গাজার বাসিন্দারা মানবিক সহায়তার জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তাদের আশঙ্কা—এটি যেন কেবল ক্ষণিকের স্বস্তিতে সীমিত না থাকে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক চাপ ও দুর্ভিক্ষের হুঁশিয়ারির পর তারা খাদ্য ও ওষুধবাহী ত্রা প্রবেশের জন্য মানবিক করিডোর খুলছে।
গত কয়েক মাস ধরে গাজার ২০ লাখের বেশি মানুষ চরম খাদ্য সংকট, বিশুদ্ধ পানির অভাব ও চিকিৎসা সামগ্রীর ঘাটতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ ও সীমান্ত বন্ধ থাকায় জনজীবন একপ্রকার অচল হয়ে পড়েছে।
গাজা শহরের ৩৯ বছর বয়সী চার সন্তানের মা রাশা আল-শেইখ খলিল বলেন, এতে সামান্য আশার আলো দেখছি, কিন্তু আশঙ্কাও আছে, পরে আবার না খেয়ে মরতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এক গাড়িবহর ত্রাণ যথেষ্ট নয়। আমরা চাই বাস্তব সমাধান, দুঃস্বপ্নের অবসান, যুদ্ধের শেষ।
কয়েক সপ্তাহের আন্তর্জাতিক চাপ ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটের পর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা গাজা উপত্যকায় সম্প্রতি বিমান থেকে মানবিক সহায়তা দিয়েছে।
রোববার এক বিবৃতিতে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ বলেছে, বিমান থেকে ফেলা ব্যাগে সাতটি প্যাকেজ ছিল, যার মধ্যে ছিল ময়দা, চিনি ও টিনজাত খাবার।
জর্দান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের সমর্থনে তারা গাজায় ত্রাণ ফেলে দেবে। তবে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, এসব পদক্ষেপ গাজাবাসীর ক্ষুধা প্রশমনে সামান্যই অবদান রাখবে।
ছয় সন্তানের মা নাভিন সালেহ বলেন, এটা শুধু খাবারের পরিমাণ নয়, গুণগত দিকও গুরুত্বপূর্ণ। গত চার মাসে একটি ফল বা সবজিও মুখে তুলিনি। নেই মাংস, ডিম বা মুরগি। শুধু মেয়াদোত্তীর্ণ টিনজাত খাবার আর আটা খেয়ে আছি।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, অপুষ্টিতে এ পর্যন্ত ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার বেশিরভাগই গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে।
গাজার চিকিৎসকদের মতে, অপুষ্টি বিশেষ করে শিশু ও বিশেষ ডায়েট প্রয়োজন এমন মানুষদের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। গ্লুটেন সহ্য করতে না পারা রোগীরা সবচেয়ে বিপদে।
গাজার কেন্দ্রে বসবাসরত রামি তাহা বলেন, আমার স্ত্রী ও এক সন্তান সিলিয়াক রোগে আক্রান্ত। আগে তাদের জন্য গ্লুটেনমুক্ত খাবার কিনতাম। এখন কিছুই নেই। কয়েকদিন পরপর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্যালাইন দিতে হয়।
রোববার গাজার রাফা সীমান্তে ত্রাণবাহী ট্রাকের সারি দেখা গেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা অবাধ ও নির্বিচারে ত্রাণ সরবরাহের আহ্বান জানিয়ে আসছে।
তবে অনেক গাজাবাসীর আশঙ্কা, আন্তর্জাতিক মনোযোগ কিছু প্রতীকী ত্রাণ সরবরাহের পর ফিকে হয়ে যাবে।
উত্তর গাজার দোকানদার আহমাদ তাহা বলেন, এটা স্থায়ী সমাধান নয়। যেন ক্যানসার রোগীকে ব্যথানাশক দিয়ে ক্ষণিক স্বস্তি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু চিকিৎসা করা হচ্ছে না।
যখন একটি বিস্তৃত যুদ্ধবিরতির আলোচনা মুখ থুবড়ে পড়েছে, তখন গাজার মানুষ আটকে পড়েছে আশা ও হতাশার দোলাচলে—ত্রাণ পেয়ে কিছুটা কৃতজ্ঞ, কিন্তু প্রকৃত শান্তির জন্য অধীর প্রতীক্ষায়।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েল গাজায় আগ্রাসন শুরু করে। হামাস-শাসিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৯ হাজার ছাড়িয়েছে।
আরএইচ