ন্যাটো যে আর্কটিক ও আটলান্টিক মহাসাগরে রাশিয়াকে ঠেকাতে পরিকল্পিতভাবে অবস্থান নিচ্ছে, তা স্পষ্টভাবে বুঝে গেছে মস্কো। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় তার দ্বিতীয় নৌবহর চালু করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে নিজেদের সামরিক অবস্থান ও শক্তি জানান দেওয়া রাশিয়ার জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশটি বরাবরই সরাসরি সংঘাতের বদলে কৌশলগত পয়েন্টগুলো মজবুত করতে চায়। সেই ধারাবাহিকতায়, ব্যারেন্টস সাগরের ঠাণ্ডা, জনমানবহীন উপকূলে প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার বসিয়েছে মস্কো। সদ্যসমাপ্ত ‘জুলাই স্টর্ম’ নৌ-মহড়ার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নাটকীয় হলেও তা এক নতুন বার্তা বহন করছে— ন্যাটো জোটের সামনে এটি রাশিয়ার সামরিক সক্রিয়তার আরেকটি ঘোষণা।
এই আলোচিত মহড়ার পরিচালক অ্যাডমিরাল মোইসিয়েভ দীর্ঘদিন ধরে আর্কটিক অঞ্চল নিয়ে রাশিয়া ও পশ্চিমা শিবিরকে সতর্ক করে আসছেন। তার মতে, রাশিয়ার আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাঞ্চল ঘিরে বিশ্বের ক্ষমতাধর শক্তিগুলোর ঠোকাঠুকি বাড়ছে। তাই রাশিয়া তার স্থলবাহিনী, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং সমুদ্র প্রতিরক্ষা— সবকিছুকেই সর্বোচ্চ প্রস্তুতির অবস্থায় রাখতে চায়।
ব্যারেন্টস সাগরের গুরুত্ব কী?
আর্কটিক মহাসাগরের এক প্রান্তে অবস্থিত ব্যারেন্টস সাগরের উপকূলে রয়েছে নরওয়ে ও রাশিয়ার উত্তরাঞ্চল। সাগরটি আর্কটিকের কৌশলগত প্রবেশদ্বার হিসেবেই বিবেচিত। ফলে যুদ্ধজাহাজ এবং কৌশলগত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনের টহলের জন্য এটি রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রাখা মানেই, উত্তর মহাসাগরীয় নিরাপত্তার লাগাম নিজের হাতে রাখা।
কী আছে ব্যাস্টিয়ন সিস্টেমে, যা নিয়ে এত আলোচনা?
উপকূলীয় প্রতিরক্ষার জন্য রাশিয়ার দুটি প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে— ‘ব্যাস্টিয়ন’ ও ‘সেনাইট’। এগুলো একেকটি যেন মোটা ঢালের মতো, যেগুলো ভেদ করে রাশিয়ার উপকূলে পৌঁছানো শত্রুপক্ষের জন্য কঠিনতর।
ব্যাস্টিয়ন সিস্টেম সজ্জিত P-800 Oniks সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে, যা ৬০০ কিলোমিটারেরও বেশি উপকূলরেখা রক্ষা করতে সক্ষম। এটি ৩০০ কিলোমিটার দূরে থাকা শত্রুর যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করতে সক্ষম। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতি সেকেন্ডে ছুটে চলে প্রায় ৭৫০ মিটার গতিতে। বিশেষভাবে, এগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০–১৫ মিটার ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে রাডারকে ফাঁকি দিতে পারে— যা পশ্চিমা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক দুঃস্বপ্ন।
ব্যাস্টিয়নকে আরও ভয়ংকর করে তোলে এর ডুয়াল-ফেজ অনুসন্ধান ব্যবস্থা— একদিকে সক্রিয় রাডার, অন্যদিকে ইনফ্রারেড ইমেজিং। এমনকি ভারী জ্যামিং সিস্টেমের মধ্যেও এটি শত্রু জাহাজের নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু খুঁজে নিতে সক্ষম। প্রতিটি মোবাইল লঞ্চারে থাকে দুটি করে ওনিকস ক্ষেপণাস্ত্র, যা ২০০ থেকে ২৫০ কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহন করতে পারে, মিশনের ধরণ অনুযায়ী।
ন্যাটোর প্রতি রাশিয়ার কড়া বার্তা
এমন একটি নির্ভুল ও ভয়ংকর সিস্টেম যখন উত্তর মেরুর মতো স্পর্শকাতর অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়, তখন সেটি শুধুই প্রতিরক্ষা নয়— এটি এক কৌশলগত বার্তা। বার্তাটি স্পষ্ট: ন্যাটো যা-ই করুক, যেন বুঝেশুনে করে। উত্তর মেরু থেকে রাশিয়াকে পিছু হটানো সহজ নয়।
এমএইচডি/এমজে