঅ্যান্ডবির মোড় থেকে বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। এটি বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শিশু একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। এখানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে মিলিত হন সবাই।
বাঙালি ঐতিহ্যের বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রায় রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, পুলিশ সুপার (এসপি) ফারজানা ইসলামসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সকাল ৯টায় রাজশাহী কলেজ থেকে বের করা হয় আরও একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এতে অংশ নেন কলেজটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রোভার স্কাউটসহ নানান শ্রেণি পেশার মানুষ।
বর্ষবরণ উপলক্ষে সকাল ১০টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদ থেকে বের করা হয় এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় আনন্দ শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি রাবি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে আবারও চারুকলায় গিয়ে শেষ হয়। এখানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানস্থলে মিলিত হন সবাই।
রাজশাহী শিশু একাডেমিতে বর্ষবরণের উৎসবে শিশুদের জন্য ছিল চিত্রাঙ্কন, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এসওএস শিশুপল্লীতে সোমবার সকাল থেকেই পরিবেশন করা হচ্ছে উন্নত মানের খাবার।
দিনটি উপলক্ষে রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর ও রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান আজ সকাল থেকে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রবেশমূল্য ছাড়া দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।
বরিশাল: ঘড়ির কাটা ঠিক সাতটায় উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর আয়োজনে ব্রজমোহন স্কুল প্রাঙ্গণে প্রভাতি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বরিশালে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশন শহিদদের স্মৃতির প্রতি নীরবতা পালনের পর ‘এসো হে বৈশাখ’ সূচনা সঙ্গীত গেয়ে অনুষ্ঠানের শুরু করে উদীচীর শিল্পীরা। মঞ্চের ব্যানারে ছিল ইসরায়েলের মানবতাবিরোধী চিত্র।
একই মঞ্চে চারুকলার শিক্ষার্থীরা রাখি বন্ধন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা জানানোর পর তাদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে আর ৯টায় বৈশাখী শোভাযাত্রা বের করে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সার্কিট হাউস থেকে। শোভাযাত্রা শেষে সার্কিট হাউজের বৈশাখী মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন চেতনাকে ধারণ করে সকল জাতিগোষ্ঠী, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করে।
এবারে উদীচীর তিন দিনের বৈশাখী মেলা হচ্ছে না। তবে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৭ দিনের মেলা হচ্ছে নগরীর বেলস পার্কে। হাতি, ঘোড়াসহ নানা রং বেরঙের ব্যানার, প্লাকার্ড নিয়ে বাংলা নববর্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা করেছে জেলা প্রশাসন। বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনকে ঘিরে বরিশাল জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টায় আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। বাংলার নানা ঐতিহ্য গ্রামীণ পালকি, ঢেঁকি, ধানের মাঠ, জেলের জাল থেকে শুরু করে গ্রামীণ সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলা হয় শোভাযাত্রায়। সাজানো হয় হাতি ঘোড়াও।
শোভাযাত্রায় বক্তারা বলেন, বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির ঐতিহ্য। এটি সবার প্রাণের উৎসব। সকলে মিলে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে চট্টগ্রামে বাংলা নববর্ষ বরণের শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) নগরের চবি চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে ৩০-৪০ জন নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে সকাল সাড়ে ১০টায় বর্ষবরণ র্যালি বের করা হয়।
চট্টেশ্বরী মোড় হয়ে আলমাস মোড়, কাজীর দেউড়ি মোড়, এস এস খালেদ রোড, প্রেস ক্লাব ঘুরে সার্সন রোড হয়ে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয় এই র্যালি। ঢোলক বাদ্য, বিভিন্ন প্রাণীর মুখোশ এবং ঘোড়া ও মাছের প্রতিকৃতি শোভা পায় র্যালিতে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সকাল ৮টায় জাতীয় সংগীত ও ‘এসো হে বৈশাখ’ গান পরিবেশনের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হয়। পরে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে ওয়াসা মোড় ঘুরে পুনরায় শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। ময়ূর, মোরগ, ঘোড়া, পাখিসহ নানান প্রতিকৃতি আর মুখোশ নিয়ে সেই শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া মানুষের সংখ্যাও ছিল কম।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, চট্টগ্রাম এর আয়োজনে সকালে আনন্দ শোভাযাত্রায় ছিল শিশুসহ ৪০-৫০ জনের উপস্থিতি। শিশুদের হাতে শোভা পায় বিভিন্ন প্রতিকৃতি।
ফেনী: ফেনীতে বর্ষবরণে চলছে বর্ণিল আয়োজন। শহরের পিটিআই মাঠে উদ্বোধন হয়েছে ৭ দিনের মেলা ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকালে হয়েছে বর্ণিল শোভাযাত্রা। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। প্রায় এক হাজারের বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেন এই শোভাযাত্রায়।
ফেনী সরকারি কলেজ মাঠে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় পিটিআই মাঠের মেলায় রয়েছে লোক নাট্যসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শোভাযাত্রা ও মেলায় আগত দর্শনার্থীরা বলছেন এবারের বর্ষবরণে উৎসবের আমেজ অন্য যেকোনো বারের চেয়ে বেশি।
জেলা প্রশাসন বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৎপর রয়েছে সংশ্লিষ্টরা। আনন্দ শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন, পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. রোবায়েত বিন করিমসহ জেলার উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। বর্ষবরণ উপলক্ষে পিটিআই মাঠের মেলায় অংশ গ্রহণ করেছে অর্ধশতাধিক স্টল। এসব স্টলে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন লোকজ পণ্য। রয়েছে শিশুদের জন্য নাগোরদোলাসহ বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থা।
গোপালগঞ্জ: নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে গোপালগঞ্জে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ পালন করা হচ্ছে। গোপালগঞ্জ পৌরপার্কে সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৭টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে নববর্ষ পালনের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে সেখানে ‘এসো হে বৈশাখ’ গান গেয়ে পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিশু একাডেমির আয়োজনে করা নানা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সকাল ৯টায় বের করা হয় র্যালি। র্যালিটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়।
বান্দরবান: আনন্দ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বান্দরবানে শুরু হলো পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে বান্দরবানে বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শোভাযাত্রায় মারমা, ম্রো, চাকমা, খুমি ত্রিপুরা, পাঙখুয়া, বম, জনগোষ্ঠীসহ ১১টি জাতিগোষ্ঠী অংশ নিয়েছে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৮টায় বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে ঐতিহ্যবাহী বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক মিলনায়তনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, তিন পার্বত্য জেলায় পল্লীগুলোতে গতকাল থেকে নববর্ষকে ঘিরে নিজেদের মতো করে পাহাড়জুড়ে বিজু, বৈসুক ও সাংগ্রাই, উৎসবের আমেজে ব্যস্ত পাহাড়িরা।
যশোর: বাংলাদেশে বর্ষবরণ শেভাযাত্রার উদ্যোক্তা মাহবুব জামাল শামীমকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টায় কালেক্টরেট চত্বর থেকে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা শুরুর আগে তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।
বর্ষবরণ শেভাযাত্রার সূচনা হয়েছিল যশোরের শিল্পী মাহবুব জামাল শামিম ও তার প্রতিষ্ঠান চারুপীঠ আর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ১৯৮৫ সালে।
এদিকে সাংস্কৃতিক রাজধানী যশোরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুরু হয়েছে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব। ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষ যশোরবাসী সকাল সাড়ে ৯টায় কালেক্টরেট চত্বর থেকে বর্ষবরণ শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই যশোর শহরের নানা প্রান্ত থেকে নানা সংগঠনের ব্যানারে নানা বয়সী মানুষের ঢল নামে যশোরের ঐতিহাসিক কালেক্টরেট চত্বরে।
সবাই সেজেছিলেন বর্ণিল সাজে। ঢোলের তালে তালে নেচে-গেয়ে মাতিয়ে তোলা হয় পুরো চত্বর। আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে অনেকে এসেছিলেন জেলে, কামার, কুমোর, কৃষক, বাউল, রাজা, রানির বেশে।
সকাল সাড়ে ৯টায় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলা ১৪৩২ সন বরণ। এরপর শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’। এরপরই অনুষ্ঠান মঞ্চে ওঠেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার রওনক জাহান, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন এবং জেলা পরিষদের সিইও আসাদুজ্জায়ান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরেই হয় বর্ষবরণ শোভাযাত্রা। নেচে-গেয়ে, হই-হুল্লোড় করে মানুষ র্যালিতে অংশ নেন। ছিল পরিবেশ ও প্রতিবেশের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে গাছ, পাহাড়, নদী, পাখ-পাখালি। আরও ছিল পালকি, ঘোরার গাড়ি ইত্যাদি।
বর্ণাঢ্য র্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে যশোর ইনস্টিটিউট চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে প্রথম প্রভাতে নবকিশলয় স্কুল, পৌরপার্ক, চারুপীঠ চত্বরসহ শহরের নানা প্রান্তে শুরু হয় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান।
কবিতা, নাচ, গান, জারি, সারি, ভাটিয়ালিতে নতুন বছরকে স্বাগত জানান যশোরবাসী। বছরের প্রথম প্রভাতে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে আয়োজন করা হয় মিষ্টি মুখের। জেলা প্রশাসকের বাসভবনে আয়োজন করা হয় পান্তা উৎসবের। পান্তা উৎসব ও র্যালির আয়োজন করে জেলা বিএনপি।
সিলেট: সিলেটজুড়ে চলছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বরণের উচ্ছ্বাস। নগরের প্রতিটি প্রান্তে বইছে বৈশাখী উৎসবের হাওয়া। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, খোলা ময়দান—সবখানেই যেন ছড়িয়ে আছে আবহমান বাংলার ছোঁয়া।
নর-নারী, শিশু-কিশোররা বৈশাখী সাজে সেজে উৎসবে মেতে উঠেছেন। ঈদের আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই বৈশাখী উৎসব জানিয়ে দিল—খুশির দিন এখনো শেষ হয়নি। নববর্ষ উপলক্ষে সিলেট জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, বিএনপি, সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়।
সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নগরের ক্বিনব্রিজ সংলগ্ন আলী আমজদের ঘড়িঘর এলাকা থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। এতে উঠে আসে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি। র্যালিটি নগরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে চৌহাট্টা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। একইভাবে নগর ভবন থেকে র্যালি বের করে সিটি করপোরেশন।
রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘আনন্দলোক’ আয়োজন করে শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ প্রাঙ্গণে বর্ষবরণ উৎসব। সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হওয়া এই আয়োজনে উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সমাজসেবী চন্দন সিংহ মজুমদার। সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তিতে অংশ নেয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শ্রুতি, সিলেট’ আয়োজন করে সারাদিনব্যাপী বর্ষবরণ উৎসব। সুরমা নদীর পাড়ে সারদা হল প্রাঙ্গণে আয়োজনে ছিল সম্মাননা প্রদান, পরিবেশনা, আবৃত্তি, নৃত্য, সঙ্গীত এবং বৈশাখী মেলা। চৌহাট্টার ভোলানন্দ নৈশ উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আয়োজন করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এতে ছিল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
উৎসবে অংশ নেয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, গীতবিতান বাংলাদেশ, অনির্বাণ শিল্পী সংগঠন, বর্ণ, ছন্দ নৃত্যালয়, নগরনাট, সংগীত নিকেতনসহ নানা সংগঠন। সিলেট মহিলা বিএনপির উদ্যোগে সকাল ১১টায় পান্তা-ইলিশ উৎসব এবং দুপুর ২টায় রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে জেলা ও মহানগর বিএনপির শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেটের উদ্যোগে সুরমা নদীর তীরে হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রংপুর: ধর্ম-বর্ণের বিভেদ ভুলে সারাদেশের মতো রংপুরেও বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পয়লা বৈশাখ। সোমবার (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বরণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও নানা আয়োজনের মাধ্যমে রংপুরবাসী মেতে ওঠে উৎসবে।
সকাল ১০টায় রংপুর জিলা স্কুলের বটতলা থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গ্রামীণ ঐতিহ্যকে তুলে ধরে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে অংশ নেয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ। শোভাযাত্রাটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রংপুর টাউন হল মাঠে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, মুখোশ, পাপেট, মাছ, পাখিসহ নানা বিশালাকৃতির শিল্পকর্ম ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। অংশগ্রহণকারীরা লাল-হলুদ-সবুজ রঙের পোশাকে সেজে, মাথায় ফুলের মালা আর হাতে পতাকা নিয়ে মাতেন উৎসবে।
এর আগে জিলা স্কুলের বৈশাখী বটতলায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী ও পুলিশ সুপার আবু সাইম। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. রবিউল ফয়সাল। অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন শিশু-কিশোরসহ বেতার ও টেলিভিশনের শিল্পীরা। পরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
অপরদিকে, সাংস্কৃতিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে রংপুর টাউন হল চত্বর থেকে আরও একটি শোভাযাত্রা বের হয়, যাতে গ্রামীণ ঐতিহ্য ও গান-বাজনায় উঠে আসে বাঙালিয়ানার রূপ। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর সরকারি কলেজসহ নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়। সকাল থেকেই পাবলিক মাঠে সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। এছাড়া জেলা প্রশাসন, বিসিক ও নাসিবের যৌথ উদ্যোগে রংপুর টাউন হল চত্বরে পাঁচ দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কারাগার ও হাসপাতালে পরিবেশন করা হয় উন্নতমানের খাবার।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৫
এমআরপি/এমআরএম/এমএস/এসএইচডি/এসএএইচ/এনইউ/এমজে